নাদিম মাহমুদ: পিএসসির প্রশ্নফাঁস নিয়ে চ্যানেল২৪ সেই নিউজ এবং ‘সার্চলাইট’ দেখলাম। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই, তবে তুলকালাম করা যে নিউজকে অনুসন্ধানী রিপোর্ট বলা হচ্ছে; সেই বিষয়ে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। এ ধরনের রিপোর্টকে আদৌ ‘সাংবাদিকতার আইনে স্বীকৃত’ হবে কি না, তা অ্যাকাডেমিশিয়ানরা বলতে পারবেন; তবে সাংবাদিকতার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, এটি কখনোই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে না। বরং যে প্রক্রিয়ায় প্রশ্নফাঁসকারী এবং তার সুবিধাভোগীদের ইন্টারভিউ প্রকাশ করা হয়েছে, সেটিকে জার্নালিজমের ভাষায় ‘অনৈতিক’।
এই রিপোর্টের তথ্যের প্রধান উৎস হিসেবে ‘সাজেদুল ইসলাম সাজুর’ যে বক্তব্য এসেছে, তা যেন সে ‘সেল্ফ কনফেশন’ দিচ্ছে। যে দেশে ছোটখাট কোনো অপরাধ করলেই যেখানে স্বীকার করেন না, সেখানে তিনি আদৌ অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দিয়েছে নাকি ‘সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার’ জালে আটকার পর বক্তব্য এসেছে, তা ভিডিও দেখলেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। সাক্ষাৎকারের পরই একই পোশাকে গোয়েন্দারা যখন তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, তখন বুঝতে আর বাকি নেই, যে সে গোয়েন্দাদের হাতে আটকের পর কিংবা গোয়েন্দাদের সামনে দেওয়া বক্তব্যই পরবর্তী সময়ে ‘সাংবাদিকদের ফিডিং করানো’ হয়েছে; যা সাংবাদিকদের অনুসন্ধান নয় বরং ‘গোয়েন্দাদের কাজই প্রতীয়মান।’
আবার মাহমুদুল এবং রুবেল (যদিও নাম দুটি লিখতে চাচ্ছিলাম না, কিন্তু এখানে লিখতে হচ্ছে) যখন বক্তব্য দিচ্ছে, তার আগে তাঁরা ‘স্যার স্যার’ বলে অনুরোধ করে বলছে যে আমাদের পরিচয় প্রকাশ করবেন না, ভিডিও করবেন না, সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অনুনয়-বিনয় করেন সেই স্থানে সেই স্যারটি অনুসন্ধানী সাংবাদিক ছিল নাকি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ছিল তা স্পষ্ট নয়। তবে যদি সেই ‘স্যারটি’ যদি একজন সাংবাদিক হন, তাহলে সেই সাক্ষাৎকার প্রচার করা ‘ব্যক্তিগত’ সুরক্ষা ভঙ্গের সামিল, যা সাংবাদিকতার ব্যাকরণে মিলে না। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত যেমন তাকে অপরাধী বলা যায় না, তেমনি কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘনকরা কখনোই সাংবাদিকদের কাজ হতে পারে না।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চাপে পড়ে কেউ যদি টিভি ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে বাধ্য হয়, তাহলে সেটিকেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মধ্যে পড়বে কি? মাহমুদুল কিংবা রুবেলের অকপটে প্রশ্নপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করা আর তা অনুসন্ধান সাংবাদিকতা বলে চালিয়ে দেওয়া ‘নৈতিকভাবে’ দুর্বল করে দেয়। হ্যাঁ এ কথা সত্য, সাংবাদিকতার একটি বড় উৎসস্থল হলো গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য; তবে সেই তথ্য সংগ্রহ করতে ‘গোয়েন্দা দলের’ সদস্যদের নিয়ে অভিযান চালানো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মানদণ্ড হতে পারে না। বরং অনুসন্ধানী সংবাদের পরই অভিযোগে থাকা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার ‘সাংবাদিকতার বড় সার্থকতা’। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় গোয়েন্দাগিরি করতে হয়, তবে প্রকৃত গোয়েন্দাদের সাথে নিয়ে নয়। আপনি যদি লক্ষ্য করেন, দেখবেন সাজেদুল যে পোশাকে চ্যানেল টোয়েন্টিফোররে ইন্টারভিউ দিয়েছে, সেই পোশাকে গ্রেপ্তার হয়েছেন, আবেদ যে পোশাকে টেলিভিশনে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই পোশাকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন কেউ যদি প্রশ্ন তোলে, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত খবরের পর সেই ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে, নাকি আগেই আটক করে ‘অনুসন্ধানী ইন্টারভিউ’ নেওয়া হয়েছে? ১৩-৭-২৪।
https://www.facebook.com/Nadim09
আপনার মতামত লিখুন :