শিরোনাম
◈ আমাদের পরামর্শ হয়তো আর দরকার নেই, এজন্য ডাকেনি : মুজিবুল হক চুন্নু ◈ পরামর্শ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে সরকার: বৈঠক শেষে গণফোরাম ◈ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রেসক্লাবের সামনে মারধর ◈ পলাতক পুলিশ সদস্যরা এখন ‘সন্ত্রাসী’ বিবেচিত হবে, দেখামাত্রই গ্রেফতার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (ভিডিও) ◈ প্রয়োজনে সিস্টেম ভেঙে নতুন লোক বসাবো : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ (ভিডিও) ◈ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ: এবারও ডাক পায়নি জাপা ◈ নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা, বেঁচে গেলেন অল্পের জন্য ◈ সিনওয়ারের মরদেহ নিয়ে ‘দর কষাকষি’ করতে চায় ইসরায়েল ◈ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : সাড়ে চারশ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হাত বদল

প্রকাশিত : ১৪ জুলাই, ২০২৪, ০২:১৩ রাত
আপডেট : ০৩ অক্টোবর, ২০২৪, ০৯:২৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অগ্রগতির জন্য রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে হয়!

মুজিব রহমান

মুজিব রহমান: রাষ্ট্র প্রথা ভাঙতে চায় না। কেবল বহিরাগত শক্তি কোনো রাষ্ট্র দখল করলে সেখানকার ধর্ম ও সংস্কৃতি বদলে দিতে চায়। ইংরেজরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত উপেক্ষা করেই সহমরণ বন্ধ ও বিধবা বিবাহ প্রচলনের আইন করেছিল, যা ভারতের নারীদের মঙ্গল বয়ে এনেছিল। সেই বদল সবসময় ইতিবাচক নাও হতে পারে। সাধারণত নাগরিকগণ বিপ্লব বা সংগ্রাম করেই বড় পরিবর্তনগুলো এনেছেন। যেমন দাসপ্রথার উত্তোরণের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহম লিংকনকে যত সাধুবাদই দিই তিনি স্বেচ্ছায় তা করেননি। তার আগেই ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকগণ আন্দোলন-সংগ্রাম করেই তাদের দেশে অমানবিক দাশপ্রথা বাতিল করাতে পেরেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক নাগরিকগণও দাশপ্রথা বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং রাষ্ট্র বাধ্য হয় দাশপ্রথা রহিত করতে। ইউরোপে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করতে সচেতন নাগরিকগণই সংগ্রাম শুরু করেছিল। এমনকি চার্চের ঘুষ নিয়ে বেহেস্তের সার্টিফিকেট ইস্যু রাষ্ট্র বন্ধ করেনি যতক্ষণ পর্যন্ত না, মার্টিন লুথার এই সনদ ইস্যুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে সক্ষম না হন। কলোনিয়াল যুগের অবসানও ঘটে জনমানুষের সংগ্রামের ফলেই। বৃটিশদের এবং পাকিস্তানিদের থেকে এ ভূখণ্ড স্বাধীন হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ফলেই।

বাংলাদেশে ২০১৮ সালে সরকার কিছু ক্ষেত্রে কোটা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল ছাত্রদের আন্দোলনের ফলেই। যখন সরকার মনে করেছিল, আন্দোলন করার মতো ছাত্রদের সেই বুকের পাটা আর নেই তখন তারা সেই কোটা ফিরিয়ে আনে। অনেকে বলেন, কোটায় সরকারের লাভ কী? তার উত্তরটাও জানা দরকার। দেশে তালিকাভূক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কমবেশি ২.৩০ লক্ষ। এখন জীবিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লক্ষও হবে না। অবিবাহিত অবস্থাতেও বহু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন অথবা পরে মৃত্যুবরণ করেছেন। ধরি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের নাতি-পুতিসহ সদস্যসংখ্যা ১৮লক্ষ। এটা মোট জনগোষ্ঠীর ১% মাত্র। তারা যদি চাকরিতে ১% এর বেশি সুযোগ পায় তাহলে সংবিধান অনুযায়ী বলতে হবে, তারা অনগ্রসর নয়। যদি এর চেয়ে কম চাকরি পায় তাহলে তারা অনগ্রসর এবং তাদের জন্য সংবিধান মোতাবেক সর্বোচ্চ ১% কোটা সুবিধা থাকতেই পারে। ৪৬তম বিসিএসে আবেদন করেছিল ৩.৩৮ হাজার যার মধ্যে ২.৫৫ লক্ষ শিক্ষার্থী প্রিলিমিনারীতে অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ১১ হাজার। ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগ পায় ২৮০৫জন (লিখিত পরীক্ষা দেয় ১৫২২৯জন এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৯৮৪১জন), ৪৪তম বিসিএসে নিয়োগ পায় ১৭১০ জন, ৪৪তম বিসিএসে পদ ছিল ২৩০৯টি। ৪৩তম বিসিএসে দেখি আবেদন করেছিল ৪.৩৫ লক্ষ। অর্থাৎ প্রিলিমিনারীতে উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় আবেদনকারীদের ৩.৫০%। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ৬৫%! সরকার যদি মনে করে কোন ছোট গোষ্ঠীর সিংহভাগই তাদের সমর্থক তাহলে সরকার যদি ওই গোষ্ঠীর জন্য ৩০% কোটা নির্ধারণ করে দিতে পারে তাহলে প্রশাসনে তাদের দলীয় লোকে ভরে যাবে। এটাই মূল উদ্দেশ্য। যদি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ৩০% পাস করতো তাহলে কোটায় সুযোগ পাওয়া অনেক কমে যেতো। ৫৬% কোটার কারণে ৯৮৪১ জনের মধ্যে ১২৩৪জন নিয়োগ পাবে মেধায়। এখন ১২৩৫তম মেধাবীও কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না কিন্তু ৯৮৪১তম ব্যক্তিও চাকরি পেতে পারে কোটার কারণে। ১২৩৫তমের চেয়ে ৯৮৪১ তমের যোগ্যতা সীমাহীনভাবেই কম। আপনি স্কুলের ফার্স্ট বয়ের সাথে লাস্ট বয়ের তুলনা করতে পারেন।

আমরা শুরু শুনলাম, আদালত বলছে, আন্দোলন দেখে আদালত রায় দেয় না। এমনটার লংঘন আমরা দেখেছি কাদের মোল্লার ক্ষেত্রেও। তাকে প্রথম রায়ে ফাঁসি দেয়া হয়নি। গণজাগরণ মঞ্চের সফল আন্দোলনের পরে আইন সংশোধন করেই কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়। এবারও কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেখলাম, আপীলে রায় অনেকটাই আন্দোলনকারীদের পক্ষে আসলো। এখন সরকার কোটা সংস্কার করতে পারবেন। যদি আন্দোলন অতি জোরদার হয় তাহলে কোটা তাদের দাবী অনুযায়ী ৫%এ নেমে আসতে পারে আবার যদি আন্দোলনকে দমিয়ে দেয়া যায় তাহলে কোট আগের জায়গাতেই ফিরে যাবে। এভাবেই সমাজ প্রগতির জন্য সচেতন মানুষের আন্দোলন ব্যাপক ভূমিকা রাখে। সরকার কিছুই বদলাতে চায় না যদি না অগ্রসর মানুষ তা না চায়। যেমন পাশ্চাত্যে এখন সুষ্ঠু গণতন্ত্র রয়েছে, ধর্মের প্রভাব কমেছে এবং মানুষের অধিকার অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কল্যাণ রাষ্ট্রগুলো বৈষম্য কমাতেও কাজ করছে। এগুলো সবই হয়েছে জনমানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে। এদেশের নাগরিকগণ অধিকাংশই হয় দলান্ধ না হয় ধর্মান্ধ। এদের অধিকাংশ আবার একইসাথে দলান্ধ ও ধর্মান্ধ। এমন মানুষ কখনোই রাষ্ট্রের উন্নয়ন চায় না। তারা কেবল তাদের দল ও ধর্মের উন্নয়নই দেখে তাতে রাষ্ট্র আরো পিছিয়ে পড়ে। এদেশেও মানুষের সুষ্ঠু ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে তাদের ঠিকমতো চাইতে হবে। দলান্ধ ও ধর্মান্ধরা একটা জাতির জন্য অভিশাপের মতো। এদের সংখ্যা যত বেশি সরকারের ততই সুবিধা। তারা দল ও ধর্মের জন্য রাষ্ট্রকেও বিকিয়ে দিতে পারে। এই মানুষদের কিভাবে ইউরোপ বদলে দিয়েছিল?

একটাই পথ দেখেছি আর তা হল পাশ্চাত্যের লেখক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপক ভূমিকা। তাদের প্রভাবে মানুষ আলোকিত হয়ে উঠেছিল এবং রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তনে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। রাষ্ট্র বাধ্য হয়েছিল, জনগণের পক্ষে অবস্থান নিতে। পাশ্চাত্যের প্রতিটি দেশেই গণতন্ত্র ও নাগরিকদের মানবাধিকার আজ সুসংহত। আর আমাদের? বৈষম্য ও অধিকারহীনতাই আমাদের ললাট লিখন মনে করছি। বাস্তবিক ললাটে কিছু লেখা থাকে না। নাগরিকগণকে অগ্রসর মানুষ কতটা উজ্জীবিত করতে পারে এবং সেই উজ্জীবিত নাগরিকগণ নিজের ও দেশের স্বার্থে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে সেটাই রাষ্ট্রকে এগিয়ে দেয়। দুটি প্রশ্ন? ১। টিউলিপ সিদ্দিকী যদি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে কি তিনি স্বৈরশাসন কায়েম করতে পারবেন? ২। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী/রাষ্ট্রপতির মানসিকতা নিয়ে কি কেউ যুক্তরাজ্যের সরকার একদিনও চালাতে পারবেন? ১৩ জুলাই ২০২৪। https://www.facebook.com/mojibrahmanabl

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়