শিরোনাম
◈ ইরানে হামলা করলে বিপর্যয় নেমে আসবে: রাশিয়ার হুঁশিয়ারি  ◈ নির্বাচনের সম্ভব্য সময় নিয়ে বিতর্ক, সন্দেহ-সংশয়ে রাজনীতিবিদরা ◈ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন: প্রথম দিনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন দু’জন ◈ দেশব্যাপী ব্ল্যাকআউট: ক্ষমা চেয়ে ৪ দফা দাবী তুলে ধরেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা ◈ পরিবারসহ রাতের আঁধারে ভারতে যাওয়ার পথে ধরা পড়লেন তারা ◈ জয়পুরহাটের পাঁচবিবি সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতার, বিজিবির বাধায় পণ্ড ◈ ১৯ দিনে ডেঙ্গুতে ৭৮ জনের প্রাণহানি ◈ সৌদির টিভি অফিসে হামাসকে ‘সন্ত্রাসী’ বলায় হামলা-আগুন ◈ স্বর্ণের দামে বিশ্ববাজারে নতুন ইতিহাস ◈ প্রায় ৯ ঘণ্টা পর আল্টিমেটাম দিয়ে শাহবাগ ছাড়লেন আউটসোর্সিং কর্মীরা

প্রকাশিত : ১২ জুলাই, ২০২৪, ০৩:২৪ রাত
আপডেট : ০৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কানে বাজে আমার মেধাবী বন্ধুর কণ্ঠস্বর...

রফি হক 

রফি হক: [১] আর্ট, কবিতা ইত্যাদি নিয়ে লিখতেও খুব দ্বিধা হয় আজকাল। দেশের চারিদিক জুড়ে এত দুর্নীতি, এত লুটতরাজ, এত অবৈধ সম্পদ, মানুষের এত মূল্যবোধ, নীতি, আদর্শের ক্ষয় দেখছি।...ভাবছি, মানুষ কেন আর পড়ালেখা করবে? কেন জ্ঞান-বুদ্ধি-মূল্যবোধের চর্চা করবে? একজন পিওন, দারোয়ান, ফোটোস্ট্যাট মেশিনের অপারেটর, ড্রাইভার থেকে সরকারী কর্মকর্তা যদি শত শত আর হাজার কোটি টাকার মালিক হয়Ñশত শত বিঘা সম্পত্তির মালিক হয় এবং একেকজনের নামে যদি সাত শ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে নিজেকে বিপর্যস্ত অথর্ব পরাজিত মানুষ বলেই মনে হয়।

[২] আমার কেবলই মনে পড়ছে আমার এক বন্ধুর কথা, তাঁর মুখটি ভাসছে। আমার ওই বন্ধুটি ঊনিশশ বিরাশি সালে যশোর বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় সারা যশোর বোর্ডের মধ্যে প্রথম হয়েছিল। তখন যশোর বোর্ডে পাসের হার ছিল মাত্র শতকরা বাইশ তেইশ পারসেন্ট।

[৩] সেই মেধাবী বন্ধুটির নাম উল্লেখ করছি না। সে শৈলকূপার উজ্জ্বল সন্তান ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে নিয়ে পড়েছিল। সে অন্যান্য সাধারণের মতো ছিল না। বন্ধুটি বুয়েট, মেডিকেল অন্যান্য কোথাও ভর্তি হওয়ার চেষ্টা না করে ইংরেজি সাহিত্য নিয়েই বড়ো হতে চেয়েছিল। বিশ্বসাহিত্য নিয়ে আরো আরো গবেষণা করবে এমনই তাঁর স্বপ্ন ছিল। আর্ট, কবিতা, সাহিত্য নিয়ে তাঁর প্যাশন ছিল দেখার মতো।

[৪] সে ঢাকা শহরে একটি স্বাভাবিক বেতনের চাকরিও পায়নি। সে রাজনীতি করত না। অনেক ঘুরে ঘুরেও কিছু না করতে পেরে শৈলকূপা চলে গিয়েছিল পরিবারের কাছেই।

[৫] আমার থেকেও সে বয়সে দুই বছরের ছোটো। আমার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল, ওর মৃত্যুর কয়েকমাস আগে--আমার অফিসে এসেছিল, মুখ চোখ দেখেই বুঝেছি--ক্ষুধার্ত। আগের চেহারা নেই। আমি তাড়াতাড়ি করে খাবারের ব্যবস্থা করি। তখন সে আমার হাত ধরে বলে, ‘আমি কিছু খাবো না রফি ভাই। আমাকে শুধু দুই হালি ডিম কেনার ব্যবস্থা করে দেন। আমার পরিবার কাল থেকে না খেয়ে আছে।...ওদের রেখে আমি কী করে খাবো?’ ওর কথা শুনে আমার চোখ জলে ভরে গেলো।

[৬] মাত্র দুই হালি ডিম? তারপর কী হবে?... আমি বললাম, আপনি আমার সঙ্গে আমার অফিসে আগামীকাল থেকেই কাজ শুরু করুন। হয়তো আপনার কাক্সিক্ষত সম্মানি দিতে পারবো না, কিন্তু অনায়াসে কেটে যাবে। আর এই সময়ের মধ্যে আমরা চেষ্টা করব ভালো সম্মানজনক একটি চাকরির। তাতে আমার বন্ধুটি শান্ত হলো। তার জন্যে আনা খাবারটি সঙ্গে নিলো। বললো, আগে ডিম কিনবে, তারপর বাসায় গিয়ে তার ফুটফুটে দুটি সন্তানের সঙ্গে খাবে।... আমার খুব মন খারাপ হলো।

[৭] বন্ধুটির যে কাজের ব্যবস্থা করলাম। কিন্তু সে এলো না। যোগাযোগও করল না। ফোন করলাম। সাড়া পেলাম না। কয়েকদিন ফোন করলাম। কোনো সাড়া নেই। ভাবলাম, নিশ্চয়ই কাজ পেয়ে গেছে। একদিন, আমার বন্ধু সুবর্ণা চৌধুরীর মেসেজ পেলাম। রফি, দ্যাখো, আমরাও কিছু করতে পারলাম না?

[৮] ফেসবুকেই দেখি, হঠাৎ করে বন্ধুটি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। আমাকে কিন্তু সে বলেছিল তার ভালো চিকিৎসা হচ্ছে না। ডাক্তার বলেছে, বাইপাস করতে হবে, কিন্তু রফি ভাই আমি তো চলতেই পারি না, কী করে কী করব?.... কথাটি মনে পড়লো। 

[৯] এই হতভাগা দেশে বহু হতভাগা মেধাবী ছাত্র আছেÑবোর্ড স্ট্যান্ড করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ ছাত্রও আছে। আমার ওই বন্ধুটির মতোই। অথচ ড্রাইভার, পিওন, দারোয়ান, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎয়ের মিটার রিডার, সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক কর্মীÑহাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। বাড়ি, ফ্ল্যাটের মালিক। শত শত বিঘা জমির মালিক। [১০] আমি বহু সরকারি সাধারণ ক্যাটাগরির কর্মকর্তার স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি মাসে ইউরোপ আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ঘুরতে দেখি। তাদের হয়তো ছেলেরা পড়ে অস্ট্রেলিয়া বা কানাডায়, মেয়েরা পড়ে আমেরিকায়। সরকারের একজন সাধারণ  কর্মকর্তা কত বেতন পান যে তাদের পরিবার এমন জীবনযাপন করতে পারে? আর এগুলো তারা ফেসবুকে প্রচার করে দেখিয়ে বেড়ায়। 

দিজ ইজ ভেরি সিম্পলÑ আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নাকের ওপর দিয়ে যে এগুলো হয়, তারা জানবেন না, এ কী করে হয়? কেমন করে হয়। তাদের চাকরিই তো অনিয়ম দুর্নীতি, লুটপাট খুঁজে বের করা। এতে করে সহজে করেই বুঝা যায় দুর্নীতি কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে? সরকারের প্রতিটি অর্গানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ক্যান্সারের মতো বাসা বেঁধেছে। কী করে এর থেকে বের হবে সরকার আল্লাহ জানেন। কাজের জবাবদিহিতা না থাকলে যা হয় ঠিক তা হয়েছে। [১১] যতবার এসব নিয়ে ভাবি, আর আমার কানে বাজে আমার ওই মেধাবী বন্ধুর কণ্ঠস্বর, ‘রফি ভাই, শুধু দুই হালি ডিম কেনার ব্যবস্থা করে দিন। আমার দুটো বাচ্চা না খেয়ে আছে’। [১২] লেখাটা আমি লিখতে চেয়েছিলাম, একটি মিউজিয়াম নিয়ে। এক লাইন লেখার পরে পরেই লেখাটি আমার বেহাত হয়ে যায়, এজন্য দুঃখিত। কিন্তু সঙ্গত কারণেই চেতনায় হোকা বা অবচেতনায় হোক লেখাটিতে সমসাময়িক বিষয় উঠে এসেছে।

+রফি হক, শিল্পী, প্রিন্টমেকার, সম্পাদক। ৯ জুলাই ২০২৪ : মঙ্গলবার। ২৫ আষাঢ় ১৪৩১

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়