শিরোনাম

প্রকাশিত : ১২ জুলাই, ২০২৪, ০২:৪২ রাত
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফুটবলে এখনো প্রাসঙ্গিক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

কবির য়াহমদ 

কবির য়াহমদ: স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি মিসের পর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে তার বিদ্বেষীরা যেভাবে ধুয়ে দিচ্ছিলেন, যেভাবে বাতিল করে দিচ্ছিলেন, তার উপসংহার হচ্ছে, ‘কী এমন প্লেয়ার রোনালদো!’ কোয়ার্টার ফাইনালেও গোল যখন করতে পারলেন না, তখন টুর্নামেন্ট থেকে পর বিদায়ের পর তার ফুটবল ক্যারিয়ারেরও শেষ দেখছেন তারা। একুশ শতকের শ্রেষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ ফুটবলারকে নিয়ে তাদের এই মূল্যায়ন কেবল হাস্যকরই নয়, এটা ফুটবলবোধের স্বল্পতা প্রকাশের পাশাপাশি অজ্ঞতারই প্রমাণ। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এমনই এক ফুটবলার যিনি দলের সেরা খেলোয়াড়ের ট্র্যাডিশনাল ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলেন না। পেলে-ম্যারাডোনারা ১০ নম্বর জার্সিকে মহিমান্বিত করেছেন। কিন্তু রোনালদো ৭ নম্বর জার্সিকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। ১০ নম্বর জার্সিধারী ফুটবল ইতিহাসে কে সেরাÑএই প্রশ্নে নানা জন নানা ফুটবলারের নাম বললেও ৭ নম্বর জার্সির সর্বকালের সেরা কেÑএই প্রশ্নের উত্তর একটাই; ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। 

ফুটবল দল হিসেবে কে কোন দল সমর্থন করেন, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্রাজিল ফুটবলের ভক্ত। এমন অনেকেই আছেন যারা আর্জেন্টিনার ভক্ত। সংখ্যায় কম-বেশি মুখ্য নয়, অনেকেই আছেন আরও নানা দলের ফুটবল ভক্ত। এই যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবল সৌরভ, এটা কিন্তু হালের নয়, এটা উত্তরাধিকারের। পেলে-গারিঞ্চা-জিকো-সক্রেটিস-রোমারিও-রোনালদো নাজারিওদের থেকে এসেছে ব্রাজিলের ভক্ত-সমর্থক; আর্জেন্টিনায় ভক্ত সমর্থক বানিয়েছেন দেশটির সর্বকালের সেরা ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা; মেসি ম্যারাডোনার তৈরি করা সৌধে প্রদীপ জ্বেলেছেন। কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো একা, এবং একাই একটা ফুটবল-নেশন তৈরি করেছেন। পর্তুগালকে আলোচনায় আসার মতো দল গড়েছেন তিনি। যদিও তার সঙ্গে ছিল এক সোনালী প্রজন্ম এবং এই প্রজন্মকে দিয়ে তিনি হিসাবের মধ্যেই নিয়ে এসেছেন এই পর্তুগালকে। 

রোনালদোর আগের পর্তুগাল কয়টা বিশ্বকাপ খেলেছে, রোনালদোর আগের পর্তুগাল কয়টা ইউরো খেলেছেÑএই হিসাব বের করে নিলেই প্রমাণ হয়ে যায়, তিনি কতটা বদলেছেন একটা ফুটবল-নেশনকে। তিনি কতটা বদলেছেন বিশ্ব-ফুটবলকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে রোনালদোর সাবেক সতীর্থ রিও ফার্দিনান্দ চমৎকার কথা বলেছেন; রোনালদোর অদ্যকার সমালোচকদের মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি, ইউরোর বাছাইতে ১০ গোল করেছেন রোনালদো। তিনি বলছেন, ৩৮/৩৯ বছর বয়সের রোনালদো বাছাইয়ে ১০ গোল না করলে ইউরোতেই চান্স পেত না পর্তুগাল। তথ্য তো সত্য। কোয়ালিফায়ারে রোনালদোর কাছ থেকে এমন গোল এসেছে বলেই তো পর্তুগাল জিতেছিল সব ম্যাচ। ইউরোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের মালিক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবারের ইউরোতে গোল করতে পারেননি। পারতেন তিনি, কিন্তু সামনে একা গোলরক্ষক ও অরক্ষিত গোলপোস্ট সত্ত্বেও তিনি বল বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ব্রুনো ফের্নান্দেসের দিকে তুরস্কের বিপক্ষে। 

ইউরোতে ২০২৪ এ পর্তুগাল খেলেছে ৫ ম্যাচ। তাদের পক্ষে গোল কাউন্ট হয়েছে মাত্র ৫টি, তবে নিজেদের করা গোল বলা যায় ৩টি; কারণ চেকিয়া ও তুরস্কের বিপক্ষে ২টি ছিল আত্মঘাতী গোল। এই তিন গোলের মাঝেও আছে রোনালদোর অবদান। ৫টা ম্যাচে রোনালদো গোল পাননি বলে ইউরোপের নানা ক্লাবে খেলা পর্তুগালের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এক রোনালদোতে এখনো তুমুল নির্ভরশীল পর্তুগাল, বয়স ৩৯; তবুও। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ইউরো বাছাইয়ে একের পর এক গোল করেছিলেন বলে মূল পর্বে উত্তরণ-পথে অজেয় ছিল পর্তুগাল; ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ গোল পাননি বলে সেই পর্তুগালকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। যদিও সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে একের পর এক গোল করে রোনালদো প্রমাণ করেছেন বয়স যতই হোক গোলের ক্ষুধা আছে তার এখনো। অবোধেরা যতই রোনালদোর শেষ দেখুক, আসলে রোনালদো শেষ হয়ে যাননি। ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো একটা বড় টুর্নামেন্টে গোলহীন থেকে রোনালদো এবার দেখেছেন হয়তো মুদ্রার ওপিঠ, কিন্তু এই ওপিঠই তার ক্যারিয়ারের কথা বলে না। তিনি গোল পাননি বলে, পর্তুগালও দেখেছে রোনালদো-পূর্ব যুগের পর্তুগালকে। ফুটবলে এখনো প্রাসঙ্গিক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। একুশ শতকের পূর্ণাঙ্গ ফুটবলারদের মধ্যে তিনিই সর্বকালের সেরা। লেখক: সাংবাদিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়