আতিকুজ্জামান ফিলিপ: অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, সমাজে যখন দুর্নীতি বৃদ্ধি পায় তখন ধর্মচর্চাও বৃদ্ধি পায়। হুমায়ুন আজাদ যে যথার্থই বলেছিলেন তা আমরা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। বিভিন্ন সরকারি অফিসে নূরানী চেহারার মেহেদি রাঙা দাঁড়িওয়ালা সফেদ সাদা ধবধবে আলখেল্লা পরিহিত বহু অফিস সহকারীকে নিঃসঙ্কোচে ঘুষ নিতে দেখেছি ও শুনেছি, এমনকি এই ঘুষ নেওয়ার ব্যাপারে তারা এতোটাই বেপরোয়া থাকে যে সরাসরি ঘুষ চেয়ে তাদের এমনও বলতে শুনেছি যে, ‘তাড়াতাড়ি করেন নামাজের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে, নামাজে যাবো।’ সাম্প্রতিক সময়ে দেশে দুর্নীতির যে মহোৎসব চলছে সেখানেও আমরা দেখছি এসব দুর্নীতিবাজদের প্রায় শতভাগই বিভিন্ন ধর্মকর্মে জড়িত। এরা আসলে ধার্মিক না, এরা বকধার্মিক। এরা এদের অপকর্মগুলোকে ঢাকতেই মূলত ধর্মটাকে স্রেফ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এমন উপসংহার টানলে মোটেও অত্যুক্তি হবে না যে-সকল ধার্মিক দুর্নীতিবাজ না হলেও সকল দুর্নীতিবাজই ধার্মিক (লেবাসধারী ধার্মিক)। একইরকম ঘটনা ঘটেছিলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়। সেসময় যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো তাদের প্রায় শতভাগই ধর্মের আশ্রয় নিয়ে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে চেয়েছিলো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধটাকে একটা ধর্মযুদ্ধ হিসেবে দেখাতে চেয়েছিলো। সেমময়ও সকল ধার্মিকেরাই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেনি কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো তাদের প্রায় শতভাগই লেবাসধারী ধার্মিক ছিলো। আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এদেশে মানসম্মত ও শৈল্পিক মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ তেমন কোন চলচ্চিত্র আজও তৈরি হয়নি, আমাদের চলচ্চিত্রাগ্রহী অনেক আলোচক-সমালোচকই প্রায়শই এমন মতামত দিয়ে থাকেন।
আবার আরেক ধরনের ন্যারেটিভ প্রচলিত আছে যেখানে অনেকেই এই অভিযোগ করে থাকেন যে এদেশে অল্পসংখ্যক যা কিছু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে সেখানে স্বাধীনতাবিরোধী সকল চরিত্রকেই দাঁড়িটুপি পরা ধর্মীয় লেবাসে দেখানো হয়। এটা নিয়ে অনেকেই ধর্ম গেলো, ধর্ম গেলো বলে তীব্র অভিযোগও করে থাকেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলোতে যারা স্বাধীনতাবিরোধীদের দাঁড়িটুপি ও ধর্মীয় লেবাসে দেখিয়ে থাকেন তারা ভুল করেছেন বলে কখনোই আমার মনে হয়নি। কারণ সেসময় যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো তাদের প্রায় শতভাগই ধর্মের লেবাস ধরেছিলো। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের এই ব্যাপারগুলো যারা মেনে নিতে পারেন না তারা বর্তমান সময়ের ধর্মের লেবাসধারীদের সাথে ঘটনার পরম্পরা মিলিয়ে দেখুন। দেখবেন তখন আর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের ওই ব্যাপারগুলো অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি বা অসামাঞ্জস্য মনে হচ্ছে না। ১০ জুলাই ২০২৪। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :