মহিউদ্দিন খালেদ: একটি পাখি বনে ঘুরে ঘুরে গান গাইত। এখান থেকে ওখান থেকে ফল বীজ ঠুকরে খেত। বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে একদিন দেখল একটা অফিস। অফিসের সাইনবোর্ডে লেখা, ‘শিয়াল অ্যান্ড সন্স ট্রেডিং।’ কৌতুহলী পাখি ভেতরে ঢুকল। চেয়ারে উপবিষ্ট শেয়াল খেঁক করে হেসে বললো, এত কষ্ট করে খানা জোগাড়ের কি দরকার? প্রতিদিন সকালে অফিসে এসে ডিম পাড়বা। আমি তোমাকে রেডিমেড ফুড দেব। বিনিময়ে তোমার ডিম আমি নেব। পাখি রাজি হলো। প্রতিদিন সকালে পাখি অফিসে আসে। ডিম পাড়ে। বিনিময়ে শিয়াল তিনবেলা রেডিফুড খেতে দেয়। একদিন অফিসে বসে গান গাইতে গেলে শিয়াল বললো, অফিস তো গান গাইবার জায়গা না। গান গাইতে ইচ্ছা হলে বনে ফেরৎ যাও।
পাখি দেখল রেডিমেড ফুড খাবার আরামে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বেশি বেশি খাবার কারণে তার শরীরও ভারি হয়ে গেছে। উড়ে উড়ে গাছের ডাল হতে খাবার সংগ্রহ করতে শরীর মন কোনোটাই সায় দেয় না। পাখি গান গাওয়া বাদ দিলো। জীবনে কিছু পেতে গেলে কিছু ছাড়তে হয়। দুই বছর অফিসে ডিম পাড়ার পর পাখি একপোঁটলা রেডিফুডসহ একসপ্তাহের ছুটি নিলো। ছুটি নিয়ে বনে ঢুকলো। তার খুব ইচ্ছা প্রাণভরে গান গাইবে এবং শুনবে। গান গাইতে গিয়ে দেখল গলায় চর্বি জমে গলা ফ্যাসফ্যাসে হয়ে গেছে। গলা দিয়ে গান বেরোচ্ছে না আর। ভাবল, নিজে যখন গাইতে পারছে না তখন অন্য পাখিদের গান শুনে মন ভরাবে।
সাতদিন বনে ঘুরে সে বিস্মিত হয়ে দেখল, বনে বলতে গেলে কোনো পাখিই আর গান গায় না। প্রায় সব পাখি শিয়াল অ্যান্ড সন্স ট্রেডিং এর রেডিফুডের বদলে ডিম চুক্তিতে সাইন করে ফেলেছে। হতাশ হয়ে ফিরে আসার আগে অনেক দূরে বিষম চিল্লামিল্লি শুনে পাখি ওদিকে গেলো। গিয়ে দেখে টিলার উপর দাঁড়িয়ে একটা রাম ছাগল পাঁজরের হাড্ডি কাঁপিয়ে চিল্লাচ্ছে আর তাই দেখে সব জন্তুজানোয়ার রীতিমতো উল্লাস করছে। পার্শ্বে উপবিষ্ট সজারুকে পাখি জিজ্ঞেস করলো, ঘটনা কী? সজারু উৎফুল্ল চিত্তে বললো, ওই এখন আমাদের গায়ক। ৯ জুলাই, ২০২৪। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :