শিরোনাম
◈ বিশ্ব ইজতেমায় তিন মুসল্লির মৃত্যু, ময়দানেই জানাজা ◈ 'আমরা ব্রিটিশ পুলিশ না, কাউকে মারতেও চাই না মরতেও চাই না' (ভিডিও) ◈ ইসলাম গ্রহণ করলেন ক্রীড়া সাংবাদিক দেব চৌধুরী ◈ হঠকারিতা, ফ্যাসিজম দুনিয়া-আখিরাতে কারো জন্য কল্যাণকর নয় : জামায়াতের আমীর ◈ আওয়ামী লীগকে প্রতিহতের ঘোষণা, রাজপথে থাকবে ছাত্রদলসহ বিরোধীরা ◈ কী ঘটেছিল প্রধান উপদেষ্টা হতে রাজি হওয়ার আগে–পরে, জানালেন অধ্যাপক ইউনূস ◈ ৯ মাসের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণ বন্ধ হচ্ছে, কী অর্জিত হলো বিধিনিষেধে? ◈ ঢাকাসহ যে ৪ বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা ◈ সৌদি আরব ওমরায় যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে দুবাই হাসপাতালে বাবর ◈ বিশ্ব ইজতেমায় ৭২ দেশ থেকে এসেছেন ২২শ মেহমান

প্রকাশিত : ১১ জুলাই, ২০২৪, ১২:৩৩ রাত
আপডেট : ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেশে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ শিক্ষানীতি অনুসরণে নেওয়া হয় না কেন?

গৌতম রায়

গৌতম রায়: বাংলাদেশের শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ শিক্ষানীতি অনুসরণে নেওয়া হয় না কেন? প্রশ্নের পটভূমি : একটি দেশের শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ সেই দেশের শিক্ষানীতি অনুসরণে গ্রহণ করার কথা। শিক্ষানীতিতে শিক্ষার সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে থাকবে না, কিন্তু এটি একটি গাইড বা নির্দেশনামূলক ডকুমেন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে, যা দেশের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে নির্দেশ প্রদান করবে। যেহেতু শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত হয় শিক্ষার নানা অনুষঙ্গকে একসঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার লক্ষ্যে, সেহেতু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষানীতিকে শুধু প্রাধান্য দেওয়াই নয়, মূল দলিল হিসেবে বিবেচনা করা (ব্যতিক্রম ছাড়া) বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।

স্বাধীনতার পর একটি বড় আক্ষেপ ছিলো যে, দেশের শিক্ষার উন্নতিকল্পে একটি শিক্ষানীতি না থাকা। ১৯৭২ সালে প্রথিতযশা বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে যে শিক্ষা কমিশন গ্রহণ করা হয়েছিলো, তারা ১৯৭৪ সালে তাদের প্রতিবেদন পেশ করলেও সেটি শিক্ষানীতি হিসেবে গৃহীত হয়নি। এর পরে আরও অনেক শিক্ষাকমিশন গঠিত হলেও মূলত রাজনৈতিক পরিবর্তন ও বিবেচনায় কোনোটির প্রতিবেদনই নীতি হিসেবে গৃহীত হয়নি। ১৯৯৭ সালে অধ্যাপক এম শামসুল হককে প্রধান করে যে শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়, তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার ১৯৯৯ সালে প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি (খসড়া) তৈরি করে এবং তা ২০০০ সালে সংসদে শিক্ষানীতি হিসেবে গৃহীত হয়। এটিই বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষানীতি। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে প্রধান করে জাতীয় শিক্ষা কমিটি গঠন করা হয়, এবং তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১০ সালে বর্তমান শিক্ষানীতি সংসদে গৃহীত হয়। তখন থেকে এটিই বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষানীতি।

যদিও ধারণা করা হয়েছিলো, ২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার যাবতীয় সিদ্ধান্তসমূহ এই শিক্ষানীতি অনুসারে গ্রহণ করা হবে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রশ্নে সরকার প্রায়শই শিক্ষানীতির নানা সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ  বা কৌশল গ্রহণ করছে না। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এক. বর্তমান শিক্ষানীতি অনুসারে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার পরিসর পঞ্চম শ্রেণি থেকে বাড়িয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার কথা। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি এবং এই কৌশল বাস্তবায়ন করা হয়নি। দুই. বর্তমানে শিক্ষার জন্য জাতীয় বাজেটের বরাদ্দ দুই শতাংশেরও কম। শিক্ষানীতির কৌশলসমূহ বাস্তবায়নের জন্য এই বরাদ্দ দ্বিগুণেরও বেশি হওয়া উচিত। ২০১০ সালের পর থেকে ধারণা করা হয়েছিলো, শিক্ষানীতিকে প্রাধান্য দিয়ে বা শিক্ষানীতির সাথে সঙ্গতি রেখে বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ করা হবে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত সেটি দেখা যায়নি।

তিন. ২০২০ সালে পরিকল্পনা কমিশন আয়োজিত অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এক আলোচনা সভায় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছিলেন, ১০ বছর আগে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। ১০ বছর দীর্ঘ সময়, এই দীর্ঘ সময়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে শিক্ষানীতিকে সংশোধন, পরিমার্জন ও সংযোজন করার। তাই সরকার শিক্ষানীতি সংশোধন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

এদিকে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টরা শিক্ষানীতি সংশোধন করার কথা বলেছেন, অপরদিকে তাঁরাই শিক্ষাক্রম প্রণয়নের নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। নিয়মানুযায়ী, শিক্ষাক্রম রচিত হয় শিক্ষানীতিকে কেন্দ্র করে। কিন্তু দেখা গেলো, শিক্ষানীতির যে সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে, সেটা না করেই নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হলো। তার মানে, শিক্ষানীতিকে পাশ কাটিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। এখন যদি কোনো কারণে শিক্ষানীতি ‘সংশোধন, পরিমার্জন ও সংযোজন’ করা হয়, তাহলে কি আবার শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হবে? যদি হয়, তাহলে এই সংশোধন প্রক্রিয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হলো না কেন? যদি না হয়, নতুন শিক্ষাক্রম বর্তমান শিক্ষানীতির সাথে কতোটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ?

চার. বর্তমান শিক্ষানীতিতে অধ্যায় ২৫ শিক্ষকের মর্যাদা, অধিকার ও দায়িত্ব অংশে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সকল স্তরেরশিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা হবে। ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল তৈরির সময় শিক্ষানীতির এই সুপারিশ বা কৌশল বাস্তবায়ন করা হলো না কেন? এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে বর্তমান শিক্ষানীতি থেকে। উপরের চারটি উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ শিক্ষানীতি অনুসারে গ্রহণ করা হচ্ছে না। কেন? যে মতাদর্শের সরকার শিক্ষানীতি তৈরি ও গ্রহণ করেছেন, সেই মতাদর্শের সরকারই পরবর্তী সময়ে শিক্ষানীতির বাইরে গিয়ে শিক্ষার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। একসময় শিক্ষানীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তন’ শব্দগুচ্ছ বহুল ব্যবহার করা হতো, যেটি এখনকার পরিপ্রেক্ষিতে আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সুতরাং, নীতি অনুসারে শিক্ষা পরিচালিত না হওয়ার বিষয়টি একটি বড় প্রশ্ন হিসেবেই থেকে যাচ্ছে। ১০-৭-২৪।

যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/মড়ঁঃধসৎড়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়