শিরোনাম

প্রকাশিত : ১০ জুলাই, ২০২৪, ১২:৫৩ রাত
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আপনাদের সম্মিলিত ওনারশিপ আপনার প্রতিষ্ঠানকে সেরা বানাবে

মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন

মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন: দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট কিংবা নটরডেম কলেজের এলুমনাইরা নানা কথা প্রসঙ্গেই নাকি তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে গর্বের কথা জানান দেয়। এটা নিয়ে নানান টিম্পনি দেখলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আহমদ ছফা বলেছিলেন, আমাদের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নাকি জ্ঞান বিতরণ থেকেও অহংকার বেশি শেখায়। আমি কিন্তু নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে গর্ব করা, জানান দেয়ার মধ্যে সমস্যা দেখি না। এটা শুধু বাংলাদেশ বলে না, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এটা দেখা যায়। সে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের আলমা মাতার নিয়ে গর্ব করে, নানা অকেশনে জানান দেয়।

আমেরিকায় হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু হার্ভার্ড, ইয়েল,স্টানফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছাত্র ছাত্রীরা সুযোগ পেলেই জানান দেয় তারা এসব জায়গা থেকে পড়ে এসেছে। সাধারণ মানুষের কথা বাদ দিলাম,আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা পর্যন্ত নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারলে সেটা নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করে। সহিউম্যান সাইকোলজি এভাবেই কাজ করে যা কিছু সেরা-কেউ যদি সেটার সাথে অংশীদার হতে পারে তাহলে জানান দেবেই। এটা সব কালচারেই দেখা যায়। আমার বরং সমস্যা মনে হয়-যারা এই জানান দেয়াকে নিয়ে টিম্পনি কাটে তাদের। কারণ এটা তাদের হীনমন্যতা সম্ভবত। সে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে অন্যের সামনে বলতে হীন্যমন্যতায় ভুগে। এর অর্থ সে নিজেই মেনে নিচ্ছে কিংবা স্বীকার করে নিচ্ছে তার নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মান ও ভারে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে আছে। কিন্তু আমার  কথা হচ্ছে যে নটরডেমে কিংবা বুয়েটে পড়েছে সে সেটা বলছে, এটা নিয়ে সমালোচনার কি আছে? বরং আপনি গর্বের সাথে বলুন, আমি অমুক কলেজে পড়েছি, অমুক স্কুলে পড়েছি।

সবার স্মৃতি মূল্যবান। এটা তুলনার প্রশ্ন না। এটাকে ওন করার প্রশ্ন। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সে যদি নিজের আলমা মাতারকে ওন করে, তাহলে আপনি হাজি দানশে পড়লে সেটাকে ওন করেন। আপনাদের সম্মিলিত ওনারশিপ আপনার প্রতিষ্ঠানকে সেরা বানাবে। আরেকজনকে টিম্পনি কেটে, নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে হীন্যমন্যতায় ভুগে সেরা হবে না। আরেকটা আলোচনা দেখলাম, আলমা মাতারের সমালোচনা করতে গেলেই একদল হামলে পড়ছে। এরাও সেইম ইনসিকিউরিটিতে ভুগে। ফলস সেন্স অব প্রাইড। কারণ প্রতিষ্ঠানকে ওন করা এবং ডিজওন করা-দুইটাই মানুষের ইনিহারেন্ট ফ্রিডম এক্সসারসাইজ ও এজেন্সি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমি যদি মনে করি, কিছু শিখিনি আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে-এটা আমি মনে করতেই পারি এবং এটা প্রকাশ করার মধ্যে প্রতিষ্ঠানকে অপমান করার কিংবা অকৃতজ্ঞ হওয়ার কিছু নাই। যারা এটার মধ্যে অকৃতজ্ঞতা খুজে তাদের যুক্তি আমার কাছে আবেদন হীন,  অতি আবেগ নির্ভর বাগাড়ম্বর মনে হয়।
আমি কী শিখেছি, কিন্তু কি শিখতে চেয়েছিলাম এটা সাবজেক্টিভ এভালুয়েশন। কেউ আরেকজনের শেখার বাউন্ডারি কিংবা এসপিরেশন ডিফাইন করে দিতে পারে না। এই বাউন্ডারি নির্ধারণ করতে চাওয়াটাই মামার বাড়ির আবদার। কনফারমেশন বায়াসনেস। এটাই আমাদের একধরনের ইনসিকিউরিটি যেটা ফলস সেন্স অব প্রাইড থেকে তৈরি। এর অর্থ আপনি যেভাবে সেরার মান নির্ধারণ করেছেন, আরেকজনকে সেভাবেই করতে হবেÑএটা সফট রোমান্টিক ফ্যাসিজম।

কৃতজ্ঞতা হচ্ছে একধরনের আত্মতৃপ্তির প্রকাশ। এখন আমি যদি মনে করি যে প্রত্যাশা নিয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি সেটা পূরণ হয়নি তাহলে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বাধ্য নই। কিন্তু আরেকজন আজীবন কৃতজ্ঞ থাকতেই পারে। কারণ তার হয়তো প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আমাদের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কম্পিটেটিভ প্রসেসের মাধ্যমে একজন যোগ্যতা প্রমাণ করেই টিকে। এটা ভলান্টরি গিফট না যে আমাকে কৃতজ্ঞা থাকতেই হবে। এটা কম্পিটেটিভ এচিভমেন্ট, কিন্তু তার পরেও সেই এচিভমেন্টে আমি অতৃপ্ত হতেই পারি। আমেরিকার স্টাচু অব লিবার্টির নীচে একটা ব্যানারে একটা লেখা দেখে চোখ আটকে গেলো স্বাধীনতা হচ্ছে সেটাই যেই কথা তুমি শুনতে চাও না, সেই কথা বলার অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ  না হওয়ার কিংবা নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার-স্বাধীনতা খুব সিম্পল প্রাকটিস। যারা এই সামান্য স্বাধীনতা নিয়েও শঙ্কিত তাদের ভেতরে থাকা ইন্সিকিউরিটি ফিলিং ও ফোর্সফুল এলিজিয়েন্স নিয়ে যে বাসনা ঘাপটি মেরে আছে আমি বরং সেটা নিয়ে শংকিত। লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান, ইউনিভার্সিটি অব কুইন 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়