শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৯ জুলাই, ২০২৪, ০১:৩৪ রাত
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সরকারি চাকরিতে কারা যায়?

সাঈদ তারেক

সাঈদ তারেক: সরকারি অফিস আদালতে ঘুষ-দুর্নীতি লুটপাটের এত মচ্ছব কেনÑ এ ব্যাপারে ফেসবুকে একজনের একটা মনস্তাত্বিক ব্যখ্যা দেখলাম। বিশেষ করে বিসিএস পাস করে চাকরিতে যোগ দেওয়া মাত্রই এক শ্রেণির তরুণ যুবক হাভাতের মতো দুই হাতে যা পায় লুটতে থাকে কেন, বিষয়টা নিয়ে আমিও বেশ ভেবেছি। অথচ এরাই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় নীতিকথা আউড়েছে, সমাজ বদলের গান গেয়েছে। ভদ্রলোক বলেছেন আজকাল বিসিএস দেয় বা পাস করে সরকারি চাকরিতে আসে সাধারণত মধ্যবিত্ত বা গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা, যারা নিত্য অভাব-অনটনের মধ্যদিয়ে বেড়ে ওঠে। অর্থকষ্ট, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা থেকে সৃষ্ট হতাশা ক্ষোভ তাদের অর্থলিপ্সার দিকে ঠেলে দেয়। ফলে সুযোগ পাওয়ামাত্র হুঁশ হারিয়ে ফেলে। সমস্ত নীতি-নৈতিকতা ঝেড়ে মুছে দুহাতে টাকা কামানোর নেশায় মেতে ওঠে। পদপদবি ব্যবহার করে অল্প সময়ে বেশুমার ধনদৌলতের মালিক বনে যায়।

ভদ্রলোকের এই ব্যাখ্যাটা কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে আমাদের দেশে এক সময় সরকারি চাকরি কিন্তু বেশ মর্যাদাপূর্ণ ব্যপার ছিল। সাধারণত মেধাবীরাই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসব জায়গায় নিয়োগ পেতো। সমাজে তাদের বেশ সম্মানও ছিল। পুলিশ কাস্টমস আবগারী সিভিল সাপ্লাইজাতীয় কয়েকটি সেক্টরে ঘুষের কারবার চললেও তা ছিল খুবই গোপনে এবং সীমিত পরিসরে। কারণ ঘুষখোররা সমাজে নিন্দিত এবং ঘৃণীত হিসেবে বিবেচিত হতো। সে কারণে সাধারণত কোনো ভদ্র, শিক্ষিত, মার্জিত বা উচ্চবংশীয় পরিবার থেকে এসব চাকরিতে কেউ যেতে চাইতো না। সিভিল সার্ভিস বা সরকারি চাকরিতে আসতেন ক্যারিয়ারিস্ট বা চ্যালেঞ্জাররা। উচ্চপদে আসীন সরকারি কর্মকর্তা বা আমলারা চাইতেন তাদের সন্তানসন্তুতিরা যেন সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। ছোটবেলা থেকেই তাদেরকে সেভাবে গড়ে তোলা হতো। এর বাইরেও মেধাবীরা নিজেদের প্রস্তুত করতেন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য। 

ফলে বিস্তর যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যদিয়ে একজন সরকারি কোনো পদে নিয়োগ পেতেন। পারিবারিক বা বংশীয় কিছু ব্যাসিক শিক্ষার কারনে তারা কাজের মাধ্যমে যোগ্যতার পরিচয় দিতেন। নিজের উপার্জন দিয়েই জীবন নির্বাহ করতেন। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, মানুষের মাথায় বারি দিয়ে টাকা কামাই বা সরকারি টাকা লুটের কথা সাধারণত কেউ চিন্তা করতেন না। যুগ পাল্টেছে। সাথে সমাজও। এখন অযোগ্য অপদার্থদেরই সর্বত্র জয়জয়কার। নষ্টদের রাজত্ব। শিক্ষিত মেধাবীরা চেষ্টা করে দেশ ছেড়ে পালাতে, পয়সাওয়ালা বাবা-মা বা বড় আমলারা সন্তানদের বিদেশে পড়িয়ে সেখানেই সেটেল করে দেন, ব্যবসায়ীদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে সরকারি চাকরিতে যাওয়ার চাইতে পৈত্রিক ব্যবসায় মনোযোগী হয়, সারা বছর চুরি করে পাঁচ-দশ কোটি কামানোর চাইতে এক দাগে ব্যাংকের শত কোটি টাকা মেরে দেওয়া অধিক লাভজনক। ফলে কার্যত সরকারি চাকরি গিয়ে ঠেকেছে এখন মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত বা নিত্য অভাবী সংসার থেকে উঠে আসাদের মধ্যে।

এর মধ্যে আছে কোটা। ছাত্রলীগ, তদ্বীর, ঘুষ। এই সমস্ত তরিকা এস্তেমাল করে যারা আসে তাদের মেধা আর যোগ্যতা কোন পর্যায়ের হতে পারে বলার অপেক্ষা রাখে না। এই যে আজ হাজার হাজার বেনজীর, মতিউর, আজিজ মিয়া লাকিদের উদ্ভব, সরকারি অফিস আদালতে ঘুষ, দুর্নীতি লুটপাটের মহোৎসব-তার জন্য দায়ী সর্বক্ষেত্রে অযোগ্যদের অধিষ্ঠান। এর সাথে আছে সর্বনাশা দলীয়করণ। দলীয়করণ মানেই অনুপযুক্তদের পুনর্বাসন। কারণ যে যোগ্য সে কখনও কোটা বিশেষ বিবেচনা বা দলের পেছনে ঘুরবে না। যারা অযোগ্য অপদার্থ কেবল তারাই পেছন দরজা দিয়ে চাকরিতে ঢোকে। আর ঢুকেই আকণ্ঠ গিলতে থাকে। এরাই এখন নিয়ন্তা। ৭ জুলাই ২০২৪। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়