মুজিব রহমান: মায়ামী বীচে পেন্টি-ব্রা পরা মেয়েদের দিকে কেন অন্য পুরুষরা লকলক করে তাকায় না? শুনেছি, বাঙালিরা বিভিন্ন বীচে গিয়ে ঝোপের আড়ালে বসে অন্তর্বাস পরা মেয়েদের দিকে লকলক করে তাকিয়ে দেখে সমেহন করে। বিশেষ করে মুসলিমরা মনে করে নারীর যৌনাঙ্গেই যেনো তাদের চরিত্র লুকায়িত থাকে। কিন্তু পাশ্চাত্যের মেয়েরা ওসবকে থোড়াই কেয়ার করে। কেউ তার দিকে অশ্লীলভাবে তাকিয়ে থাকলে সমস্যাটা ওই লম্পট পুরুষেরই, মেয়েটিরতো নয়। ওরা চরিত্রবান মেয়ে বলতে সততা থাকাকেই বোঝায়। ভালো মেয়ে বলতে সততার সাথে মেধার সংযোগকেই বোঝায়। অতীতে কার সাথে প্রেম বা যৌন সম্পর্ক হয়েছিল তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।
রাজবাড়ি জেলার এক বন্ধু তার ছাত্র জীবনের একটি ঘটনার কথা বলেছিল। একটি নাটকের সংলাপ ছিল, ‘মেয়েটির চরিত্র ভাল না’। ওদের ক্লাসের খুবই সপ্রতিভ ও মেধাবী একটি মেয়ের উপর ওরা ওই ডায়ালগ চাপালো। কিন্তু ‘মেয়েটির চরিত্র ভাল না’ কথাটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে গেল। মেয়েটির পরিবারের কাছেও গেল। ওর স্কুলে যাওয়া আজীবনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। বাস্তবিক মেয়েটি খুবই সচ্চরিত্রের ছিল। সমাজতো তখন বলেছে, 'তোমার চরিত্র খারাপ না হলে, লোকে বলে কেন? অন্যদের ব্যাপারেতো বলে না!'
আমাদের বিক্রমপুরের একজন মেধাবী মেয়ে আমাদের সাথে সংগঠন করতো। সে দেখতে ভাল, ভাল গান গায়, আবৃত্তির ক্যাসেট বের হয়েছে, জাতীয় পত্রিকায় তার কবিতা ছাপা হয়, উপস্থাপনা করেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। আমাদের সংগঠনেরই আরেকজন পুরুষ হঠাৎই শিক্ষিকা মেয়েটি সম্পর্কে বাজারে ‘ওর চরিত্র ভাল না’ এমন কথা রটাতে থাকে। মেয়েটির কানেও যায়। সে আমাদের প্রোগ্রামে আসা বন্ধ করে দেয়। আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি জানতে পারি। ওই তথাকথিত ভদ্রলোকের কাছে জানতে চাই— ওর সম্পর্কে এমন মিথ্যা কথা কেন বলেছেন? সে উত্তরে জানায়, ‘আমার মনে হয়েছে সে ভাল মেয়ে নয় এজন্যই বলেছি’। কথা হল! আপনি খোঁজ নিবেন না? কদিন পড়েও যখন বিষয়টি নিয়ে তার সাথে আবার কথা বলি তখন সে দুঃখ প্রকাশ করে। তবে মেয়েটি আর আমাদের সাথে আগের মতো সক্রিয় থাকেনি।
একটি মেয়ে রাজনীতি করে। তার সম্পর্কে কয়েক ডজন নেতার যৌন সম্পর্কের কথা প্রচার দেয়ার লোকের অভাব হয় না। কিছু প্রতারক পুরুষ এমন প্রচারণা দিয়েই মজা পায়। কিন্তু সমাজে মেয়েটি যে বিতর্কিত হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল করে না। যদি দুষ্টু লোকদের এসব মিথ্যাচারকে মেয়েরা গ্রাহ্য না করতে পারে, সামনে এসে প্রমাণ চাইতে পারে তবেই সমাজ বদলে যাবে। যৌন সম্পর্ক দিয়ে আমাদের সমাজ মেয়েদের চরিত্র যাচাই করে। আর পুরুষদের জন্য এককালে সারাদেশে হাজার হাজার পতিতালয় ছিল, সেখানে কদিন পরে থাকলেও পুরুষদের চরিত্রে কালিমা লাগতো না। আর কোন মেয়ে কারো সাথে হেসে কথা বললেই সর্বণাশ হয়ে যায়। এমন নিকৃষ্ট ভাবাদর্শ বদলাতে হবে। যারা এমনটা করে তাদেরই কথা শুনিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে।
আমি উত্তরবঙ্গে গিয়ে শত শত মেয়েকে বাইসাইকেল চালাতে দেখে অনুপ্রাণিত হই। আমাদের স্কুলে অনেক দূর থেকে অনেক মেয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে আসে। ভাবলাম যদি আমার মেয়েকে সাইকেল কিনে দেই তবে, দূর থেকে আসা মেয়েরাও অনুপ্রাণিত হয়ে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে পারবে। আমার এক বন্ধুও তার মেয়েকে সাইকেল কিনে দিয়েছিল। দুষ্টু লোকেরা কটু কথা অনবরত বলতে থাকায় ওরা বাধ্য হল সাইকেল চালানো বন্ধ করতে। সুশিক্ষিত ও সচেতন সমাজ যদি এসব নিয়ে সক্রিয় না থাকে, নারীদের পাশে না দাঁড়ায় তবে নষ্টদের দখলে থাকা সমাজ সহজে বদলানো যাবে না। আমাদের কথা বলতে হবে অনবরত। আর নারীর চরিত্র শিমুল তুলা নয় তাই নারীকেও এসব কথা ফু দিয়েই উড়িয়ে দিতে হবে শিমুল তুলার মতোই। ২-৭-২৪। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :