শিরোনাম
◈ হাসান আরিফের মৃত্যুতে উপদেষ্টা পরিষদের শোক ◈ গত ১৫ বছর বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে তাঁবেদারি করেছে : প্রেস সচিব  ◈ উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ ভাতা বৃদ্ধির দাবীতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেছেন চিকিৎসকরা ◈ রাজধানীর যেসব সড়ক কাল বন্ধ থাকবে, বিকল্প পথে চলার পরামর্শ ◈ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন রোহিঙ্গাদের ফেরাতে যে কৌশলের কথা জানালেন ◈ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি নিয়ে যা বললেন চিফ প্রসিকিউটর (ভিডিও) ◈ রাখাইন রাজ্যের মিলিটারি সদরদপ্তর আরাকান আর্মির দখলে, সতর্ক উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত ◈ লন্ডন-যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ কোটি টাকা পাচার : হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু ◈ উপসচিব পুলে কোটা: প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান

প্রকাশিত : ০৫ জুলাই, ২০২৪, ০১:৫৭ রাত
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৈষম্য এবং প্রফেসর!

মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন

মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতন-ভাতা-সহ যেসব বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেছেন তা সঠিক। অতিরঞ্জিত নয়। আসলেই টপ মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসে। নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে নিয়োগ পায় সেও মেধাবী। অন্য পেশায় গেলে এর থেকে বেশি আয় করতো এটাও বলা যায়। পেনশনের মতো স্কিম নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন করতে হয়, এটা জাতি হিসাবে আমাদের  লজ্জার। কারণ অবসরের পরে একজন শিক্ষক যদি তার সিকিউরিটি নিয়ে চিন্তা করতে হয় তাহলে মেধাবীরা এই পেশায় আসবে কেন? উপরের সবগুলো যুক্তি সঠিক। কিন্তু এই টিচিং পরিবারের সদস্য হয়েও আমি বলছি এটা পারশিয়াল চিত্র। একজন প্রফেসর একজন সচিবের সমান বেতন ভাতা সুযোগ-সুবিধা দাবি করা একই সাথে যৌক্তিক, কিন্তু আবার অপরিণত হাস্যকর। 

কারণ আমাদের দেশের মতো এত সহজে পৃথিবীর আর কোথায় প্রফেসর হওয়া যায়, আমার জানা নেই। পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া প্রফেসর হওয়ার উদাহরণ ভুরি ভুরি-সেই কথা নাইবা বললাম। কিন্তু এছাড়াও প্রফেসর হওয়ার যে ক্রাইটেরিয়া, পাবলিকেশনের যে রিকয়ারমেন্ট সেগুলোতে শিথিলতা, মৌলিক গবেষনা বাদে প্রফেসর হয়ে যাওয়া, ছাত্রদের গবেষণায় শিক্ষকের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া, মানহীন প্রিডিটরি জার্নালে ছাপিয়ে প্রমোশন পেয়ে যাওয়া, একবার চাকরিতে ঢুকলে দিনের পর দিন নড়াচড়া না করলেও সময়ের সাথে প্রমোশন পেয়ে যাওয়া এত সহজে বাংলাদেশের আর কোন পেশায় প্রমোশন পাওয়া সম্ভব কিনা আমি জানিনা।

মাঠ প্রশাসনে যারা কাজ করে তাদের ডিউটি ২৪ ঘণ্টা, তার উপর নানা রকম দায়িত্ব, চাপ, সবতো আছেই। সত্য বলতে প্রশাসন কিংবা ব্যাংকে চাকরির যে চাপ সেই চাপ আমরা শিক্ষকরা নিই না কিংবা নিতে হয় না। কারণ জ্ঞানচর্চার নিয়োজিত থাকার জন্য আমাদের এসব প্রাত্যহিক চাপ থেকে দূরে রাখা হয় কিংবা রাখতে হয়। কিন্তু আমরা সেই সময় কী করি? সেইসব প্রশ্ন না তুলে শুধু সচিবদের কিংবা অন্য পেশার সমান বেতন ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার সাথে তুলনা অতিরঞ্জিত দাবি কিনা সেটা নানা মহলে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।

প্রমোশনের প্রশ্ন, ডিপার্টমেন্টে প্রফেসরের সংখ্যা লেকচাররার থেকে চারগুণ থাকার প্রশ্ন, জয়েন করে তিন বছর পরেই এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হয়ে যাওয়ার প্রশ্ন (কোনো স্বীকৃত গবেষণা কিংবা কিছু না থাকলেও), তার কয়েক বছর পর এসোশিয়েট প্রফেসর (তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম সব শর্ত পূরণ করেছেন)। তারপর কয়েকবছর ঘুরতেই প্রফেসর। চাকরিতে লেকচারার হিসাবে ঢুকে ১২-১৫ বছরের মধ্যে চাকরির সর্বোচ্চ ধাপ প্রফেসর হয়ে যাওয়া (আর কোনো চাকরি আছে যেখানে ১২-১৫ বছরের মধ্যে সেই চাকরির সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছানো যায়?)। মেধার প্রতিযোগিতা চাকরির বয়স দিয়ে হয় না, মেনে নিলাম। কিন্তু সেই মেধার প্রতিযোগিতাই হচ্ছে সেই পদ্ধতির শুদ্ধতা নিশ্চিত করার আন্দোলন আগে না করে শুধু বেতন ভাতা ও সুযোগ সুবিধার আন্দোলন বার্তা দিবে-শিক্ষকরা আগার টাও খেতে চাচ্ছে, তলার টাও খেতে চাচ্ছে।

আপনারা যারা স্বায়ত্বশাসিত তারা আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রমোশন, নিয়োগ, ডিপার্টমেন্টে প্রফেসর, লেকচারের রেশিও, এসোসিয়ট প্রফেসরের রেশিও এইগুলো স্ট্রিক্টলি ফলো করেন। প্রফেসর হওয়ার যোগ্যতা যেন পৃথিবীর সব দেশেই প্রফেসর হওয়ার সমতুল্য হয় সেটা নিশ্চিত করেন তারপর বেতন ভাতা সুযোগ সুবিধার প্রশ্ন বাকি সবাই মিলেই তুলবে। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর, শিক্ষকরা পিতার সমতুল্য,শিক্ষকরা দামি কিছু কিনতে পারে না, সাদাসিধা লাইফ লিড করে-এসব ইমোশনাল কথা বার্তা অতি ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে গেছে। পোভার্টি পর্ণের মতো দেখায়। পুঁজিবাদি এই দুনিয়ায় কোয়ালিটি আর মনিটরিং এনশিউর করেন, উপযুক্ত অর্থ প্রাপ্তি তখন দাবি নয়, অধিকার হবে। তুলনার প্রশ্ন আসলেই কয়েকজন বিখ্যাত প্রফেসরের উদাহরণ দিয়ে, সেই চাদরে বাকি সব অযোগ্য প্রফেসরদের ঢেকে ফেলা শুধু অশ্লীল নয়, বরং অসততা। ব্যক্তির অর্জন ধরে কথা বলেন, গড় করে জিডিপি ক্যালকুলেশনের মতো ধাপ্পাবাজি করবেন না। 

একজন প্রফেসর কয়টা কোয়ালিটি জার্নালে পাবলিশ করেছে, সেগুলোর মান-সহ  বলেন। আমি প্রফেসর অমুক, আমি প্রফেসর তমুক এভাবে বলে যত ভাব আর অহংকার আপনার থাকুক না কেন, আপামর জনসাধারণের কাছে এখন প্রফেসর শব্দটার গুরুত্ব কমে গেছে। আমার সমবয়সী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো প্রায় সবাই প্রফেসর, কিন্তু আমার সমবয়সী অন্যান্য পেশাদাররা এখনো মিড ক্যারিয়ার। একজন পেশার সর্বোচ্চ পদে পৌঁছতেই পারে। কিন্তু দু’একজন বাদে বেশির ভাগ প্রফেসরকেই আমি খুব অনাগ্রহের সাথেই প্রফেসর বলি। ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নয়, বরং এই প্রফেসরশিপ সস্তা হয়ে যাওয়ায় কমে মূল্যের  জিনিসের  প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার ফল এটা। দাবি শুরু হোক, আত্মসমালোচনার ডাক দিয়ে।

লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান, ইউনিভার্সিটি অব মেই, যুক্তরাষ্ট্র

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়