শিরোনাম
◈ বড়দিন উপলক্ষে নৌভ্রমণ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ৩৮ জনের প্রাণহানি ◈ বিএনপি অফিসে আ.লীগের হামলা, আহত ১০ ◈ ২৫ ক্যাডারের নতুন সংগঠন ◈ চলতি মাসের ২১ দিনে এক টাকাও রেমিট্যান্স আসেনি যে ১০ ব্যাংকে ◈ আত্মসমর্পন করে আদালতে শেখ হাসিনার নামে আওয়ামী নেতাদের শ্লোগান (ভিডিও) ◈ ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে দেশে ফিরলো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ◈ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগের পর টিউলিপকে সমর্থন করছেন স্টারমার ◈ সারজিস আলম বললেন এই আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক, চিকিৎসকদের সঙ্গে আমরাই রাজপথে নামব (ভিডিও) ◈ পুলিশ নাগরিকদের সেবার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ডিএমপি  ◈ কারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বা যোগ্য, তা নির্ধারণ করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব: বদিউল আলম মজুমদার

প্রকাশিত : ০৪ জুলাই, ২০২৪, ০১:২১ রাত
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সকল সমস্যা কেন শিক্ষাকেন্দ্রিক?

ড. কামরুল হাসান মামুন

ড. কামরুল হাসান মামুন: বাংলাদেশটা কেমন হবে তা নির্ভর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের ওপর। একাত্তরের পর থেকেই দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান দেশের মানুষের মান হাত ধরাধরি করে নামছে। এর বড় কারণ আমাদের অযোগ্য আর স্বার্থপর নেতৃত্ব। আজকের বাংলাদেশকেই দেখুন। একটু বিশ্লেষণ করুন। সকল অরাজগতা, সকল ষড়যন্ত্র, সকল সমস্যা শিক্ষা কেন্দ্রিক। [১] শিক্ষায় জিডিপির ৬ শতাংশ এর জায়গায় মাত্র ১.৬৯ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছে। [২] কোটা সিস্টেম একটা মীমাংসিত বিষয়। সেটাকে কোর্টের কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার করার মতো মীমাংসিত বিষয়কে আবার ইস্যু বানিয়ে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। [৩] মূলধারার শিক্ষাকে কারিগরি ধারায় নিতে স্কুল-কলেজে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছে। [৪] বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য ঙইঊ নামক আরেক শিক্ষা বিধ্বংসী কারিকুলাম চালু করছে যেটা নিয়ে কেউ মুখ খুলছে না। [৫]  স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতন চীন মালয়েশিয়া দক্ষিণ কোরিয়া জাপান বাদ দিলাম খোদ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। [৬] বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মোটামোটি সন্তোষজনক একটা পেনশন স্কিম ছিল, সেটা বদলে নিম্নমানের নতুন একটা পেনশন স্কিম চালু করে শিক্ষকতা পেশাকে আরেকদফা অবনমন করার চেষ্টা হচ্ছে। [৭] বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যবস্থা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানবেতর। একটি স্বাধীন দেশের সরকার তার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের ছাত্রছাত্রীদের কী করে এমন করে রাখে? সমস্যা হলো যারা কোটার বিপক্ষে, যারা মানবেতরভাবে হলে থাকে তারাই শিক্ষায় ১.৬৯ শতাংশ বরাদ্দ পেয়ে আনন্দ মিছিল করে। সরকারকে বাহবা দেয়। শিক্ষকরাও একই। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা আসলে আমরা বায়ান্ন, উনসত্তর এবং একাত্তরের কথা বলি। সেই সময়ে একটি পরাধীন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের যেমন ভূমিকা থাকার কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই ভূমিকা সুচারুভারেব পালন করেছে। কিন্তু একাত্তর অর্থাৎ স্বাধীনতার পর একটি স্বাধীন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় যেমন হওয়ার কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তেমন হতে পারেনি বা হতে দেওয়া হয়নি। একাত্তরের পরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বায়নের পথে এগিয়ে গিয়ে বিশ্ব বিদ্যালয় হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এবং এই ব্যর্থতার হার সময়ের সাথে কেবল বেড়েছেই। ১৯২৬ কিংবা ২৭ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদের যখন বিজ্ঞাপন হয় তখন বেতনের হার ছিল ১০০০-১৮০০ রুপি (সূত্র : রমেশ চন্দ্র মজুমদারের ‘জীবনের স্মৃতিদ্বীপে’) তখন অধ্যাপক বেতন পেতেন ১২০০ রুপি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক তখন বেতন পেতেন ৮০০-১০০০ রুপি। অর্থাৎ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক তখন প্রায় ৪০০ রুপি বেশি বেতন পেতেন। যে বেতন দিয়ে ৪৫০ মন চাল কিনতে পারতো। বর্তমানে একজন অধ্যাপকের পূর্ণ বেতন দিয়ে বড়জোর ৪০ মন চাল কিনতে পারে। ১৯২৬ কিংবা ২৭ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে প্রমোশনের জন্য একাধিক স্তর ছিল।

সেই সময় শুরুতেই প্রাথমিক একটা শর্টলিস্ট করা হতো আর সেই শর্ট লিস্টেড দরখাস্তগুলো পাঠানো হতো বিশ্বসেরা গবেষকদের কাছে। যেমন সত্যেন বোস ও দেবেন্দ্রমোহন বসুর দরখাস্ত আর্নল্ড সমারফিল্ডের কাছে পাঠানো হয়েছিল যার ৯ জন ছাত্র নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক করে ফেলা হয়েছে। যেখানে একজন ভিসি শিক্ষক নিয়োগের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। অতি রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কারণে শিক্ষকরা এখন আর কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না। তারা শিক্ষা ও গবেষণার চেয়েও বেশি সময় রাজনীতির পেছনে ব্যয় করেন। কারণ সবাই চায় পরবর্তীতে বড় পদে যেতে। তাই সবার মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে, যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তাহলে ভবিষ্যতে ভিসি প্রোভিসি ইত্যাদি হতে পারবে না। সরকার শিক্ষকদেরকে শিক্ষা-গবেষণার চেয়ে রাজনৈতিক সাইডে বেশি লেলিয়ে দিয়েছে।

এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। এখনতো আমরা পরাধীন না। আমাদেরকে ব্রিটিশরা শাসন করছে না। আমাদেরকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা শোষণ করছে না। এখন আমাদের আপন মানুষের দ্বারা শাসিত ও শোষিত হচ্ছি। প্রতিনিয়ত আমাদেরকে উন্নয়নের বুলি শুনিয়ে তার বিপরীত কাজ হচ্ছে। একটি বিষয় লক্ষণীয়। ছাত্র শিক্ষক যারাই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তারাই প্রধানমন্ত্রীকে তেলিয়ে প্রশংসা ও তোষামোদি করে অন্যদের ষড়যন্ত্রের ধোঁয়া তুলে আন্দোলন দাবি করেন। বলতে চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রীকে নাকি ভুল বোঝানো হয়েছে। এতে কি উনাকে আন্ডার এস্টিমেট করা হলো না? উনি কচি শিশু যে উনাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে খারাপ কাজ করিয়ে নেওয়া যাবে? লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়