শিরোনাম
◈ বড়দিন উপলক্ষে নৌভ্রমণ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ৩৮ জনের প্রাণহানি ◈ বিএনপি অফিসে আ.লীগের হামলা, আহত ১০ ◈ ২৫ ক্যাডারের নতুন সংগঠন ◈ চলতি মাসের ২১ দিনে এক টাকাও রেমিট্যান্স আসেনি যে ১০ ব্যাংকে ◈ আত্মসমর্পন করে আদালতে শেখ হাসিনার নামে আওয়ামী নেতাদের শ্লোগান (ভিডিও) ◈ ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে দেশে ফিরলো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ◈ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগের পর টিউলিপকে সমর্থন করছেন স্টারমার ◈ সারজিস আলম বললেন এই আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক, চিকিৎসকদের সঙ্গে আমরাই রাজপথে নামব (ভিডিও) ◈ পুলিশ নাগরিকদের সেবার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ডিএমপি  ◈ কারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বা যোগ্য, তা নির্ধারণ করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব: বদিউল আলম মজুমদার

প্রকাশিত : ০৪ জুলাই, ২০২৪, ০১:১৯ রাত
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কখন আবার সৌন্দর্য সর্বজনীন হয়ে উঠবে?

আহসান হাবিব

আহসান হাবিব: [১] গোলাপ সুন্দরও নয়, অসুন্দরও নয়। ইনফ্যাক্ট মহাবিশ্বের কোনকিছুই এই অভিধার আওতায় পড়ে না। কিন্তু আমরা গোলাপকে সুন্দর বলি। কেন? আসলে সুন্দর অসুন্দরের ধারণাটি প্রাকৃতিক নয়, সাংস্কৃতিক। আর সংস্কৃতি কেবল আছে মানুষের। সংস্কৃতির উৎস শ্রমজাত নির্মাণ। এই নির্মাণ করতে গিয়েই মানুষের চেতনায় বিবিধ ধারণার জন্ম হয়। সৌন্দর্য তাদেরই একটা। আর মানুষের জ্ঞান চর্চার একটি প্রধান সূচক হলো শ্রেণিকরণ। এর বিজ্ঞানভিত্তি আমাদের দিয়েছে বস্তুকে পৃথক পৃথক চিনবার পদ্ধতি  যা নব নব নির্মাণের ইঙ্গিত হিসেবে কাজ করেছে। [২] আমার মনে হয় সৌন্দর্যের ধারণাটিও বিবর্তনের পথ ধরে চলে। প্রাণের একটা সহজাত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করা। এটা কোথা থেকে জন্ম নেয় ভাবতে গেলে বিবর্তনতত্ত্বের দিকে তাকালে এর উত্তরটা আমরা পাই আর সেটা হলো যা আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে তা টিকে থাকে। প্রাণের অন্তর্গত চেতনাই হচ্ছে নিজেকে টিকিয়ে রাখা। প্রকৃতি যখন দেখে তার বস্তুসকল ঐসব বিষয়ে আকৃষ্ট হচ্ছে, তখন তা তার টিকে থাকার পক্ষে তাকে অভিযোজিত করে ফেলে এবং তা তার জেনেটিক্সে যুক্ত হয়ে পড়ে। প্রকৃতি সেসব গ্রহণ করে না অভিযোজন করার ক্ষমতা রাখে না। সৌন্দর্য তাই একপ্রকার ক্ষমতা যা তার টিকে থাকার শর্ত তৈরি করে। পৃথিবীর বাগানে যত ফুল ফুটে আছে, সব ফুলই সুন্দর। এটা যেমন প্রকৃতির দিক থেকে সত্য, মানুষের দিক থেকেও। তাহলে প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি পৃথিবীর সব মানুষই কি সুন্দর? 

[৩] মনে হয় না। কারণ ততদিনে মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্যচেতনা থেকে বিযুক্ত হয়ে নিজস্ব সৌন্দর্যচেতনা গড়ে তুলেছে। ফলে সমাজিবিকাশের সংগে সংগে এই চেতনা বদলে যেতে থাকে। ব্যক্তি যখন স্বাধীন হয়ে উঠলো, নিজের শ্রম বিক্রি করার অধিকারপ্রাপ্ত হলো, তখন থেকেই এই চেতনা আরো সুদৃঢ় হলো। এই চেতনার মূলেও আছে নিজেদের টিকে থাকার প্রবলেচ্ছা। সৌন্দর্য এখন তাই সার্বজনীন নয়, ব্যক্তিক। আমি যা পছন্দ করি, অন্যজন তা করে না। এই যে পৃথক চেতনার জন্ম হলো, এর পেছনে মূল প্রণোদনা হচ্ছে সাংস্কৃতিক বোধ। এই সংস্কৃতি আর কিছু নয় তার নিজস্ব শ্রমফল। সমাজে দেখা যায় প্রতিটি মানুষ কোন না কোন শ্রমে নিযুক্ত, সেই শ্রম যা উৎপাদন বা নির্মাণ করে, তার আধারের মধ্যেই থেকে গেছে তার সৌন্দর্যের রূপটি। আর এর ফলে সে যা বিনিময়মূল্য পায় বা মজুরি পায়, তা দিয়ে যখন সে নিজের জীবন নির্বাহ করে, তা দিয়ে সমাজের অন্য নানা অংশের সঙ্গে তার বোধের প্রকাশ ভিন্ন হয়ে পড়ে। এটা আর কিছু নয় বৈষম্যের ফল।

তাহলে দেখা যাচ্ছে সৌন্দর্যবোধের পার্থক্যের পেছনে আছে বৈষম্য নামের একটি সমাজিক প্রপঞ্চের। তখন গোলাপের দিকে চেয়ে রবীন্দ্রনাথের মত বলে উঠতে পারে না গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম সুন্দর, সুন্দর হল সে বরং তার কাছে সাদা রঙের ভাতকে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা সুন্দর ফুল। সৌন্দর্য যেহেতু একটা ডিজাইন, কে তাকে নির্মাণ করে? মানুষের শ্রম। কিন্তু যাদের শ্রমে এই সৌন্দর্য নির্মিত হয়, তারা এসব ভোগ করতে পারে না। আমাদের সংসদ ভবনটি কত সুন্দর কিন্তু এর যারা নির্মাতা, সেই শ্রমিকদের একজনও তার ভেতরে গিয়ে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে না, বরং করে তারাই যারা কস্মিনকালেও এর একটি ইটও ছুঁয়ে দেখেনি। সৌন্দর্যচেতনা উপভোগের সঙ্গে যুক্ত। তাই এটা এতো বৈষম্যপূর্ণ। [৪] কখন আবার সৌন্দর্য সর্বজনীন হয়ে উঠবে? যেদিন সমাজটা বৈষম্যহীন। ভোগ, উপভোগ হবে সকলের জন্য একই। কিন্তু মানবসমাজ কি কখনো দেখবে এমন সমাজ? দেখবে, কারণ সমাজিবিকাশের ধারা সেদিকেই বহমান। তখন আবার মানুষ প্রকৃতির সন্তান হয়ে উঠবে। লেখক: কথাসাহিত্যিক

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়