শিরোনাম
◈ তারেক রহমানকে নিয়ে দ্য উইকের কাভার স্টোরি ‘নিয়তির সন্তান’ ◈ ২৪ ঘণ্টায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১৬৪২ জন গ্রেপ্তার ◈ প্রবাসে বিবস্ত্র ও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, মূলহোতা গ্রেফতার ◈ রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ ৪ দফা দাবিতে শাহবাগে শহিদি সমাবেশ শুরু ◈ কাশ্মীরে হামলা: কেন পহেলগামে সেনা ছিল না, ভারত সরকার যা বলছে ◈ স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে সক্ষমতা প্রমাণ করুণ, ইসিকে জামায়াত আমির ◈ দেশের ১৪ জেলায় তাপপ্রবাহ, যে বার্তা দিল অধিদপ্তর ◈ বড় সুখবর এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য, বাড়ছে ভাতা ◈ দুবাইতে জনপ্রিয় হচ্ছে মাসিক কিস্তিতে স্বর্ণ কেনার পদ্ধতি

প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:০৮ দুপুর
আপডেট : ২৫ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

বাবা ও এপিএস কাণ্ডে আলোচনায় আসিফ মাহমুদ, কী বলছেন উপদেষ্টা?

এল আর বাদল: আলোচনা-সমালোচনার মুখে বাতিল করা হয়েছে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা বিল্লাল হোসেনের ঠিকাদারি লাইসেন্স। উপদেষ্টা বিবিসির কাছে দাবি করেছেন, তার বাবা সরল বিশ্বাসে ভুল করেছেন।

এর জন্য সামাজিক মাধ্যমে ক্ষমাও চেয়েছেন উপদেষ্টা। ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারা বাবার লাইসেন্স প্রাপ্তির বিষয়টির।

কিন্তু বিষয়টি আলোচনায় না এলে একজন উপদেষ্টার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিলের বিষয় আসতো কি না, এমন প্রশ্ন তুলছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ। --- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

এদিকে, আসিফ মাহমুদ বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেছেন, তার বাবা নিজে ঠিকাদারি কাজ বা ব্যবসা করার জন্য ওই লাইসেন্স করেননি। স্থানীয় একজন ঠিকাদার নিজের সুবিধার জন্য তাকে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছিলেন।

পুরো প্রসেসটা করেছেন ওই ঠিকাদার। আব্বু শুধু সেখানে স্বাক্ষর করেছেন এবং ছবিসহ যে ইনফরমেশন দেয়ার সেগুলো দিয়েছেন," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. মাহমুদ।

স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করতে সুবিধা হবে, এভাবেও বুঝিয়েছিলেন ওই ঠিকাদার। তার কথায় আব্বু সরল বিশ্বাসে লাইসেন্সটা করেছেন আরকি" যোগ করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।

বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তির প্রভাব খাটিয়ে তার আত্মীয়-স্বজন বা ঘনিষ্ঠদের সুযোগ- সুবিধা গ্রহণের খবর বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এলেও তার জন্য ক্ষমা চাওয়ার নজির তেমন নেই বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।

সেই বিবেচনায় আসিফ মাহমুদের দিক থেকে 'ভুল সংশোধনের চেষ্টার' প্রশংসা যেমন আছে, তেমনি কিছু প্রশ্নও সামনে এসেছে।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ - টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যেভাবে উপদেষ্টা পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটি ইতিবাচক।

তবে, সেই অর্থে ব্যাপক আলোচনা তৈরি না হলে কী হতো, স্বার্থের দ্বন্দ্বের প্রশ্ন এড়িয়ে উপদেষ্টার বাবা সুবিধা নিয়ে যেতেন কি না, সেই প্রশ্নও থেকে যায়," যোগ করেন মি. ইফতেখারুজ্জামান।

এর আগে আসিফ মাহমুদের বন্ধু ও সহকারী একান্ত সচিব মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমেও নানা আলোচনা হয়।

সেই আলোচনার মধ্যেই প্রজ্ঞাপন দিয়ে তাকে অব্যাহতির কথা জানানো হয়। তবে, দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে এই অব্যাহতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন মি. মাহমুদ।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, তার এপিএস স্থায়ী চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বর্তমান পদ থেকে পদত্যাগ করার আবেদন আগেই করেছিলেন। সেটিই মঞ্জুর করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেনও একই রকম দাবি করেছেন। 

সরল বিশ্বাসের ভুল ----

আসিফ মাহমুদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে যেসব ছবি শেয়ার করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, তার বাবা বিল্লাল হোসেনের প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজকে গত মার্চ মাসের ১৬ তারিখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।

এক মাসের বেশি সময় পর ২৪শে এপ্রিল এ বিষয়ে ফেসবুক পোস্ট দেন মি. মাহমুদ। আসিফ মাহমুদ ফেসবুক পোস্টের শুরুতেই তার বাবার ভুলের জন্য "ক্ষমা প্রার্থনা" করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা লেখেন, 'বাবা হয়তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয়টি বুঝতে পারেননি, সেজন্য বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।'

এই লাইসেন্স ব্যবহার করে মধ্যবর্তী সময়ে কোনো কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি বলেও ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি। পরে বিবিসি বাংলাকে মি. মাহমুদ বলেন, তার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স পাওয়ার বিষয়টি তার জানা ছিল না।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বাবা হওয়ার কারণে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন কি না- এ ব্যাপারেও কি বিল্লাল হোসেন সচেতন ছিলেন না? শুধু সরল বিশ্বাসে ভর করেই তিনি এই লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছিলেন?

বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা দাবি করেন, তার পরিচয় ব্যবহার করে এই লাইসেন্স নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, আব্বু তো আর কোনো ঠিকাদারি বিজনেস করবে না। ঠিকাদারি করতে যে অবকাঠামো বা আর্থিক সক্ষমতা লাগে তাও তার নেই।

আব্বুর নামে লাইসেন্স করে ওই ঠিকাদার ব্যবসা করতে চেয়েছেন," যোগ করেন আসিফ মাহমুদ।
কিন্তু, অন্যকে সুবিধা পাইয়ে দিতে তার বাবা রাজি হয়েছিলেন কেন?

মাহমুদ বলছেন, "স্থানীয়ভাবে যেসব উন্নয়ন কাজ হয় সেখানে অনেক সময় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনা ঘটে। ওই লোক আব্বুকে বলেছিলেন যে, তার (বিল্লাল হোসেন) নামে একটা লাইসেন্স থাকলে সেসব উন্নয়ন কাজ করতে সুবিধা হবে।

সেকারণে, সরল বিশ্বাসেই তার বাবা লাইসেন্স করেছিলেন বলে দাবি উপদেষ্টার।

কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট' জানার পরেও যে কর্মকর্তারা লাইসেন্স দিয়েছেন তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি তো আমাকে অবগত করতে পারতেন কেন করেননি? উনি অতটা ভাবেন নাই বা আমাকেও ভয়ে জিজ্ঞেস করেননি।

এই 'ভয়' এর পেছনে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ক্ষমতার অপব্যবহার দায়ী বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।

পুরো সিস্টেমটাই এমন হয়ে গেছে। ক্ষমতাধরদের আত্মীয়-স্বজনদের সুবিধা দিতে দিতে আমলা বা ইঞ্জিনিয়ারদের মাইন্ডসেটটাও তেমন হয়ে গেছে, যোগ করেন তিনি। আরো বলেন, এসব ঘটনার তদন্ত হওয়া দরকার।

এপিএসকে নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা ----

দায়িত্ব নেওয়ার পর বন্ধু মোয়াজ্জেম হোসেনকে 'বিশ্বস্ত হিসেবে' সহকারী একান্ত সচিব বা এপিএস পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ।

তার বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হয় সম্প্রতি। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগের সংবাদ প্রকাশ করে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

তাদেরকে কেন্দ্র করে ওঠা অভিযোগগুলোর বিষয়ে আইন মেনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

যদিও, মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতির পেছনে এসব অভিযোগের কোনো ভূমিকা নেই বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।

ওর আগে থেকেই বিসিএসকেন্দ্রিক চিন্তা ছিল। স্থায়ী চাকরির সুযোগ আসলে অস্থায়ী চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলছিল, বলেন মি. মাহমুদ।

তাদের অনেক ধরনের প্রতিপক্ষ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "পদত্যাগ করলে নেগেটিভ ক্যাম্পেইন হতে পারে, এ ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছিলাম। তারপরও মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই দুদককে ইনভলভ্ করবো।

টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংস্কারের ঘোষণা ও নতুনত্বের স্লোগান দিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করা বর্তমান সরকার গঠনের একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে।

যাদের হাতে ক্ষমতা এসেছে, তারা সেই ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যদি সতর্ক না হন, তাহলে পরিবর্তন আনা সহজ হবে না, যোগ করেন তিনি।

মি. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আগেও ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের 'ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের' ফলে রাজনীতি কলুষিত হয়েছে এবং সুশাসন গড়ে ওঠেনি।

আইন বহির্ভূত চর্চাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হলে রাজনীতি বা শাসন কাঠামোর সংস্কার কার্যকর হবেনা, বলেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়