সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙার কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পরে। ভিডিওতে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের কয়েকটি অংশের ইট খুলে ফেলা হয়েছে, স্তম্ভের ওপর ছড়িয়ে রয়েছে ভাঙা অংশ। কিছু অংশের প্লাস্টারও খসে পড়েছে। এমন ভিডিও দেখে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে জনমনে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙা হচ্ছে না। এখানে চলছে সংস্কার কার্যক্রম।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে চলছে ভাঙচুরের কাজ। স্মৃতিসৌধের মূল স্ট্রাকচার থেকে ইট খুলে ফেলা হচ্ছে। নতুন করে লাগানোর জন্য এনে রাখা হয়েছে নতুন ইটও। এসময় সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, কেন ভাঙা হচ্ছে তা তারা জানতেন না। কেউ আবার বলছেন, এটা ভাঙার কোনও প্রয়োজন ছিল না।
এমনই একজন মো. শামীম। তিনি নিয়মিত বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় জগিং করতে আসেন। তার বাসা এই এলাকাতেই। তিনি বলেন, হঠাৎ দেখছি, এটা ভাঙা হচ্ছে। তখন আগ্রহবশত জানতে চাই, কেন ভাঙা হচ্ছে। এখানে যারা কাজ করেন, তারা আমাকে বলেছেন— এটার ইটের টেম্পার নাকি চলে গেছে। কিন্তু আমি ভাঙার পর দেখলাম— এটার ইটের যে অবস্থা তা মিনিমাম আরও ১০০ বছর টিকবে।
এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্মৃতিসৌধ একটা সলিড জিনিস ছিল। শুধু শুধু এটা ভাঙা হচ্ছে। মেরামতের মতো কোনও অবস্থা এটার হয়নি। অযথাই সরকারের টাকা খরচ করা হচ্ছে।
এই এলাকার আরেক বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, হঠাৎ কেন এই স্মৃতিসৌধ ভাঙা হচ্ছে জানার ইচ্ছা হলো। মূলত দেশের পরিস্থিতির কারণেই জানার আগ্রহ বেশি ছিল। তারপর এখানে যারা কাজ করেন, তারা জানান, এটা নাকি ঠিকঠাক করা হচ্ছে।
এদিকে স্মৃতিসৌধের সংস্কার কাজে কর্মরত সাইট ইঞ্জিনিয়ার আতোয়ার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা ভাঙা হচ্ছে না। প্রতিবছর রঙ করা হয়। খরচ হতেই থাকে, এজন্য এটার ইটগুলো খুলে নতুন ইট লাগানো হচ্ছে। ডিজাইনে কোনও পরিবর্তন হবে না। আগে যা ছিল সেটাই থাকবে। শুধু ইট নতুন হবে। আমাদের ইট গোনা আছে, ড্রয়িংও আছে। সেই অনুযায়ী কাজ চলছে।’
কেন নতুন ইট লাগানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই স্মৃতিসৌধের সামনের প্লাজায় বৃষ্টি আসলে পানি জমে যায়। এটার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক নেই। সেটা ঠিক করে নতুন করে ইট লাগানো হবে। আর প্লাজার ফ্লোরে যে টাইলস আছে, তার বদলে মার্বেল লাগানো হবে, যাতে টেকসই হয়। এখন ফ্লোর যদি নতুন হয়, আর স্মৃতিসৌধ যদি রঙ করা হয় — তাহলে দেখতে খারাপ লাগবে। তাই ওটার ইটও নতুন লাগানো হচ্ছে। এখানে ডিজাইন কোনোভাবেই ভায়োলেট হবে না। সেটা সম্ভবও না।’
আতোয়ার বলেন, ‘এখানে (স্মৃতিসৌধ) লাগানো ইটের টেম্পারও চলে গেছে অনেকটা। হয়তো এভাবে থাকলে আরও ২০ বছর চলে যেতো। কিন্তু প্রতি বছর এটা রঙ করাতে ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়। সংস্কারের পরসেটা আর হবে না আশা করি।’
মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের জায়গাটা মূলত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি। কিন্তু পাশের কবরস্থান সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এখন সংস্কারের কাজ পিডব্লিওডি (গণপূর্ত ) থেকেই করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
দেখা যায়, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকার ভেতরে একটি ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকৌশলী আতোয়ার রহমান বলেন, ‘এটা মূলত মাল্টিপারপাস ভবন হবে। যখন প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি এখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন তখন তারা এখানে বসবেন। এটার মধ্যে ছোট নামাজের জায়গা থাকবে। ভবনটি অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা হবে না।’
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙা হচ্ছে না, বরং সংস্কার করা হচ্ছে জানিয়ে গণপূর্ত অধিদফতর মিরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ আহসান বলেন, ‘এটা একটা ন্যাশনাল মনুমেন্ট, এটা ভেঙে ফেলার কোনও সুযোগ নেই। এটার ব্যবহারজনিত যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, যেমন- ইটের রঙ নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে ভেঙে গিয়েছে, নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা একই জিনিস আবার নির্মাণ করবো। আপনারা দেখেবেন, মূল যে স্ট্রাকচার সেটা কিন্তু আমরা ভাঙছি না।’ উৎস: বাংলাট্রিবিউন।