মনজুর এ আজিজ : আসন্ন এবারের হজে সৌদিতে এখনও ৫০ শতাংশ হাজির বাড়ি ভাড়া নিশ্চিত হয়নি। বাড়ি ভাড়া করতে আর মাত্র একদিন সময় হাতে থাকায় অনেকের হজযাত্রা অনিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ সৌদি আরবের নির্দেশনা রয়েছে, ২৫ মার্চের মধ্যে মক্কা-মদিনায় হাজিদের বাড়ি ভাড়ার চুক্তি করতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে চুক্তি করতে না করতে পারলে হাজিদের ভিসা প্রিন্ট হবে না এবং হজযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
জানা যায়, সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের ‘রোড টু নুসুক প্রজেক্ট’-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী হজ কার্যক্রমের বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য চুক্তি ২৫ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। সৌদি অথরিটি থেকে কয়েক দফায় বলা হয়েছে, এর পরে চুক্তি করার জন্য আর কোনো অপশন খোলা থাকবে না এবং দরকার হলে হাজি না আসতে পারলেও তাদের কোনো কিছু করার থাকবে না। সৌদি আরবে হাজিদের সেবাদাতা বিভিন্ন কোম্পানি এবং এজেন্সির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ধর্ম মন্ত্রণায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্রুততম সময়ে হজের প্রস্তুতি গ্রহণ করায় বাংলাদেশ সৌদি সরকার কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এবার মনে হয়, সেই প্রশংসা আর ধরে রাখা যাবে না। এজেন্সিগুলোকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তারা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে কোনো কাজ করেনি। নির্দিষ্ট তারিখের পর হজের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে আর সময় দেওয়া হবে না মর্মে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন সৌদি কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বাড়ি-হোটেল ভাড়া ও পরিবহন চুক্তি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পাদন করতে বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ১৩ মার্চ এক চিঠিতে এজেন্সিগুলোকে সতর্ক করা হয়। তাগাদাপত্রে বলা হয়, সুষ্ঠুভাবে হজপালনের নিমিত্তে সৌদি আরবে সেবা প্রদানকারী সব কোম্পানি ও সংস্থার সঙ্গে বাড়ি অথবা হোটেল ভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদন বিষয়ে সৌদি সরকারের পক্ষ হতে ২৫ মার্চ তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। ফলে হাজিদের বাড়ি-হোটেল ভাড়া ও পরিবহন চুক্তি আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে আবশ্যিকভাবে সম্পাদনের জন্য অনুরোধ করা হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হলে দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিকে বহন করতে হবে।
জানা গেছে, অন্য বছরের তুলনায় এবার সৌদি আরব বেশ আগে থেকে শুরু করেছে চলতি বছরের হজের প্রস্তুতি। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ধাপে ধাপে নানা কাজ সম্পন্ন করতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে রয়েছে সৌদি সরকারের কড়া নির্দেশনা। নির্দেশনা সত্ত্বেও বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়ার কাজ সম্পন্ন করেনি। শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনার নিবন্ধিত ৫ হাজার ২০০ হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সৌদি সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে মক্কা-মদিনায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক।
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৫ হাজার ২০০ জন। আর বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ৮১ হাজার ৯০০। এই বেসরকারি হাজিদের মাত্র ৫০ শতাংশ হজযাত্রীর বাড়িভাড়া ও অন্যান্য চুক্তি নিশ্চিত হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মক্কায় অবস্থানরত বেসরকারি হজ এজেন্সির একাধিক মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হজ একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় বিষয়। বাংলাদেশ এবং মুসলিম দেশসমূহের তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনায় হজ পরিচালিত হয়। স্বাগতিক দেশ হিসেবে নীতি নির্ধারণ ও সার্বিক বিষয় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সৌদি আরব মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
কিন্তু সৌদি আরব এবার আগে থেকেই হজের কাজ শুরু করায়, আমরা তাদের কাজের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না। আমাদের অনেকগুলো এজেন্সি মিলে একটি লীড এজেন্সি নির্ধারণ করতে হয়েছে, এখানে নানা প্যাকেজের যাত্রী আছে, সর্বশেষ হজে বয়স নির্ধারণে এ জটিলতা আরও বেড়েছে।
কেন পারছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের দেশের মানুষ হজের প্রস্তুতি শুরু করে বিলম্বে। আবার একসঙ্গে টাকাও পরিশোধ করে না। বেশিরভাগ হাজি বয়স্ক, অন্যদিকে সৌদি আরবের নিত্য-নতুন আইন বুঝতে বুঝতে সময় চলে যায়। বাড়ি ভাড়া করার জন্য হজ মিশন, দূতাবাস ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তেমন কোনো সহযোগিতা মিলছে না।
তারা বলেন, হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সির প্রতিনিধিদের সৌদিতে যেতে হয়। আগে প্রতিনিধিদের সৌদি যেতে মাল্টিপল ভিজিট ভিসা দেওয়া হতো, গত দুই বছর ধরে এটা বন্ধ। বার বার বলার পরও ধর্ম মন্ত্রণালয় হজ এজেন্সির প্রতিনিধিদের ভিজিট ভিসার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ। তারা সৌদি আরবে না গেলে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এজেন্সির প্রতিনিধি ছাড়া বাড়ি ভাড়া করা যাবে না এবং বাড়ি ভাড়া করা না গেলে হজ ভিসা করা যাবে না।
এদিকে হজ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা এজেন্সির পক্ষ থেকে উমরা ভিসায় সৌদি আরব গিয়ে বাড়ি ভাড়ার সমস্যা সমাধান করার পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে হাবের এক নেতা বলেন, ওই কর্মকর্তা হয়তো জানেন না যে, সৌদি আরব উমরা ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি উমরা ভিসায় সৌদি আরবে যারা অবস্থান করছেন তাদেরও বের হয়ে আসতে হবে নির্দিষ্ট কয়েক দিনের মধ্যে।
গত হজের পরেই সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয় এবারের হজের রোডম্যাপ ঘোষণা করে। এছাড়া বাংলাদেশি এজেন্সিদের নিয়ে আয়োজিত সভায় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, মাল্টিপল ভিসা আর দেওয়া হবে না। সৌদি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অনলাইনে বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য চলতি বছর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হজ হতে পারে আগামী ৫ জুন। এ বছর হজ ফ্লাইট শুরু হতে পারে ২৯ এপ্রিল থেকে।