শিরোনাম
◈ অর্থসহায়তা আবেদনে সাড়া নেই, রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে ◈ যেদিকে তাকাই সেদিকেই সিন্ডিকেট: লুৎফে সিদ্দিকী ◈ হামজায় মুগ্ধ দর্শকরা, গোল মিসের মহড়ায় ভারতের বিরুদ্ধে ড্র করলো বাংলাদেশ  ◈ উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে আনা হলো তামিম ইকবালকে ◈ আর্জেন্টিনাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেন ব্রাজিলের রাফিনিয়া ◈ হবিগঞ্জে ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে চাঁদা দাবি, ভ্যাট কর্মকর্তাকে গণধোলাই ◈ ফরিদপুরে চিকিৎসকের ওপর হামলার জেরে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত ◈ ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে বর্ণিল সাজে কুয়াকাটা ◈ বাংলাদেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: সেনাপ্রধান ◈ সুযোগ নষ্টের মহড়ায় প্রথমার্ধে গোলশূন্য বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ২৩ মার্চ, ২০২৫, ০১:০৮ রাত
আপডেট : ২৫ মার্চ, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বেইজিংয়ের সঙ্গে আরও গভীর অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিকে নজর ঢাকার

বাসস।।  প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক সরকারি সফরে এই সপ্তাহে বেইজিং যাচ্ছেন। তাঁর সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে আরও গভীর অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিকে নজর দিচ্ছে। এই সফর দুই দেশের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আঞ্চলিক পরিস্থিতির পরিবর্তন এবং ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে এই সফর ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার, চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এবং স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও পানি ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।

সম্প্রতি গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য বেইজিংয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে। আমরা চীনের কাছ থেকে আরও বিনিয়োগ চাই এবং সেখানে আমাদের পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি।’

অর্থনৈতিক সহযোগিতা গুরুত্ব পাচ্ছে: তৌহিদ হোসেন বলেন, একটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ করা।

‘আমরা আশা করছি, চীনা কোম্পানিগুলো তাদের কারখানা এখানে স্থানান্তর করবে এবং বাংলাদেশের অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশের সুবিধা নেবে।’

তবে, তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ এখনও বেইজিংয়ের বাজার সুবিধাগুলো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি, কারণ রপ্তানির জন্য পণ্যের পরিধি সীমিত। চীনের বিশাল ভোক্তা বাজারে প্রবেশের জন্য রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতা : স্বাস্থ্যসেবা খাতেও সহযোগিতা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়, বিশেষ করে বাংলাদেশি রোগীরা ভারতের ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে চিকিৎসা নিতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।

হোসেন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি রোগীদের প্রথম দল ইতোমধ্যে চীনে চিকিৎসার জন্য গিয়েছে। আমরা চাই চীন ঢাকায় একটি আধুনিক হাসপাতাল স্থাপনে বিনিয়োগ করুক।’

বাংলাদেশ চীনের কাছে অনুরোধ করেছে কুনমিংয়ে চারটি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করতে, যেখানে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকবে। এই প্রথম দলটির অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের চিকিৎসা সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পানি ব্যবস্থাপনা ও তিস্তা ইস্যু: পানি ব্যবস্থাপনাও আলোচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়, যেখানে বাংলাদেশ নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে চীনের সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে তিস্তা নদী ইস্যুতে।

হোসেন বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থে পানি ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা এগিয়ে নিতে চাই।’

বিশেষজ্ঞ মতামত: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান গতিশীলতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বৈশ্বিক জোটের রদবদলের মধ্যে বাংলাদেশ যখন তার পথ নির্ধারণ করতে চাচ্ছে, তখন ড. ইউনূস চীন সফরে যাচ্ছেন। তার এই সফর কৌশলগত বিবেচনার সঙ্গে অর্থনৈতিক আবশ্যিকতার ভারসাম্য বজায় রেখে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করার স্পষ্ট অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সফর প্রতীকী তাৎপর্য বহন করছে এবং ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করবে।

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের প্রতীকী তাৎপর্যের ওপর জোর দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, এই সফর পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্র তৈরি করবে। এই সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে, যা বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির পথ প্রশস্ত করবে।

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করবে। তবে তিস্তার মতো বড় প্রকল্পগুলোর জন্য সম্ভবত নির্বাচনের পর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, চীনের কাছ থেকে বিনিয়োগ বা বড় চুক্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো বাধা হবে না।

তিনি বলেন, ‘চীন জানে, এই অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের পূর্ণ ম্যান্ডেট নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন।’

তিস্তা ইস্যুতে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার নিজস্ব স্বার্থে বেইজিংয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করা উচিত।

তিনি আগামী এপ্রিল মাসে ঢাকায় আয়োজিত বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রতিশ্রুতিশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখছেন।

জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোতে পারস্পরিক স্বার্থ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘উন্নত মানের চিকিৎসা সুবিধা প্রতিষ্ঠায় চীনের আগ্রহ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

বৈদেশিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাব এনাম খান ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে অন্যান্য দেশের দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেন,‘আঞ্চলিক প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ। তবে বাংলাদেশকে অবশ্যই তার স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেমন- রোহিঙ্গা সংকট ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, এই সফর রোহিঙ্গা সংকট পুনর্বিবেচনার নতুন সুযোগ তৈরি করছে। কারণ ২০২৪ ও ২০২৫ সালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন।

প্রধান উপদেষ্টার সম্ভাব্য ভ্রমণসূচি: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে যোগ দিতে ২৬ মার্চ চীনের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।

২৭ মার্চ তিনি সম্মেলনের উদ্বোধনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন এবং চীনের নির্বাহী ভাইস প্রিমিয়ার ডিং জুয়েশিয়াং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন।

২৮ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা বেইজিংয়ের গ্রেট হল অফ দ্য পিপলে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।

তিনি হুয়াওয়ের একটি উচ্চ প্রযুক্তির উদ্যোগ পরিদর্শন ও চীনের শীর্ষস্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২৯ মার্চ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি সেখানে বক্তৃতা দেবেন। এরপর ওই দিনই প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়