সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, ‘জুনের মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাচ্ছেন সৌদিতে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা’। এসব পোস্টে দাবি করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার সৌদিতে অবস্থারত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এটি সঠিক নয়, বিভ্রান্তিকর তথ্য।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। বরং ১৯৭৫ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে গেছেন। এখন এসব পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নবায়ন করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কেবল সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে ‘জুনের মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাচ্ছেন সৌদিতে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা’ শীর্ষক শিরোনামে গত ১৩ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
দেশের মূলধারার গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, সৌদি আরবে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে ২৫ হাজার ৬৫১ জনের একটি তালিকা সৌদি কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে দিয়েছে। এই পাসপোর্ট নবায়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে, তবে বরাদ্দ তুলনামূলক কম থাকায় জুনের মধ্যে সব পাসপোর্ট নবায়ন সম্পন্ন হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
সৌদি সরকার ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারের ওপর পাসপোর্ট নবায়নের জন্য চাপ দিয়ে আসছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে এই নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়। উভয় দেশের সমঝোতার মাধ্যমে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে, যারা এই নবায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক উল্লেখ করেন, ১৯৭৫ সালের পর সৌদি সরকার বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। পাকিস্তান তাদের জন্য ট্রাভেল ডকুমেন্ট সরবরাহ করলেও বাংলাদেশ সরাসরি পাসপোর্ট দিয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে বড় সংকট সৃষ্টি করেছে।
ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আলদুহাইলান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সৌদি আরবে বসবাসরত ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়নের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ফিরে এসে ভূখণ্ড দখল করবে। অথচ বাস্তবে এই রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরবে বসবাস করছে এবং পাসপোর্ট নবায়ন শুধু একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া।
সুতরাং, নতুন করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে বলে প্রচারিত তথ্য বিভ্রান্তিকর। মূলত, ১৯৭৫ সালের পর বিভিন্ন সময়ে যারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন, তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে।