বাসস।। শরণার্থী বিষয়ক আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে সফলভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যাতে বহু দশক ধরে চলতে থাকা মানবিক ট্র্যাজেডিকে আবারও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে এবং দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য আরও সমর্থন সংগ্রহ করা যায়।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপো গ্র্যান্ডি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা এই আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আসুন, এই সম্মেলনকে একটি বড় সফলতা হিসেবে বাস্তবায়ন করি এবং সমস্যার সমাধান করি। আশা করি, এর মাধ্যমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে। ভবিষ্যতের একটি পথ থাকা উচিত। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়।’
জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের প্রধান ফিলিপো গ্র্যান্ডি জাতিসংঘের উদ্যোগে চলতি বছর অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রতি তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করেন।
গ্র্যান্ডি রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘আসুন, এই বিষয়টিকে পুনরায় বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরি। জাতিসংঘের এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনার একটি দুর্দান্ত উপায়’।
তিনি বলেন, ‘এটি রাখাইন অঞ্চলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা তৈরি করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।’আ
‘আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে পেরে আনন্দিত’ উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আগামী মার্চের মাঝামাঝি বাংলাদেশ সফর এই ইস্যুতে নতুন গতি সঞ্চার করবে।
সাক্ষাৎকালে তাঁরা উভয়ে বাংলাদেশে ক্যাম্পে বসবাসরত এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আরও আর্থিক সহায়তা সংগ্রহের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন, বিশেষ করে যখন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির নতুন দিকনির্দেশনা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
তারা রাখাইন রাজ্যের মানবিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন, যেখানে একটি প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
পশ্চিম মিয়ানমার রাজ্যের জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের স্বার্থে শত্রুতা কমানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে আলোচনায় উঠে আসে। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
আফ্রিকার কিছু মানবিক সংকটের প্রসঙ্গ টেনে গ্র্যান্ডি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের সামরিক শাসনগুলোর বৈধতার অভাব অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য সর্বজনীন শিক্ষার সুযোগ তৈরি এবং শরণার্থীদের জন্য আরও টেকসই আশ্রয় নির্মাণের অনুমতি দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করেন জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার প্রধান।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকার সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
তিনি গ্র্যান্ডিকে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন এবং রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করার উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত করেন।