আদালত প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৮ আসামির সবাইকে নাইকো দুর্নীতি মামলায় বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এই রায় ঘোষণা করেন।
গত বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ঠিক করেন।
খালাস পাওয়া অপর আসামিরা হলেন তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী,বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম । এদের মধ্যে প্রথম তিনজন পলাতক রয়েছেন।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটি ৬৮ সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলা তদন্তের পর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ একই আদালত খালেদা জিয়াসহ ৮ আসামির অব্যাহতির আদালত নাকচ করে চার্জগঠনের আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি এ নেত্রীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করলে তা খারিজ হয়ে যায়। একইসঙ্গে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজার পরিমাণ বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। এরপর গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগ তাকে খালাস প্রদান করেন।
আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দুর্নীতির আরেক মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর তারিখের রায়ে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াসহ অন্য তিন আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া দেয়। এ মামলায় গত বছর ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট খালেদা জিয়াসহ সব আসামিকে খালাস প্রদান করেন।
এছাড়া গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর ভুয়া জন্মদিন পালন এবং যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়াসহ ৫টি মানহানির মামলা খারিজ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খালাস দেন সিএমএম আদালত। তার আগে গত বছর ২৯ আগস্ট নড়াইল জেলার আদালতের একটি মানহানির মামলাও খারিজ হয়।
গত বছর ২৪ অক্টোবর গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে অব্যাহতির আদেশ দিয়েছেন নিম্ন আদালত।
একই দিন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ২০১৫ সালে সারাদেশে ৪২ জনকে হত্যার অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা খারিজ করে দেন সিএমএম আদালত।
গত বছর ৩০ অক্টোবর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের ১টি, নাশকতার অভিযোগে করা ১০টিসহ ১১টি মামলার কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করে খালাস দেন হাইকোর্ট।
সর্বশেষ গত বছর ২৭ নভেম্বর বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে অব্যাহতি দিয়ে অপর চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা ছিল। এর মধ্যে বেশিরভাগই নাশকতা ও মানহানির মামলা। এসব মামলা হয়েছে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। শুধুমাত্র দুটি মামলায়ই খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছিল।
তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দিনই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা দুটিতে খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি। খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে দুর্নীতির আরেকটি মামলা থেকেও। বিচারিক আদালতে কার্যক্রম চলছে আরও একটি দুর্নীতি মামলার।
চলমান মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সম্প্রতি বলেছেন, ‘বর্তমানে কুমিল্লায় ৩টি নাশকতার মামলা আছে। এর বাইরে ১/২টি মানহানি মামলা রয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :