শিরোনাম
◈ জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ বিএনপির (ভিডিও) ◈ সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়: জামায়াত সেক্রেটারি (ভিডিও) ◈ র‍্যাব বিলুপ্তির বিষয়ে জাতিসংঘের সুপারিশ নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ বিদেশে পাসপোর্ট হারালে যা করবেন, জেনে নিন পদক্ষেপগুলো ◈ নতুন দল আসছে চলতি মাসের শেষদিকে ◈ বাংলাদেশে আসার ১০ মিনিটেই অন অ্যারাইভাল ভিসা পাবেন বিদেশিরা ◈ ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে সহিংস পন্থা বেছে নেন হাসিনা ◈ ‘মব জাস্টিস’ আর ‘ডেভিল হান্ট’ এর পাল্লায় হিমশিম অন্তর্বর্তী বাংলাদেশ ◈ আন্দোলনকারী নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নও চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ◈ ফোনালাপে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছেন ট্রাম্প-পুতিন

প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৩:০৯ রাত
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রিপোর্ট প্রকাশ

সরকারের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতারা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য তারা অনেকগুলো সুপারিশ করেছে।

এ রিপোর্ট প্রকাশের পর বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কার কার্যক্রম এবং সরকার পরিচালনায় বড় ধরনের পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। একদিকে যেমন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই রিপোর্টকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে খাটো করা চেষ্টা করবে। তেমনি সংস্কার কার্যক্রমে জাতিসংঘের আগ্রহের বিষয়টি তাদের আপত্তি বা অপছন্দ হলেও মেনে নিতে হতে পারে।

ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রিপোর্টকে স্বাগতও জানিয়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে বিভিন্ন কারণে এই রিপোর্টে দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখামুখি হতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা এর পরবর্তী সরকারকে।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘পৃথিবীতে সম্পূর্ণ মানবাধিকার মেনে চলে এমন দেশ নেই। গরিব দেশগুলোতে এই রেকর্ড আরও খারাপ। আমাদেরকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট যেন না হয়। আমাদেরকে নিয়ে যদি কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, সেটি বাংলাদেশ কতটুক মেনে নেবে, সেটি দেখার বিষয়।’

আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অনেক কিছু করতে হয়। মানবাধিকার সম্পূর্ণভাবে বজায় রেখে কখনোই রাষ্ট্র চালানো সম্ভব না। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মাঝে মাঝে কঠোর হতে হয়। মানবাধিকার নিয়ে যারা প্রচারণা চালায়, তারাও বিষয়টি জানে।’

সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে রাষ্ট্র পরিচালনা করার যে কূটকৈৗশল সেটির ধার কমে যাবে। এখানে গুম বা আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ বা অন্যান্য অপরাধ বন্ধ করা বা কমানো সহজ। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা বলে তিনি জানান।

নিরাপত্তা সংস্থায় সংস্কার : ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্টে ডিজিএফআই, এনএসআই, র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল উল্লেখ করা হয়েছে। ওইসব সংস্থায় কিছু কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সেখানে সংস্কার হবে কি না বা হলে কি হবে– এ বিষয়ে এখনও কোনও কিছু বলা হয়নি। 

এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এই রিপোর্ট গ্রহণ করার মাধ্যমে সরকার স্বীকার করে নিয়েছে যে তাদের যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘রিপোর্টে নাম ধরে বলা হয়েছে ডিজিএফআই, এনএসআই, র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এই সরকার বা পরবর্তী যে সরকার আসবে তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে যে ওইসব মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠান আগের মতো কাজ করবে অথবা করবে না। ওইসব প্রতিষ্ঠানে সংস্কার বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে আসবে। সাম্প্রতিক সময়ে যে সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে এটি আসেনি।’

নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতের সংস্কার নিয়ে কাজ করতে হলে সরকারকে আর্মি বা পুলিশের মধ্যে থেকে ও বাইরে থেকে চাপ তৈরি হবে বলে তিনি জানান।

সামরিক বাহিনী : বিক্ষোভ চলাকালে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালিয়েছিল। এছাড়া অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা যখন অপারেশনে ছিল, তখন আর্মিরা তাদের নিরাপত্তার জন্য উপস্থিত ছিল।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘এই রিপোর্ট জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত দফতরে যাবে। এখন আর্মি যদি সংশোধনের জন্য কিছু না করে, তবে শান্তিরক্ষাকারী হিসাবে তাদের দায়িত্বে প্রভাব পড়তে পারে।’

আর্মিকে কিছু পরিবর্তনমূলক পদক্ষেপ নিতে হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সামরিক বাহিনী কতটুকু নিজেদের পরিবর্তন করতে পারবে, সেটি দেখার বিষয়।’

বাস্তবায়ন সমস্যা : রাজনৈতিক দলগুলোকে ঠিক করতে হবে বাংলাদেশ কোন পথে যাবে। যদি তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে হবে, তাহলে ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমার সন্দেহ হয় রাজনৈতিক দলগুলো এটি ব্যবহার করবে, কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করবে না। আওয়ামী লীগকে ক্ষতি করার জন্য অন্য দলগুলো এটি ব্যবহার করবে, কিন্তু বাস্তবায়ন করবে না।’

ট্রানজিশনাল জাস্টিস : ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন সুপারিশ করেছে, ট্রানজিশনাল জাস্টিস প্রতিষ্ঠা করার জন্য যেন বাংলাদেশ কাজ করে।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘ট্রানজিশনাল জাস্টিস এক বাক্যে বলা সহজ কিন্তু এটি যখন কার্যকরী হবে তখন বড় একটি জাতিসংঘের অফিস থাকতে হবে। অন্যদেশে যেমন নেপাল বা কম্বোডিয়াতে একই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ট্রানজিশনাল জাস্টিস প্রচেষ্টা সফল হয়নি।’

ট্রানজিশনাল জাস্টিসের মধ্যে ক্রিমিনাল প্রসিকিউশন, ট্রুথ সিকিং, ভেটিং, রিকনসিলিয়েশন, ক্ষতিপূরণ, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। এগুলো বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে গেলে জাতিসংঘের উপস্থিতির মাত্রা অনেক বেশি হবে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে জাতিসংঘের প্রভাব বাংলাদেশে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে।’

আইসিসিতে সম্ভাব্য মামলা : ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে অনেক ব্যক্তির নামে অভিযোগ করা হবে এবং এটি হবে দুইপক্ষ থেকে। এই অভিযোগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

এ বিষয়ে একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘ভলকার টুর্ক বলেছেন যে দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ আইসিসিতে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকার আওয়ামী লীগ নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারে।’

আরেকজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘জেনেভাতে মানবাধিকার কাউন্সিলের পরের সেশনে মানবাধিকার হাইকমিশনারের রিপোর্ট প্রকাশ করবে। যদি তিনি মনে করেন যে রিপোর্টের সুপারিশ বাস্তবায়ন হচ্ছে– তবে দেশভিত্তিক এজেন্ডা আইটেম হিসাবে বাংলাদেশের নাম আসার সম্ভাবনা কম।’

মানবাধিকার হাইকমিশনারের অফিস খোলার বিষয়ে বাংলাদেশে বিরোধিতা রয়েছে এবং এই রিপোর্টের পরে বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও আপস করতে হতে পারে বলে তিনি জানান। উৎস: বাংলাট্রিবিউন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়