শিরোনাম
◈ অক্সফোর্ড কলেজে শতাব্দীর রীতি: দাস নারীর খুলিতে তৈরি পাত্রে পরিবেশন হতো পানীয়! ◈ বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কম: বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরতা বেড়েছে ◈ বাংলাদেশের সঙ্গে এলএনজি সরবরাহ চুক্তি নবায়ন করবে কাতার ◈ বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিল, গ্রেফতার ১০ ◈ আওয়ামীপন্থি সেই ৬১ আইনজীবীর হাইকোর্টে জামিন ◈ কুয়েট ভিসির অপসারণের দাবিতে দেড় ঘণ্টা অবরোধের পর কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়ল শিক্ষার্থীরা (ভিডিও) ◈ মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সংস্কার হচ্ছে, ভাঙচুর নয় ◈ পারভেজ হত্যা: ‘দুই বান্ধবীকে’ খুঁজছে পুলিশ ◈ ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল: এবার নতুন তথ্য দিলেন ভারতের সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা ◈ সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এডিসি নাজমুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:৪৬ দুপুর
আপডেট : ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

পরাজিত শক্তিকে দমন করতে অমানবিক হওয়া যাবে না, মানবাধিকার রক্ষা করেই অপারেশন ডেভিল হান্ট

এল আর বদল : মানবাধিকার রক্ষা করেই অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি। তবে সংবাদমাধ্যমকে কেন্দ্রীয়ভাবে অভিযানে আটক সংক্রান্ত কোনো তথ্য সরবরাহ এখনও শুরু হয়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোববার এক ব্রিফিং-এ নাসিমুল গনি বলেন, যেসব দেশে বিপ্লব হয়েছে, সেখানে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখেনি। আমরা অতটা অমানবিক হতে পারিনি। পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তির মতো আমরা অমানবিক ও নির্দয় হতে পারিনি। কারণ, মানবাধিকারের জন্যই জুলাই-আগস্টে আন্দোলন ও অভ্যুত্থান হয়েছে। সূত্র: ডয়েচেভেলে

তিনি বলেন, ডেভিল হান্ট শুরু হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ও কাজ হচ্ছে- যেসব পকেট থেকে দেশকে আনস্টেবল করা হচ্ছে, সেগুলোকে নিউট্রালাইজ করা। আইনানুগভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সবকল বাহিনীকে প্রস্তুত করা হয়েছে, ব্রিফ করা হয়েছে এবং কাজ চলমান আছে। দেখা যাচ্ছে হঠাৎ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হচ্ছে। মানুষের মন যাতে উদ্বেলিত না হয়, সেজন্য এই ডেভিল হান্ট পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি নেতৃত্ব দিচ্ছে পুলিশ। যতক্ষণ প্রয়োজন হয় ততক্ষণ এই ডেভিল হান্ট চলবে।

নাসিমুল গনি বলেন, পুলিশের কেউ ভয়ে এবং চাপে পড়ে অন্যায় করেছে। কিছু অতি-উৎসাহী ছিলো- তারা পালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন হচ্ছে।

শনিবার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে , সামনে আর এ ধরনের কোন গ্রেপ্তার হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশা করা যায়।”

যৌথ বাহিনীর এই অভিযান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।

সারাদেশে চলছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’, তবে তার ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরেই বেশি। শনিবার শুরু হওয়া সন্ত্রাসবিরোধী এই বিশেষ অভিযানে রবিবার বিকাল পর্যন্ত গাজীপুর থেকে ৮৩ জনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। তারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর বাইরে দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু আটকের খবর পাওয়া গেছে।

শুক্রবার রাতে গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫-১৬ জন আহত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা শুক্রবার রাতে ডাকাতির খবর পেয়ে প্রতিহত করে গিয়েছিলেন। তখন তাদের ওপর হামলা হয়। শনিবার ছাত্ররা গাজীপুরের প্রতিবাদ সমাবেশ করে। তারা অভিযোগ করে, পুলিশকে খবর দেয়ার পরও তারা কোনো সহায়তা করেনি। এর প্রেক্ষিতে গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার ক্ষমা প্রার্থনা করেন। গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়।

আর শনিবার দুপুরে সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর বৈঠকে যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। রবিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে ডেভিল হান্ট অপারেশনে মূলত টার্গেট কারা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, "ডেভিলরা। ডেভিল মানে কী- শয়তান, তারাই এর টার্গেট। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, যারা আইন অমান্য করে, দুষ্কৃতকারী এবং সন্ত্রাসী তারাই এর টার্গেট।

তিনি আরো বলেন, গাজীপুরে যারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের অনেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যাদের আনা হয়নি তাদেরও খুব তাড়াতাড়ি আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয় এই ব্যবস্থা করা হবে।

এসময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, পাঁচ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে গাজীপুরের ঘটনায় আটক করা হয়েছে। শনিবার রাতেই চার পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন: রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম, নোয়াখালীর সাবেক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, সিলেটের সাবেক পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান এবং বাগেরহাটের সাবেক পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত। আরেকজনের নাম জানা যায়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে এখনও অপারেশন ডেভিল হান্ট সম্পর্কে তথ্যপ্রদানের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় হালনাগাদ তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়ি। তবে প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায় থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, দেশব্যাপী এই অভিযানে সহস্রাধিক ব্যক্তি আটক হয়েছেন। তারমধ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ও জেলা থেকে মোট ৮৩ জনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। যারা আটক হয়েছেন তারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।

তবে গাজীপুরের পুলিশ কশিনার নাজমুল করিম বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি না। আমাদের অভিযান অপরাধী এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে।

তিনি বলেন, তারা যখন বলে জনগণকে শান্তি দেবে না, ঘুমাতে দেবে না। সেটা পুলিশের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। তাই পুলিশকেও তখন একটু অ্যাগ্রেসিভ হতে হয়। তা না হলে তো আমরা জনগণকে শান্তিতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে পারব না। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অপরারেশন ডেভিল হান্ট শুধু করেছি। এটা চলবে।

এই অভিযানে এখানো অস্ত্র উদ্ধারের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে লুট হওয়া অস্ত্রের দেড় হাজার এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। গাজীপুর মোট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশানার (ক্রাইম) মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, অভিযানে যারা আটক হয়েছেন তাদের কাছ থেকে কিছু দেশীয় হাঁসুয়া ও রড উদ্ধার করা হয়েছে। কোনো আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়নি।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের আটক করা হয়েছে তারা আ ক ম মোজাম্মেল সাহেবের অনুসারী । সেই হিসাবে তাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বলা যায়। আর তারা শুক্রবার রাতে ছাত্রদের ওপর হামলায় ছিলো। তারা তালিকাভুক্ত। কিন্তু সুনির্দিষ্ট মামলার আসামি কী না যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।

পুলিশের সাবেক আইজি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, এই ধরনের অপারেশনের সাফল্য নির্ভর করে তথ্যের ওপরে। গোয়েন্দা তথ্য এবং অপরাধীদের তালিকা যত ভালো থাকবে তত অভিযান সফল হবে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেই তালিকা গত ছয় মাসে করতে পেরেছি কীনা, তা তারাই ভালো বলতে পারবে।

তিনি বলেন, এই ধরনের অভিযানের টার্গেট থাকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধী গ্রেপ্তার। তথ্য ঠিক থাকলে অভিযান ভালো হবে। আর এটার দরকার তো আছেই। কিছু লোক তো আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। একটু কঠোর অবস্থানে তো যাওয়া দরকার।

মানবাধিকারের প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটা তো আইনেই আছে তল্লাশি, আটকের সময় আইন  ও নির্দেশনা ঠিক মতো মানলে সমস্যা হওয়ার কথা না। প্রসঙ্গত, ৫ আগস্টের আগে থেকেই সেনাবাহিনী মাঠে আছে। পরে তাদের মেজিষ্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হয়। দেশে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যেই অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হলো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়