আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন অভিযোগের গুরুতর প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন। সূত্র বলছে, আগামী সপ্তাহে এই তদন্ত প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে জাতিসংঘ।
সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারির শেষ দিকে নিজেদের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠায় জাতিসংঘ। ওই সময় এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানানোর পরপরই সেটি চূড়ান্ত করে জাতিসংঘ।
এ বিষয়ে সরকারের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টে নৃশংসতায় বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের প্রত্যক্ষ ইন্ধন পেয়েছে তদন্ত কমিশন। বিশেষ করে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ মিলেছে। প্রতিবেদনটিতে জুলাই-আগস্টে কী কী ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে করণীয় নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গুরত্বসহকারে এসেছে। পুলিশ যে আবু সাঈদকে গুলি করছে এবং গুলিতে তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে, এমন ছবি খুব কাছ থেকে জুম করে দেখানো হয়েছে।
এ নিয়ে সরকারের এক জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, “মদ্দা কথায় বিগত সরকারের ওপর জুলাই-আগস্টের নৃশংসতার দায় যাচ্ছে। আগের সরকারের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে সেটি প্রতিবেদনে আছে।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে যেসব তথ্য ও প্রমাণ পেয়েছে সেগুলো জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনকে দিয়েছে। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-প্রমাণ এবং তদন্ত কমিশন যেসব সাক্ষাৎকার নিয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে তারা। আমাদের দেওয়া এবং তাদেরটা মিলিয়ে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের ওপর ভীত্তি করে প্রতিবেদন হয়েছে। প্রতিবেদনে জুলাই-আগস্টে কি কি ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে করণীয় নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো প্রয়োজনে পুনরায় তদন্ত করার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ।”
উল্লেখ্য, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর জুলাই ও আগস্টের শুরুতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে চিঠি লেখেন।
পরবর্তী পদক্ষেপে তদন্তের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রুরি ম্যানগোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা সফর করেন। এরপর তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের মূল দল তথা তথ্যানুসন্ধান দল এক মাসের বেশি সময় বাংলাদেশে অবস্থান করে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গত জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ১৫ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে। তদন্তের স্বার্থে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করেছে। সূত্র : ঢাকাপোস্ট