দেশরুপান্তর প্রতিবেদন: অর্থায়নের উৎস যেখান থেকেই হোক রংপুর অঞ্চলের মানুষ তিস্তা প্রকল্পের বাস্তবায়ন চায়। ভারত না চীন, কে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এ নিয়ে গত বছরের শুরুর দিকে টানাপোড়েনের মধ্যে বন্ধ হয়ে এ আলোচনা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও পরবর্তীকালে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে তিস্তায় ভারতের সম্ভাবনার বিষয়টি ক্ষীণ হয়ে আসে। এর বিপরীতে তারা চীনের সঙ্গে আলোচনায় আশা দেখছে। এর মধ্যে আজ সোমবার চার দিনের চীন সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সফরকালে ২১ জানুয়ারি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং আইয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে করবেন। একই সঙ্গে বেইজিং ছাড়াও সাংহাই সফর করবেন উপদেষ্টা।
এ সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা সমঝোতা স্মারকের বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও তিস্তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা রাখা হয়নি। তবে ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তিস্তা প্রকল্পের বিষয়টি অবশ্যই প্রাধান্য পাবে। এর মধ্যে গতকাল রবিবার ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে সহায়তার বিষয়ে চীনের আগ্রহ রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
ইয়াও ওয়েন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে চীন। এটার সমাধান হবে বলে আমি মনে করি। চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আগের মতো সম্পর্ক থাকবে। ভবিষ্যতেও দুই দেশের সম্পর্কে কোনো চিড় ধরবে না, বরং এ সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এ সফরের মধ্যে দিয়ে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উপদেষ্টার সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয় আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রতি বছরই পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে যেতেন। তবে প্রতিবেশী ও রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে প্রথম সফর হিসেবে ভারতকেই বেছে নিতেন তারা।। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনেই যাচ্ছেন।
এ সফর সম্পর্কে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের নতুন প্রেক্ষাপটে সফর বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক, বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক ও ক‚টনৈতিক নানা কারণে চীন বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তিনি মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে বলে আমি আশা করি।
জানা গেছে, সফরে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশকে ১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট স্বীকৃতি দেয় চীন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরের সময়ে দুই দেশের ক‚টনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন অনেক আগে থেকেই মধ্যস্থতা করে আসছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে চীন দূতিয়ালি করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এ সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বিশ্বের মধ্যে চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। চীন থেকে বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে থাকে। বিপরীতে চীনে বাংলাদেশ রপ্তানি করে থাকে মাত্র ৬৭ কোটি ডলারের পণ্য।
চীনা বাজারে বাংলাদেশ ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। এরপরও চীনে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বাড়ছে না। সে কারণে বাণিজ্য ভারসাম্যও রক্ষা করা যাচ্ছে না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা উঠবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে চীন বিনিয়োগ করেছে। বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে। বিভিন্ন প্রকল্পে সুদহার বিভিন্ন রকম। এ হার কমাতে চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরে আলোচনায় সুদহার কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে।
এ নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের অনেক প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ আছে। বিনিয়োগ মূলত ঋণ আকারে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান। এ ছাড়া আরও অর্থনৈতিক আলোচনা আছে— যেমন আমরা ঋণের শর্তাদি নিয়ে কথা বলব। এর মধ্যে রয়েছে সুদহার কমানো বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা সমঝোতা স্মারক রয়েছে। সেই সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে এ সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে সহায়তা দিতে আগ্রহী চীন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে বিষয়টি আলোচনায় উঠতে পারে।
চীনের সহযোগিতায় পূর্বাচলে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণে জমি দেবে সরকার : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের চীন সফরে রেল, স্বাস্থ্য ও পানিবিষয়ক সহযোগিতাকে গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ। চীনের সহযোগিতায় ঢাকার পূর্বাচলে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জমিসহ অন্যান্য সুবিধা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। গতকাল পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সৌজন্য সাক্ষাতের সময় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য চীনের কুনমিংয়ে তিন থেকে চারটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্ধারণ করে দেওয়ার অনুরোধ জানাবে ঢাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগের আওতায় যাত্রীদের জন্য আরও রেলওয়ে কোচ যুক্ত করার জন্য চীনের সহায়তা চাইবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। আলোচনায় চীনের রাষ্ট্রদূত জানান, চীনা ঋণের সুদের হার কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে বেইজিং।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টাকে ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি চীনে তার প্রথম আসন্ন দ্বিপক্ষীয় সফরের বিষয়ে অবহিত করেন। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিক আলোচনার সময় চীনা নেতাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আলোচনায় উপদেষ্টা বিভিন্ন বিভাগে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সম্প্রসারণের গুরুত্বও তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগের আওতায় যাত্রীদের জন্য আরও রেলওয়ে কোচ যুক্ত করার জন্য চীনের সহায়তা কামনা করেন। স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ঢাকার পূর্বাচলে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত চীনা হাসপাতাল তৈরি করার জন্য জমি এবং অন্যান্য সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ। চীনের কুনমিংয়ে অন্তত তিন থেকে চারটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল মনোনীত করার জন্য অনুরোধ করেছেন, যাতে বাংলাদেশি নাগরিকরা সেখানে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, আহত শিক্ষার্থীরা দ্রুত চীনে তাদের চিকিৎসা পাবেন। চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে চীন সবকিছুই করবে।
রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে আরও জানান, আসন্ন সফরের সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঠানো জলবিদ্যুৎ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা সংক্রান্ত সমঝোতা স্বাক্ষর করতে চীন প্রস্তুত।
সফরের গুরুত্ব তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টাকে জানান, তার দেশের জনগণ চীনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। চীন বাংলাদেশের সব সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু এবং সরকার নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, চীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে। তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও উন্নয়ন উদ্যোগের জন্য তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
ভালো বন্ধু ও প্রতিবেশীর চেতনায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে চীন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের মাতৃভূমিতে দ্রুত প্রত্যাবাসনে তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য রোডম্যাপ তৈরির গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ আশা করে, চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য একটি শক্তিশালী ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা : ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্যা হিস্যা নিয়ে গত ৫৩ বছরে সমাধানে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। বারবার তিস্তায় আশা দেওয়ার পরও বিষয়টি অমীমাংসিতই থেকে যায়। এ পরিস্থিতিতে তিস্তার সমাধানে বিকল্প উপায় বের করে বাংলাদেশ। তিস্তা নদী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ মহাপ্রকল্প হাতে নেয়। তারই অংশ হিসেবে চীনের ঋণ নিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বিশদ সমীক্ষা শুরু করে ঢাকা-বেইজিং।
তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করা হয় প্রথমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি দিয়ে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ এবং ২০২০ থেকে ২০২২ সাল এবং সর্বশেষ গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীন সরকারে সঙ্গে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি চুক্তি অনুযায়ী কাজ করে চীন। চুক্তি অনুযায়ী গত বছর জানুয়ারিতে সম্পন্ন হওয়ার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু নির্বাচনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, তিস্তা প্রকল্পের কাজ একা চীন নয়, ভারতকেও যুক্ত করা হবে।
এর মধ্যে ভারতের জাতীয় নির্বাচনের পর দেশটির নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে মে মাসে শেখ হাসিনা দুদিনের সফরে দিল্লি যান। এদিকে তার আগেই শেখ হাসিনার চীনের সফর নির্ধারিত হয় জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে। ফলে দিল্লি সফরে তিস্তা বিষয়ে আলোচনা হয় মোদি-হাসিনার মধ্যে। তিস্তা প্রকল্পে চীনের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রবল আপত্তি আসে ভারতের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার কথা বলা হয়। তবে সেই সফরে তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও চীনকে যে যুক্ত রাখা হবে না এমন ইঙ্গিত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরই ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ হতে থাকে। ফলে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে শেখ হাসিনার চীন সফরের আগেই এক ধরনের টানাপড়েন দেখা দেয়।
একদিকে ভারতের পক্ষ থেকে প্রবল চাপ আবার চীনের চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে চাপ— দুইয়ে মিলে সরকার তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকেই সরে আসে। এরপর জুনের প্রথম সপ্তাহে চীন সফরেও তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা তেমন একটা এগোয়নি। শেখ হাসিনার চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসার পর চীনের পক্ষ থেকে যে উষ্ণতম সম্পর্কের আভাস পাওয়া গিয়েছিল এবং চীনের কাছ থেকে একটা বড় অঙ্কের ঋণের আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু চীন সফরে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। তার মধ্যে শেখ হাসিনা নির্ধারিত সময়ের এক দিন আগে সফর শেষ করে দেশে ফেরেন। সেই সময়ই বিষয়টি আলোচনায় আসে। যদিও দুই দেশের পক্ষ থেকে ব্যাপারে কূটনৈতিক শিষ্টাচার পালন করা হয়।
এর মধ্যে চীনের সফরের মাত্র দুই মাসের মাথায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হয়। সেই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্ক শীতল হতে থাকে। এর মধ্যে চীন নতুন সরকারের সঙ্গে আগের মতোই কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। এ পর্যায়ে আজ চার দিনের চীন সফরে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
জানা গেছে, এ চুক্তি আগামী ২৬ সাল পর্যন্ত বাড়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। পাওয়ার চায়না প্রস্তাব ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে কিছু মতামত ও সুপারিশ দিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনা কোম্পানি মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সম্পর্কিত একটি নন-বাইডিং সমঝোতা স্মারক আগামী ২০২৬ সালে স্বাক্ষরিত হবে। নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক (চুক্তি)টির মেয়াদ সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। পরবর্তীতে স্মারক ১, ২ ও ৩ মোতাবেক বর্ণিত নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারকটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্পতি সাপেক্ষে তিন দফায় যথাক্রমে ২০২০-২২ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ সরকার। চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার ইআরডির মাধ্যমে তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাবনা চীনা সরকারের কাছে পাঠানো হয়। চীন সরকার আবেদনটি যাচাই-বাছাই করার পর বাংলাদেশের চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে কিছু মতামত ও সুপারিশ প্রদান করে। পাওয়ার চায়না সেই মোতাবেক ফিজিবিলিটি স্টাডি সমৃদ্ধ করে পুনরায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়— সম্প্রতি পাওয়ার চায়না প্রকল্পটি শুরুর আগে উল্লিখিত কাজগুলো ছাড়াও আরও কিছু প্রকৌশলগত কাজ সম্পন্ন করা এবং মহামারী কভিডের কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে মর্মে আবেদনে উল্লেখ করে নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ আগামী ২০২৬ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করার আবেদন করেছে। চায়না কোম্পানি আবেদন মোতাবেক নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক (চুক্তি) বৃদ্ধির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তিস্তা নদীকে ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে চীন। গত ২০২০ সালের আগস্টে ৮ হাজার ২১০ কোটি টাকার পিডিপিপি (প্রিলিমিনারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছিল। পিডিপিপির ব্যাপারে চীন সরকার গত বছর ৫ মার্চ একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাঠায়।
প্রতিবেদনে বড় আকারের ভূমি উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং নৌ-চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ না থাকা এবং বড় আকারের বিনিয়োগ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :