মাসুদ আলম: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপর ছিনতাইকারীদের হাতে হাফেজ কামরুল হাসান (২৩) নিহতের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দুই পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের দুজনেরই বয়স ১৮ বছরের কম। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান (পিপিএম) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের বয়স ১৬ ও ১৭ বছর বলে জানানো হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী থানার সূত্রে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৮ ডিসেম্বর হাফেজ কামরুল হাসান তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে সাজেকে যাওয়ার জন্য রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে রওনা করেন। তিনি রাত আনুমানিক ৮টা ৪০ মিনিটে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ এলাকায় নেমে বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য ফ্লাইওভার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি ফ্লাইওভারের ওপর সাথী আবাসিক হোটেল বরাবর পৌঁছালে কয়েকজন ছিনতাইকারী তাঁর গতি রোধ করে।
ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছে থাকা নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে চায়। ভুক্তভোগী কামরুল হাসান ছিনতাইকারীদের বাধা দেওয়ায় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছিনতাইকারী রোহান তার হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে কামরুলের বুকে আঘাত করে। তখন ভুক্তভোগী কামরুল ফ্লাইওভারের ওপর লুটিয়ে পড়লে ছিনতাইকারীরা তাঁর কাছে থাকা ১১ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল ফোন ও নগদ ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
আরও বলা হয়, গুরুতর আহত অবস্থায় কামরুল হাসানকে ফ্লাইওভারের ওপর পড়ে থাকতে দেখে পথচারী জনৈক রুবেল চিকিৎসার জন্য তাঁকে দ্রুত ধলপুরের ইসলামিয়া হাসপাতালে নিয়ে যান। সংবাদ পেয়ে কামরুল হাসানের বাবা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান। পরবর্তীতে ইসলামিয়া হাসপাতাল থেকে ওই দিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার কামরুল হাসানের বাবা মো. ইমাম হোসেন বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মামলাটির তদন্তে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করা হয়। এরপর যাত্রাবাড়ী থানার একটি দল আজ সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় গ্রেপ্তারকৃত দুজনই ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডের সময় যে পোশাক, ক্যাপ ও জুতা পরিহিত ছিল, সেই পোশাক, ক্যাপ ও জুতা পরিহিত অবস্থাতেই ছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতরা পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। তারা মূলত মাদক সেবনের অর্থ সংগ্রহের জন্য ছিনতাই করত। তারা যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারসহ আশপাশের এলাকায় পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই তাদের কাজ।
আরও বলা হয়, ঘটনার দিন গ্রেপ্তারকৃতদের সঙ্গে আরও তিন কিশোর (দুজনের বয়স ১৫ ও একজনের ১৭ বছর) ছিল। তারা কামরুল হাসানের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেওয়ার সময় তিনি বাধা দেন। ওই সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে একজন চাকু দিয়ে তাঁর বুকে আঘাত করে। এবং তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ছিনতাইকারী চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :