ঢাকায় বেশ কিছু দেশের দূতাবাস না থাকায় বাংলাদেশের নাগরিকদের সেসব দেশের ভিসা নিতে দিল্লিতে যেতে হয়। তবে ধীরে ধীরে বাংলাদেশিদের জন্য দিল্লির বিকল্প সুবিধা বাড়ছে ঢাকায়।
পাশাপাশি বিভিন্ন তৃতীয় দেশেও ভিসার সুবিধা বাড়ছে। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে জনবল সংকটের জন্য ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২ সেপ্টেম্বর থেকে আবার ভিসা কার্যক্রম চালু হয়। এই ভিসা কার্যক্রম চালু হয় জরুরি মেডিকেল ও শিক্ষার্থীদের জন্য। তবে তারপরেও অনেক শিক্ষার্থী ও কর্মী ভিসা পেতে অসুবিধায় পড়ছেন। সে কারণে সহজেই দিল্লি গিয়ে ভিসা নিতে পারছেন না। এজন্য বিকল্প উপায়ে জোর দেয় সরকার। যার ফলে বেশ কিছু দেশের ভিসা সুবিধা এখন ঢাকাতেই মিলবে।
বাংলাদেশে দূতাবাস নেই এমন ৮ টি ইউরোপের দেশের ভিসা এখন ঢাকা থেকেই করা যাবে। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া বা সুইডেনে যাওয়ার জন্য শেনজেন ভিসা আবেদনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেম চালু হয়েছে। ঢাকার সুইডিশ দূতাবাসের সহযোগিতায় ভি এফ এস (ভিএফএস) গ্লোবালের মাধ্যমে এসব দেশের জন্য শেনজেন ভিসা আবেদন করা যাবে।
বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, পোল্যান্ড প্রভৃতি দেশেরও ভিসা নিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের দিল্লি যেতে হয়। কারণ, এসব দেশের দূতাবাস ঢাকায় নেই। এসব দেশে প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী পড়তে যান। এছাড়া রোমানিয়ায় এখন প্রচুর বাংলাদেশের কর্মীও যান। ভারতীয় হাইকমিশন ভিসা সীমিত করে দেওয়ায় অনেকেই বিপাকে পড়েছেন।
এখন সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে রোমানিয়ার ভিসার জন্য শিক্ষার্থীরা থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে দেশটির দূতাবাসে আবেদন করতে পারবেন।
এছাড়া ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও কাজাখস্তানে বুলগেরিয়ার ভিসার আবেদন করা যাবে। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উদ্যোগে ভিয়েতনামের হ্যানয় এবং ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার দূতাবাসে এরই মধ্যেই ৮৬ জন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন করেছেন।
এছাড়া থাইল্যান্ডে কাজাখস্তানের দূতাবাস থেকে কাজাখস্তানের ভিসা নেওয়া যাবে।
মেক্সিকোর ভিসা নিতেও আগে বাংলাদেশি নাগরিকদের দিল্লি যেতে হতো। এখন নতুন ঘোষিত সুবিধার আওতায় বাংলাদেশি নাগরিকরা এখন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের যেকোনো মেক্সিকান দূতাবাস বা কনস্যুলেটে বা বিশ্বের অন্যান্য স্থানে তাদের ভিসার আবেদন জমা দিতে পারবেন।
দিল্লিতে না গিয়ে ইউরোপের ভিসা তৃতীয় কোনো দেশ থেকে যেন নেওয়া যায়, সে উদ্যোগ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের কাছাকাছি অন্যান্য দেশগুলো থেকে যেন ভিসা পেতে পারেন, সে প্রচেষ্টাও চলছে। এ লক্ষ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া ক্রোয়েশিয়া, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া প্রভৃতি দেশের ভিসা যেন বাংলাদেশ থেকেই পাওয়া যায়, সে প্রচেষ্টাও রয়েছে সরকারের।
তবে বুলগেরিয়া সরকার থেকে জানানো হয়েছে, আগামী জানুয়ারি থেকে তারা ভিএফএস গ্লোবালের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা দিতে আগ্রহী।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা জানান, এখন যাদের জরুরি প্রয়োজন তাদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে। কারণ, আমাদের লোকবল কম। আমাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক হলে এটি (ট্যুরিস্ট ভিসা) শুরু করা সম্ভব হবে। তবে এখন যাদের জরুরি, তাদের মেডিকেল ভিসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ভারতে গিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের ভিসার আবেদন যারা করছেন, তাদের আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আমরা চাই না এ ধরনের ভ্রমণে কেউ কষ্ট পাক। সেজন্য সর্বোচ্চ যতটুকু সম্ভব জরুরি প্রয়োজনীয় ভিসা দেওয়া হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. রফিকুল আলম জানিয়েছেন, ঢাকায় ভারতীয় ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দিল্লির বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি যোগাযোগ করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ভিসা যেন খুব সহজেই পাওয়া যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে পূর্ব ইউরোপ ও সিআইএসভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে ভালো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। উৎস: বাংলানিউজ২৪
আপনার মতামত লিখুন :