শিরোনাম
◈ ‘বঙ্গবন্ধু রেল সেতু’র নাম পরিবর্তন ◈ হাসান আরিফের মৃত্যুতে উপদেষ্টা পরিষদের শোক ◈ গত ১৫ বছর বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে তাঁবেদারি করেছে : প্রেস সচিব  ◈ উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ ভাতা বৃদ্ধির দাবীতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেছেন চিকিৎসকরা ◈ রাজধানীর যেসব সড়ক কাল বন্ধ থাকবে, বিকল্প পথে চলার পরামর্শ ◈ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন রোহিঙ্গাদের ফেরাতে যে কৌশলের কথা জানালেন ◈ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি নিয়ে যা বললেন চিফ প্রসিকিউটর (ভিডিও) ◈ রাখাইন রাজ্যের মিলিটারি সদরদপ্তর আরাকান আর্মির দখলে, সতর্ক উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত ◈ লন্ডন-যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ কোটি টাকা পাচার : হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০১:৩১ দুপুর
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব ঘিরে উত্তাল প্রশাসন 

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব ঘিরে প্রশাসন উত্তাল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে প্রশাসনের প্রভাবশালী প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। কমিশনকে খসড়া প্রস্তাব থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

গত মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, পরীক্ষা ছাড়া সিভিল সার্ভিসের উপসচিব এবং যুগ্ম-সচিব পর্যায়ে কেউ পদোন্নতি পাবেন না বলে সুপারিশ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তাদের নেওয়ার সুপারিশ দেওয়া হচ্ছে। এখন এক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা ৭৫ এবং অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা ২৫ শতাংশ পদোন্নতি পেয়ে থাকেন।

এছাড়া জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে ক্যাডার সার্ভিস থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে অন্যান্য ক্যাডারগুলোকে নিয়ে পাঁচটি গুচ্ছ করারও সুপারিশ দেবে কমিশন।

কমিশনের এ খসড়া সুপারিশের খবর প্রচারিত হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা এর প্রতিবাদ জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবি জানিয়েছেন।

গত ৩ অক্টোবর আট সদস্যের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ কমিশনের প্রধান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা করে তুলতে এ কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। কমিশন ৯০ দিনের (৩ মাস) মধ্যে প্রস্তুত করা প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে।

ক্ষুব্ধ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা : বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পত্রিকায় পরিবেশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদন সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)।

এতে বলা হয়, উপসচিব পদোন্নতি প্রত্যাশী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মতামত জরিপ কিংবা সমীক্ষার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি করা হয়নি বলে জানা যায়। ফলে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে মাঠ প্রশাসনসহ সব স্তরে কর্মরত বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন কমিশন প্রধানের এই বক্তব্যের এবং প্রতিবাদসহ প্রতিবেদনটি সংশোধনের আহ্বান জানাচ্ছে।

বিএএসএ জানায়, আমরা অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে রাষ্ট্রের কল্যাণের স্বার্থে মনে করি বিভিন্ন কারণে উপসচিব/যুগ্মসচিব/অতিরিক্ত সচিব/সচিব পদে শতভাগ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন হওয়া উচিত। 

ডিসিদের প্রতিবাদ  : বুধবার উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারদের কোটা কমাতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের সব জেলার জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরে বুধবার এ সংক্রান্ত প্রতিবাদলিপি জমা দিয়েছেন তারা।

ডিসিদের প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন যে ধরনের সুপারিশ করার চিন্তা করছে, তা বাস্তবতা বিবর্জিত। এ ধরনের উদ্যোগ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

‘দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মীমাংসিত একটি বিষয় নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের আনুষ্ঠানিক লিখিত প্রতিবেদন সরকারের নিকট জমা দেওয়ার আগেই আকস্মিকভাবে এ ধরনের ঘোষণা অনভিপ্রেত, আপত্তিকর ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে দুর্বল করার শামিল’ বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবাদ লিপিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রে প্রশাসন ক্যাডারের কার্যপরিধির সঙ্গে নীতি-নির্ধারণের নিবিড় সম্পর্ক। প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডারের বড় পার্থক্য হলো, প্রশাসন ক্যাডারের কাজের ধরণ সামগ্রিক বিষয়কে ধারণ করে। যেখানে অন্যান্য ক্যাডারের কাজের ধরন বিশেষায়িত।

খসড়া সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা : অন্যদিকে বিসিএস সাধারণ শিক্ষাকে ক্যাডার বহির্ভূত করার খসড়া সুপারিশ প্রত্যাখান করে প্রতিবাদলিপি দিয়েছেন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন।

এতে বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ও বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারকে কাঠামোর বাইরে রাখার সুপারিশ করতে যাচ্ছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার সদস্যের একক মুখপাত্র বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন এই সুপারিশ সর্বোতভাবে সর্বতভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। ২০১২ সালে অনুরূপ একটি প্রচেষ্টা আমরা প্রতিহত করেছি। বিষয়টি মীমাংসিত। 

‘সংস্কারের মাধ্যমে সব বৈষম্য নিরসন ও গতিশীল জনবান্ধব জনপ্রশাসন তৈরির লক্ষ্যে গঠিত কমিশনের এ ধরনের সুপারিশ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বৈষম্যবিরোধী মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এ সুপারিশ প্রত্যাহার করা না হলে কার্যকর প্রশাসনিক সংস্কার ব্যর্থ হবে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা না করে কমিশনের এমন প্রস্তাবনা তৈরি এবং গণমাধ্যমে একতরফাভাবে প্রচার করা সুবিবেচনা প্রসূত নয়।’

বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন জানায়, শিক্ষাখাতে অস্থিরতা তৈরি করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার এটি কোনো ষড়যন্ত্র কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত। এরূপ সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষা প্রশাসন এবং সংস্কার কার্যক্রমে স্থবিরতা এলে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন কোনোরূপ দায় নেবে না। ক্যাডার সংকোচন এবং শিক্ষাকে মেধাশূন্য করার এ অপচেষ্টার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এ প্রচেষ্টা বন্ধ করার জোরালো আহ্বান জানান তারা।

ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তারাও : জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবকে একতরফা আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন।

৩৫ হাজার সদস্যের এই সংগঠন। বুধবার সংগঠনটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নেয়ামত হোসেন ও সদস্যসচিব উম্মে তানিয়া নাসরিন সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্যের নীতি-নির্ধারণী পদগুলোতে পুরোপুরি অনভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পদায়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যখাতকে বিজ্ঞানভিত্তিক ও যুগোপযোগী না করে বরং উল্টোপথে হেঁটে আমলাতান্ত্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা কায়েম করেছে। অথচ এসব পদে স্বাস্থ্য ক্যাডারের উপযুক্ত কর্মকর্তাদের পদায়ন করে বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। কমিশন প্রকৃত সংস্কার বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকে ক্যাডারবহির্ভূত করার যে হঠকারী সুপারিশ করেছে, তা মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন তৈরি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি হলে প্রশাসনিক সংস্কার ব্যর্থ হবে। উৎস: জাগোনিউজ২৪

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়