দেশে এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে কোন দলকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি ৩৮ শতাংশ মানুষ। বাকি ১৬ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে, ১১ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীকে এবং ৯ শতাংশ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
তবে ২ শতাংশ মানুষ শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলে তাদের ভোট দিতে চান। আর মাত্র ১ শতাংশ মানুষ বলছেন, তারা জাতীয় পার্টিকে ভোট দেবেন।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভের’ দ্বিতীয় ধাপের জরিপের ফলাফলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই মতামত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে (পিআইবি) এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
বিআইজিডির আয়োজনে 'অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ : মানুষ কী ভাবছে' শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা সহযোগী শেখ আরমান তামিম অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।
চলতি বছরের ১৫ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানুষের প্রত্যাশ্যা অনেক বেড়েছিল। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী অনেক কিছুই অপূর্ণ রয়েছে। ভবিষ্যৎ নিয়েও জনমনে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
তবু উত্তরদাতাদের ৫৬ শতাংশ বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে। অন্যদিকে ৩৪ শতাংশ মনে করেন, দেশ ভুল পথে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে করা পালস সার্ভের প্রথম ধাপে পাওয়া ফলাফলের তুলনায় যা কমেছে। আগের সমীক্ষায় উত্তরদাতাদের ৭১ শতাংশ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। তখন দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন ১২ শতাংশ মানুষ।
এই জরিপে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৪ হাজার ১৫৮ জনের থেকে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে মতামত নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (বিআইজিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা এম হাসান বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর আগস্টে মানুষের আশা বেড়েছিল। তবে পরে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই আশা পূরণ না হওয়ায় জনসাধারণ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সময় সরকারকে জনগণের এই উদ্বেগের কথা বিবেচনা করতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকার দেশ ভালো পরিচালনা করবে কি না, এমন প্রশ্নে ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা নির্বাচিত সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। দ্বিমত প্রকাশ করেছেন ১৫ শতাংশ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা জানি যে বর্তমানে দেশে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে এটাও মনে রাখা দরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র চার মাস অতিবাহিত হয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত সময়কালে একাধিক জটিল সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত কঠিন বটে। তবে আমরা সকলে মিলে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর জনগণের উচ্ছ্বাস তাদের প্রত্যাশাকেও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার কারণে জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। জনমনে এত প্রত্যাশা জন্মানোর পেছনে সরকারের বার্তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং এই বার্তা পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, পিআইবির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম প্রমুখ।
আরও উপস্থিত ছিলেন ড. আহমেদ আহসান, পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও মোহাম্মদ আয়নুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সৈয়দা সেলিনা আজিজ, ফেলো অব প্র্যাকটিস, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। উৎস: কালবেলা।
আপনার মতামত লিখুন :