এল আর বাদল: কূটনৈতিক সম্পর্কের দৃশ্যমান অবনতি এবং উভয় দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। - বিবিসি বাংলা
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের মধ্যে এটিই উচ্চ পর্যায়ের প্রথম বৈঠক। এবং এ বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন বাংলাদেশে সনাতন ধর্মীয় একজন নেতার গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারত, সাথে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের অভিযোগও তুলেছে - আবার কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে হামলার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশী দুইদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে।
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠক থেকে বড় কিছু অর্জনের সুযোগ না থাকলেও, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুই দেশ বৈঠক বা আলোচনায় বসেছে- এটাই হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, দুই দেশের মধ্যকার কমন বিষয় গুলোই আলোচনায় আসবে।
সীমান্ত, বাণিজ্য, কানেকটিভিটি, পানির মতো অনেক বিষয় দুই দেশের আলোচনায় সাধারণ ভাবে থাকে। তবে, এজেন্ডায় শেষ পর্যন্ত কী থাকবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট উইং কাজ করছে, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলছেন, এজেন্ডায় যাই থাকুক, সব ধরনের উস্কানি নিরসন করে উত্তেজনা কমিয়ে এনে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য এবারের এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি 'ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) নামে পরিচিত। এটি মূলত দুই দেশের সব বিষয় নিয়েই আলোচনার একটি ফোরাম।
এফওসি বৈঠকে নতুন ইস্যু যেমনি উঠে আসে, তেমনি আগের সিদ্ধান্তগুলো দুই দেশের তরফে কোনটি কতটা বাস্তবায়ন হলো তা নিয়ে পর্যালোচনাও হয়ে থাকে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে কোন ক্ষেত্রে কী করা যায় তেমন কিছুও আলোচনা হয় এই ফোরামে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, এফওসি বৈঠক হলো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি কাঠামোবদ্ধ বিষয় এবং ভারতও এ বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে।
ব্রিফিংয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একজন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মি. জয়সোয়াল বলেছেন 'আইনি অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচারের বিষয়টি ভারত আবারও উল্লেখ করছে'।
বৈঠকটি নিয়ে এতো আলোচনা কেন-
ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক একটি নিয়মিত ও স্বাভাবিক কূটনৈতিক কার্যক্রম হলেও বিভিন্ন কারণে এবারের বৈঠকটি অতিরিক্ত আগ্রহ তৈরি করেছে। বৈঠকটির বিষয়ে গত বুধবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, এটা খুবই স্পষ্ট, আমরা চাই ভালো সম্পর্ক। তবে সেটা 'রেসিপ্রোকাল' হতে হবে, দুই পক্ষকেই চাইতে হবে এবং সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
মূলতঃ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর 'সংখ্যালঘু ইস্যুতে' দুই দেশের সম্পর্কের দৃশ্যমান অবনতি হয়েছে। এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোর ঘটনাপ্রবাহ দুই দেশের মধ্যে যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে - তাতে এই বৈঠকে কী আলোচনা হয়, এবং এখান থেকে নতুন কোন দিকে পরিস্থিতি মোড় নেয় কী-না তা নিয়ে আগ্রহ আছে মানুষের মনে।
সর্বশেষ গত দুই সপ্তাহের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য বিবৃতি ছাড়াও বাংলাদেশে সনাতম ধর্মাবলম্বীদের একজন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে 'রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ করে' গ্রেফতারের ঘটনার জের ধরে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে হামলার ঘটনায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে।
এ ঘটনায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মাকে গত মঙ্গলবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে ভারতের কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরে এসেছেন। এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর মি. ভার্মা সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, কোনো নির্দিষ্ট একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক মূল্যায়ন করা যাবে না।
আপনার মতামত লিখুন :