ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং পরবর্তীতে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত রাজনৈতিক সম্পর্ক এক অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে। এই অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে সম্প্রতি দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। এবার ঢাকায় ভারত-বাংলাদেশ উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটি হবে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সরকারি বৈঠক।
পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে প্রস্তাবিত ওই বৈঠকে যোগ দিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলে এটি হবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ঢাকায় উচ্চপর্যায়ের প্রথম কোনো বৈঠক।
কূটনৈতিক একাধিক সূত্র মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছে। গত সপ্তাহে দিল্লির একাধিক সূত্র এই প্রতিবেদককে ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের প্রস্তুতির কথা জানায়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। এর জেরে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরের ঘনিষ্ঠতার ছন্দপতন ঘটে। সাম্প্রতিক ইতিহাসের চরম অস্বস্তি আর টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক।
ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রকাশ্যে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করে সম্পর্কে অস্বস্তি বাড়িয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের একাংশের অপতথ্য ও ভুল তথ্যের অব্যাহত প্রচার বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।
অবশ্য ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ফোনালাপ হয়। ওই ফোনালাপে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনার সময় নরেন্দ্র মোদি সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গটি তোলেন।
এ টানাপোড়েনের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর। নিউইয়র্কের ওই আলোচনায় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে কথা হয়।
৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের লোকজনের জন্য ভারতীয় ভিসার স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে না। শুধু জরুরি চিকিৎসা ভিসা এবং তৃতীয় দেশ সফরের জন্য ভিসা সেবা চালু রয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে জনবলের ঘাটতিকে ভিসা সেবা সীমিত করার কথা বলছে। জনবল বৃদ্ধির পর পুরোদমে ভিসা সেবা চালুর আশ্বাস দিয়েছে ভারত।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিচ্ছে, ডিসেম্বরে ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠকের পর পুরোদমে ভিসা সেবা চালু এবং বিভিন্ন খাতের বৈঠকগুলো শুরু হতে পারে। সূত্র : প্রথম আলোর
আপনার মতামত লিখুন :