শিরোনাম
◈ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঢাকা সিটি কলেজে, অনিশ্চয়তায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী ◈ মহিষের বীর্য বিক্রি করে মাসে আয় ৭ লাখ টাকা! ◈ আজিমপুরে দিনেদুপুরে ডাকাতি করতে ঢুকে মালামালের সঙ্গে শিশুকেও নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা ◈ দুই ম্যাচ হাতে রেখেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতলো ইংল্যান্ড ◈ শিল্পাঞ্চলসমূহে সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করে প্রতারণা ◈ শেখ হাসিনার বক্তব্যে অস্বস্তিতে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো, জবাব চাওয়া হলে উত্তর মেলেনি ◈ বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন নুরুল হক নুর ◈ ১৫ বছরের শাসনকে কয়েক সপ্তাহে মোকাবিলা করা সহজ নয়: আসিফ নজরুল ◈ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ, কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার? ◈ ফেসবুকে ‘হারপিক’ নিয়ে তোলপাড়, জানা গেল কারণ (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১১:৫৬ দুপুর
আপডেট : ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ০৭:০৬ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১৪ বছরেও হয়নি দ্বিতীয় তেল শোধনাগার

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশে বর্তমানে বছরে পরিশোধিত-অপরিশোধিত মিলে প্রায় ৭৫ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে, যার অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানির কারণে বছরে লাখ লাখ ডলারের বৈদেশিক মুদ্র হারাচ্ছে সরকার।

পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে প্রায় ১৪ বছর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মধ্যে ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে, এটা ধরে গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল খালাসের এসপিএম প্রকল্পও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর পরও নানা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় এবং কাকে কাজ দেওয়া হবে এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে দীর্ঘ সময়েও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার।

শেষের দিকে গত আওয়ামী লীগ সরকার প্রকল্পটির কাজ বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমকে দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করেছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এসে এস আলমকে বাদ দেওয়ার পর এখন প্রকল্পটি নতুন করে আশার আলো দেখছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবাযনের কাজটি চেয়েছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। পরে সেটা বাগিয়ে নেওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় পৌঁছে যায় দেশের এস আলম গ্রুপ। এখন সরকার স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রকল্পটি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখন ডিপিপি প্রণয়ের কাজ চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই অনুমোদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথে এগোবে সরকার। এর অংশ হিসেবে আজ (শুক্রবার) ইআরএল-২ প্রকল্পটি পরির্দশে যাবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল করীম।

বিষয়টি নিয়ে ইন্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিপিপি প্রণয়ের কাজ চলছে। আশা করছি এবার দ্রুততম সময়ের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সরকার। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা জরুরি। কারণ ইন্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন করা হবেÑ এটা ধরে নিয়েই সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) বা সাগরে ভাসমান জেটি নির্মাণ ও পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা ৭৫ লাখ টন। তবে মাত্র ১৫ লাখ টন পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে ইআরএলের। চাহিদা বাড়তে থাকলেও বাড়েনি শোধনক্ষমতা। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ১৯৬৮ সালের ৭ মে ইআরএল উৎপাদন শুরু করা ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের বার্ষিক শোধনক্ষমতা ১৫ লাখ টন। প্রায় দুই দশক আগেই এ স্থাপনাটির আয়ুষ্কাল ফুরিয়েছে। পরিশোধন ক্ষমতা নেমে এসেছে ১০ লাখ টনে। স্থাপনাটি ৫৫ বছরের পুরনো। ফলে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর সংস্কারের পাশাপাশি নতুন একটি ইউনিট স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। তারপরও নানা পক্ষের স্বার্থকে কেন্দ্র করে সিদ্ধান্তহীনতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার।

ইআরএলে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল থেকে বিভিন্ন গ্রেডের পরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হয়। ইআরএলে উৎপাদিত পণ্য দ্বারা দেশের পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা সম্পূর্ণ পূরণ করা সম্ভব হয় না। বর্তমানে দেশের পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদার মাত্র ২০ ভাগ ইআরএলের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। বাকি ৮০ ভাগ পরিশোধিত জ্বালানি তেলের সিংহভাগ আমদানি এবং সামান্য কিছু অংশ দেশীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করে চাহিদা পূরণ করা হয়।

জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, ইআরএলের প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে প্রাপ্ত পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যয় বর্তমানে আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যয় অপেক্ষা প্রতি ব্যারেলে প্রায় ৯-১০ মার্কিন ডলার কম। ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদনের জন্য বিপিসি ৩ মিলিয়ন টন পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ইন্সটলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করতে চায়।

এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ইআরএলের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হবে। ইআরএল ইউনিট-২ স্থাপিত হলে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের গুণগতমান অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং পরিচালনাগত ব্যয়ও বহুলাংশে হ্রাস পাবে। এ ছাড়া মাদার ভেসেল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি জ¦ালানি তেল শোধনাগারে পৌঁছনোর জন্য গভীর সমুদ্র থেকে স্থলভাগ পর্যন্ত বাস্তবায়িত এসপিএম প্রকল্পটি পুরোপুরি কাজে লাগবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৮-২০০৯ সালে ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় পাকিস্তানভিত্তিক এনার পেট্রোটেক লিমিটেড ‘বিএমআরই অব ইআরএ’ নামে একটি সমীক্ষা চালায়। ২০০৯ সালে তাদের সমীক্ষা রিপোর্ট দাখিল করে। পরে থ্রি-ডি সমীক্ষা রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পের প্রাথমিক রিফাইন কনফিগার রিপোর্ট প্রদান করে ফ্রান্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফিড সার্ভিসেস কন্ট্রাকটর টেকনিপ। এ ছাড়া প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল) সাপ্লিমেন্টারি রিপোর্ট ফর ইআরএল-২ প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ রিপোর্ট দাখিল করে। পরে ২০২১ সালের পুনরায় ফিজিবিলিটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের ডিপিপি পুনর্গঠন করে সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর বিপিসিতে পাঠানো হয়, যা একই বছর ১৭ অক্টোবর বিপিসি কর্তৃক জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়। পরে গত ২২ সেপ্টেম্বর ডিপিপি পুনরায় প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এখন নতুন করে ডিপিপি পুনর্গঠনের কাজ চলছে।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইআরএলের সরবরাহকৃত বার্ষিক প্রায় ৩ লাখ টন ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। ইআরএল ইউনিট-২ নির্মাণ হলে বার্ষিক ৪ লাখ টন ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া ইআরএল ইউনিট-২ তে প্রায় ৬০ হাজার টন এলপিজিও উৎপাদিত হবে, যাতে টেকসই জ¦ালানি নিশ্চিয়তা বাড়বে। ইআরএলের বিদ্যমান প্রাঙ্গণে ৫৯ একর খালি জায়গায় প্রকল্পটির মূল ইউনিটসমূহ স্থাপিত হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ দশমিক ৫৫ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ১১ লাখ টন ডিজেল, প্রায় ৫ লাখ টন জেট ফুয়েল, প্রায় ৪ লাখ টন ফার্নেস অয়েল, প্রায় ২ লাখ টন লুব বেজ অয়েল এবং প্রায় ৬ লাখ টন গ্যাসোলিনসহ অন্যান্য পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য পাওয়া যাবে।

বিপিসি বলেছে, আলোচিত প্রকল্পটি চলমান এসপিএম উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসপিএম প্রকল্পের মাধ্যমে বার্ষিক ৯.০ মিলিয়ন টন (৪.৫ মিলিয়ন টন ক্রুড অয়েল ও ৪.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন ফিনিশড প্রোডাক্ট) পেট্রোলিয়াম পণ্য অয়েল ট্যাংকার হতে আনলোডিং করা সম্ভব হবে। বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ টন অপরিশোধিত তেল নিয়ে একটি মাদার ট্যাংকার কুতুবদিয়ায় আসে। পরে বিপিসির দুটি লাইটার ভেসেলের মাধ্যমে মাদার ট্যাংকার থেকে অপরিশোধিত তেল আরএম-৭ জেটির মাধ্যমে রিফাইনারিতে আনা হয়। এই ধরনের একটি অপারেশন সম্পন্ন করতে প্রায় ১১ দিন সময় লাগে। ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পটি বাবস্তবায়িত হলে এসপিএম প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন মাদার ট্যাংকার হতে পেট্রোলিয়াম পণ্য মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় আনলোডিং করা সম্ভব হবে। এর ফলে এসপিএম প্রকল্পকেও সম্পূর্ণ সক্ষমতায় ব্যবহার করা যাবে।

সুত্র : দৈনিক আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়