শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:১২ দুপুর
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সংস্কারের ধীর গতি ও কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা, যা বলছেন উপদেষ্টারা

বিবিসি বাংলা : অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়ার পর দু’মাসের বেশি সময় পার করেছে। এর মধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পর কাজ শুরু করেছেন সংস্কার কমিশনের প্রধানরা।

এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে, নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। দায়িত্ব নেয়ার পর যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল তা বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

কেউ কেউ মনে করছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। তবে যেসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে তাতে ‘ধীর গতি বললে অন্যায় হবে’ বলেই মত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার। এদিকে, বিশ্লেষকরা বলছেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ‘গুরুত্ব’ নির্ধারণ করে কাজ এগিয়ে নেয়ার কথা।

অন্তর্বর্তী সরকারের দু’মাস

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর গত ১১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ওই ভাষণে বিচার বিভাগ, ব্যাংক খাত, প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনার ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টা। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন। তবে এখনো শৃঙ্খলা ফিরেনি প্রশাসনে। স্বস্তি ফেরেনি নিত্যপণ্যের বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক ক্ষেত্রে।

গত রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাজার করতে এসে তানিয়া বলেন, ‘নতুন সরকার আসার পর চলাফেরা করে, কথাবার্তা বলে ভালো লাগলেও কমেনি নিত্যপণ্যের দাম। এক শ’ টাকার নিচে তো কিছু নাই।’

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সরকার যতোটুকু সম্ভব কাজ করার চেষ্টা করছে। তারপরও কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে, পুলিশ ঠিকমতো কাজ করছে না।’

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে গণপিটুনিতে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে শেষ দু’মাসেই মারা গেছেন ৪৯ জন।

এছাড়াও চাঁদাবাজি আর দখলের খবরেও সয়লাব গণমাধ্যম।

দায়িত্ব নেয়ার দু’মাস পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারা বা রদবদল করেও প্রশাসনে গতি ফেরাতে না পারার মতো বিষয়গুলো নিয়েও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘দু’মাস বেশি সময় না, আবার যেগুলো প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন ছিল, সেদিক থেকে কম সময়ও না। জনসাধারণ সরকার থেকে চায় জীবনের নিরাপত্তা এবং জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের ক্ষমতা।’

তিনি বলেন, ‘বাজারের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তার অবস্থা দেখে আমরা পরিস্কার বুঝতে পারছি যে এই প্রাথমিক কাজ দু’টোই আমাদের সরকার যথেষ্ট করতে পারেনি এখনো। এক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ না দিয়ে সরকার সমালোচনার বাইরে থাকতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি।

আরো যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম অবশ্য সরকারের কাজের গতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘বিশেষ করে অসময়ে বন্যার কারণে এ সরকার পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বন্যার কারণেও সরকার যে সময় যে উদ্যোগগুলো নেয়ার কথা সে উদ্যোগগুলো নেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পিছিয়ে যেতে হয়েছে যার প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতেও। এছাড়া পাহাড় ও গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে এই সরকারকে।

অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সেক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের মধ্যে নিজস্ব কাজের পরিমণ্ডলের মধ্যে যারা কাজ করছেন তাদের আত্মস্থ করতে কম সময় লাগলেও নতুনদের জন্য বিষয়গুলো আত্মস্থ করতে সময় লাগার কারণে কিছুটা ধীর গতি থাকতে পারে বলে মনে করেন।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পক্ষের বিভিন্ন দাবি উত্থাপন সরকারের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামো সংস্কারেও বাধা সৃষ্টি করছে। এতে অনেকক্ষেত্রেই স্বাভাবিক কাজ এগিয়ে নেয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একসাথে অনেকগুলো সংস্কার কাজ হাতে নেয়াটা চ্যালেঞ্জিং।’

তিনি আরো বলেন, ‘একদিকে দুর্নীতি, আরেকদিকে রাজনীতি, সংবিধান, অর্থনীতি, সমাজনীতি, পরিবেশ, আইন এই যে বিভিন্নমুখী সংস্কারগুলো একসাথে, একই সময়ে চাওয়া মানে হলো বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একইসাথে চাপের ভেতরে ফেলার উদ্যোগ নিচ্ছেন। ফলে এর সাথে স্বার্থসংশ্লিষ্ট লোকেরা চাইবেই গতিকে ধীর করে দেয়া, এখান থেকে যেন খুব বেশি লাভ না হয়। এ বিষয়গুলোকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়।’

ধীর গতি নিয়ে যা বলছেন উপদেষ্টারা

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মনে করছেন, ‘রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠন হওয়া এই সরকারকে অন্যদের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক চ্যালঞ্জ ছিল। পুলিশ প্রশাসন এখনো পুরোদমে কাজ করছে না। আইনশৃঙ্খলার অবস্থা অত ভালো ছিল না। এগুলো দেখতে হচ্ছে। এগুলো চোখে দেখা যায় না, কিন্তু কাজগুলো করতে হয়। সেক্ষেত্রে কিছু কাজকে প্রাধান্য দিতে হয়েছে। ফলে ধীর গতি বললে অন্যায় হবে।’

১৫ বছরের জঞ্জাল দূর করা সোজা কথা না মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে অনেকগুলো সিন্ডিকেট আছে। তাদের চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এটা অনেক বড় কাজ।’

শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও অনেকটা একই কথা বলছেন এ বিষয়ে।

তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব নেয়ার পর প্রশাসনের অবিন্যস্ত অবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শৃঙ্খলায় আনা এবং শিক্ষা ও আর্থিক খাতসহ সবক্ষেত্রে ‘অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থার’ মধ্যে দায়িত্ব নিতে হয়েছে। হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে গেছে আগের সরকার সেটার প্রভাব এখন বাজারে পড়ছে। এটাতো তাৎক্ষণিক সমাধান হবে না, একটু সময় লাগবে।’

এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন দাবি নিয়ে আসা এবং তাৎক্ষণিক সেটির সমাধান চাওয়ার প্রবণতার কারণেও মূল কাজ এগিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সরকার কি কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে?

গত ২১ সেপ্টেম্বর সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, ‘টেবিলের ওপর জগ থাকবে না প্লাস্টিকের মগ থাকবে, এটা কোনো বিবেচ্য বিষয় না। এটা কোনো পরিবর্তন না। পুলিশের জার্সি চেঞ্জ হবে না লোগো চেঞ্জ হবে, স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন হবে এগুলো মুখ্য ব্যাপার না। সংস্কারের রোডম্যাপ না দেয়ার সমালোচনাও করেন তিনি।’

এদিকে, নিত্যপণ্যের দাম ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মতো বিষয়গুলো এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। জরুরি বিষয়গুলো এড়িয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সরকার বেশি আলোচনা করছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের একটি খবর শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারী আর এইচ রিফাত হাসান লিখেছেন, ‘এগুলো নাকি সংস্কার! দ্রব্যমূল্যের কারণে দেশের মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। ওইখানে সংস্কার না করে বাঙালি জাতির ইতিহাস বাতিল করতে এসেছে।’

একই প্ল্যাটফর্মে দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শারমিন রহমান নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন, ‘দেশ সংস্কার আপনারা পরে করেন। আগে মাসের সংস্কারটা জরুরি। যেহেতু দ্রব্যমূল্যের দামের সাথে তাল মিলিয়ে বেতন বাড়ছে না, আবার দ্রব্যমূল্যের দাম না কমে উল্টা বেড়েই চলছে তাহলে ১৫ দিনে মাস হোক। ক্যালেন্ডারের পাতায় ১২-এর জায়গায় ২৪ মাস হোক। কারণ সবার বেতন তো ১৫ দিনের আগেই শেষ হয়ে যায়।’

তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তার মতে, ‘কিছু বিষয় গণমাধ্যমে বেশি আসায় হয়তো সেগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। নিরাপত্তা, যানজট ও দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে দ্রুত একটা সমাধান যদি আমরা করতে পারতাম, তাহলে অবশ্যই সবাই বলতো দৃশ্যমান কিছু হয়েছে।’

মেট্রোরেলের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ‘আগের সরকার এক বছরের কথা বললেও এই সরকার ইতোমধ্যে এটি চালু করেছে। অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকেও প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কম বা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে না বরং প্রত্যেকে যার যার মন্ত্রণালয়ের কাজ করছেন। কোনোটা বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে, কোনোটা কম দৃশ্যমান হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমরা এটা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করবো।’

কীভাবে কাজে আরো গতি আসতে পারে?

গত সেপ্টেম্বরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স থেকে ‘জাতীয় জরিপ ২০২৪: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশা’ নামে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়।

দেশের ১৭টি জেলার ১ হাজার ৮৬৯ জনকে নিয়ে করা এ জরিপের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ ভোটার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা জানায়। যার অর্থ দাঁড়ায় নিত্যপণ্যের দাম কিংবা নিরাপত্তার মতো ইস্যুতে ভোগান্তি সত্ত্বেও জনগণের একটি বড় অংশ সরকারের ওপর আস্থাশীল। তবে এই আস্থা ধরে রাখতে দ্রুত সমস্যাগুলোর সমাধান করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সরকারের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করা জরুরি বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রে ন্যূনতম কিছু বিষয় শুরু করে পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে কাজগুলো এগিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘আশু কর্তব্যের ক্ষেত্রে হয়তো তারা একটু পিছিয়ে পড়েছেন। এর চাইতে তারা দীর্ঘমেয়াদের কাজের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে সরকারের এখন গুরুত্ব নির্ধারণ করে আশু, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা এবং সে অনুযায়ী রোডম্যাপ করা প্রয়োজন।’

বর্তমান সরকার পুরনো ‘নীতিকাঠামো’ অনুসরণ করে পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ মোয়াজ্জেম, ‘যেটা আসলে সম্ভব না’। আবার ওই ধরনের কাঠামোগত সংস্কার অল্প সময়ে চাইলেও সম্ভব না। এরজন্য সময়ও প্রয়োজন। কিন্তু তার জন্য প্রথমে যে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন সেটিও এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না বলেই মন্তব্য করেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে ক্ষেত্র অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ বোর্ড তৈরি করে কাজের গতি আনা যেতে পারে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়