বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গেলো জুলাই ও আগস্ট মাসে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই অংশ হিসেবে নতুন প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়েছে। বিচারের জন্য আইন সংশোধন ও ভবন মেরামতের কাজও চলমান। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ হবে।
স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরে ২০১০ সালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ওই বছরের ২৫ মার্চ। পরে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তবে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুটিকে একীভূত করে আবার একটি ট্রাইব্যুনাল বহাল রাখা হয়। ফলে একটি ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকার্য চলমান ছিল।
এদিকে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পর পতন ঘটে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের। এর পরপরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দল, দলটির সুবিধাভোগী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের হতে শুরু হয়। সেসব অভিযোগের বিচারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন ও আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়াকে সচল করতে উদ্যোগী হয়ে ওঠে।
গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সুপ্রিম কোর্টে এসেছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সেদিন তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে ট্রাইব্যুনালের জন্য বলা হতো, বিচারপতি সংকট। হাইকোর্টে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে। ছুটি (দুর্গাপূজার) শেষ হলে দুই বা তিন দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে।
কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, জুলাই-আগস্টের গণহত্যা-মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য তিন সদস্যের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হবে। আপাতত একটি এজলাস কক্ষেই বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি করা হবে হাইকোর্ট বিভাগের নবনিযুক্ত বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে। তার সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের আরও একজন বিচারপতিকে সদস্য হিসেবে রাখা হবে। আর দ্বিতীয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে একজন আইনজীবী কিংবা অধস্তন আদালতের কোনও বিচারককে। অর্থাৎ, হাইকোর্টের দুজন বিচারপতি ও হাইকোর্টের বিচারপতি নন এমন একজনসহ মোট তিন জনের সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হবে। তবে মামলার গুরুত্ব ও আধিক্য বিবেচনায় ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা পরবর্তী সময়ে বৃদ্ধি করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় বিভিন্ন আদালতে দায়ের হওয়া মামলাগুলো সরকার গেজেটের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের অধীনে বিচারের জন্য নিয়ে আসবে। একই ঘটনায় যেহেতু একাধিক অপরাধ বা মামলা হয়েছে তাই মামলার আধিক্য কমাতে ট্রাইব্যুনালে ‘ক্রাইম সিন বেসড’ বিচার হবে বলেও সূত্র জানায়।
তবে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন ও বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে এখনই ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানতে চাওয়া হলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই বিচার প্রক্রিয়াটি খুবই স্পর্শকাতর। বিশ্বের সবাই এই বিচারের ওপর, এই বিচার প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখবে। বিগত জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে সেসব অপরাধের অপরাধীদের বিচার করতে রাষ্ট্র প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গুম হওয়া ১২ জনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে গুম করে নির্যাতন করার অভিযোগ দায়ের করেছেন। অপরদিকে গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ভারতে অবস্থান করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে এ নিয়ে মোট ৫২টি পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হলো। প্রসিকিউশন অফিসে এখন পর্যন্ত ৩৯টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এর আগে তদন্ত সংস্থায় ১৬টিসহ মোট ৫৫টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। উৎস: বাংলাট্রিবিউন।
আপনার মতামত লিখুন :