শিরোনাম
◈ শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠনের ঘোষণা, রাজনীতিতে নানা আলোচনা ◈ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের সহযোদ্ধাদের হুমকি দিচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে: আখতার হোসেন (ভিডিও) ◈ ভারতের সাম্ভালে মুসলিম সংসদ সদস্যকে বিদ্যুৎ চুরির জন্যে ২ কোটি টাকা জরিমানা ◈ কেউ যেন জাতির মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে না পারে: মির্জা ফখরুল (ভিডিও) ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অসন্তোষ, ২০২৫ সালেই নির্বাচন চায় বিএনপি নেতারা ◈ পুলিশ ও জনগণ একে অপরের পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে কাজ করবে: সিটিটিসি প্রধান  ◈ বড়দিন উপলক্ষে নৌভ্রমণ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ৩৮ জনের প্রাণহানি ◈ বিএনপি অফিসে আ.লীগের হামলা, আহত ১০ ◈ ২৫ ক্যাডারের নতুন সংগঠন ◈ চলতি মাসের ২১ দিনে এক টাকাও রেমিট্যান্স আসেনি যে ১০ ব্যাংকে

প্রকাশিত : ০৭ অক্টোবর, ২০২৪, ০২:১১ রাত
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দলগুলোর চাপ কী আরো বাড়লো?

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন।। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দফায় সংলাপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাতে ‘দ্রুত নির্বাচন’ কিংবা ‘নির্বাচন কবে হবে সেই রোডম্যাপ’ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ আরেকটু বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। তাদের মতে, সরকার গঠনের পর পর প্রথম দফার সংলাপে নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসলেও তখন নতুন সরকারকে সমর্থন জানানোটাই ছিল মুখ্য বিষয়। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট ধারণা পেতে চাইছে দলগুলো।

যদিও সরকারের তরফ থেকে আগেই বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের জন্য যে কমিশন গঠন করা হয়েছে; তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনার পর নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবারের সংলাপের পর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একটি ন্যূনতম ঐকমত্যে এলে এর ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনের টাইমলাইন বা সময়সীমা।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, জরুরি সংস্কার শেষ করে দ্রুতই নির্বাচনের দিকে যাওয়াই যে সরকারের এখন একমাত্র কাজ-সেটিই তার দলের পক্ষ থেকে সংলাপে বলা হয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, নির্বাচনের দায়িত্ব সরকারের এবং নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়টি তার দলীয় প্রধান শনিবারের সংলাপে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো বহু বছর পর একটি ভালো নির্বাচনের জন্য যে মুখিয়ে আছে সংলাপে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আরেকজন বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে দলগুলো তাগাদা দিলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে আগের অবস্থান- অর্থাৎ সংস্কার শেষে নির্বাচন- সেটিই প্রকাশ করেছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে সরকারের মেয়াদ নিয়ে বলেন, আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন, সেটাই হবে তারিখ। অবশ্য এর আগে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, গণতন্ত্রে উত্তরণ এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে হওয়া উচিত।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনই তাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি। তবে নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে তারা সরকারের কাছে কোনো মাস বা দিনকালের কথা বলেননি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনার প্রধান বিষয় হচ্ছে নির্বাচন–সম্পর্কিত। কবে নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে একটি রোডম্যাপ দিতে বলেছি। আমি মাস, দিন, কাল নিয়ে কথা বলব না। উনি (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদের বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান তাদের ১ নম্বর প্রায়োরিটি। 

সংলাপে নির্বাচনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিএনপি চাপ তৈরির চেষ্টা করলো কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সংস্কার করতে দীর্ঘসময় লেগে গেলে গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ অস্থির হয়ে যেতে পারে। ভিন্ন পরিস্থিতির আশংকা তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। আমরা চাই না অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হোক। সেজন্য দ্রুতই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। সরকারের দুই মাস হয়ে গেলো। দৃশ্যমান অগ্রগতি কিন্তু কম। সবকিছুই ধীরগতিতে চলছে। এজন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বলেছে জরুরি সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের দিকে এগিয়েই যাওয়াই এখন সরকারের একমাত্র কাজ। তার মতে, কম সময়ের মধ্যে নির্বাচিত সরকারের শাসন ফিরিয়ে এনে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই হবে বড় সংস্কার।

শনিবার বিকেলে বিএনপির পরপরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে বসে জামায়াতে ইসলামী। সংলাপ শেষে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দেয়া দুটি রোডম্যাপের মধ্যে একটি হবে সংস্কারের, আরেকটি নির্বাচনের। সংস্কার সফল হলেই নির্বাচন সফল হবে। নিরপেক্ষ ও ভালো নির্বাচনের জন্য সরকারকে তারা যৌক্তিক সময় দিতে চান। কিন্তু সেই যৌক্তিক সময় কতদিন হতে পারে সেটি আগামী বুধবার প্রকাশ করবেন।

দলটির মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, তার দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বলা হয়েছে যে নির্বাচনের খবর তারা সরকারের কাছ থেকেই জানতে চান। কারণ দায়িত্বটা তাদের। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচন সম্পন্ন করাই ওদের দায়িত্ব। তবে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সেটা হতে হবে। এজন্য একটি রোডম্যাপ হতে পারে সংলাপ কতদিনে শেষ হবে, আরেকটি হতে পারে নির্বাচন নিয়ে।

ওদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও অন্য যেসব দল সংলাপে অংশ নিয়েছে তাদের মন্তব্যেও নির্বাচনে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। তারা বলেছে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে না। এটিই তুলে ধরা হয়েছে। তাই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এখনই শুরু করা প্রয়োজন বলেও কোনো কোনো দল সংলাপ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে মন্তব্য করেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সরকার সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের কাজও এগিয়ে নেবে।

সংস্কারে গঠিত কমিশনগুলো রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে ৩ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। এরপর সরকার আবার কথা বলবে। এরপর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংস্কারের বিষয়ে একটি ঐকমত্য এলে এর ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনটা হতে কতদিন লাগবে। শনিবারের সংলাপের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে যেসব বক্তব্য এসেছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন ও রাশেদা রওনক খান উভয়েই বলেন, নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর যে আকাঙ্ক্ষা সেটিই আগের চেয়ে দৃঢ়ভাবে উঠে এসেছে এবারের সংলাপে।

দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। জোবাইদা নাসরীন বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই নির্বাচনের বিষয়ে তাগাদা দিয়ে জরুরি সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে আসছে। এবার মনে হলো সব দলের কণ্ঠেই নির্বাচনের ইস্যুটা আরেকটু জোরালো হয়ে এসেছে। নির্বাচনের সময় নিয়ে সেনাপ্রধান ও উপদেষ্টার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য আগে গণমাধ্যমে এসেছে। সে প্রেক্ষাপটে দলগুলোর এ অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমি মনে করি।

অন্যদিকে ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, যেসব দল সংলাপে অংশ নিয়েছে তারা বহু বছর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। সে কারণে একটি ভালো নির্বাচনের জন্য তারা মুখিয়ে আছে। সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে সরকারের সঙ্গে সংলাপে। দলগুলো কর্মী ও সমর্থকরা বহু বছর একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লড়াই করেছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর তৃণমূলের দিক থেকেও চাপ বাড়ছে বলেই কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে দ্রুত নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। আসলে সবাই চাইছে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ যেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ করতে পারে। এবারের সংলাপে তাই নির্বাচন প্রসঙ্গ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়