শিরোনাম
◈ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ: এবারও ডাক পায়নি জাপা ◈ নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা, বেঁচে গেলেন অল্পের জন্য ◈ সিনওয়ারের মরদেহ নিয়ে ‘দর কষাকষি’ করতে চায় ইসরায়েল ◈ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : সাড়ে চারশ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হাত বদল ◈ এবার ভয়ংকর সেই আয়নাঘর নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন ◈ নির্বাচনের সময় নিয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ নজরুল ◈ পরীক্ষা দিতে এসে আটক রাবি ছাত্রলীগের ২ নেতা ◈ বিশ্বের ১১০ কোটি তীব্র দরিদ্র মানুষের মধ্যে প্রায় ২৫ কোটি থাকেন ভারতেই!  ◈ দ্বিতীয় বিয়ে করতে যাওয়ার পথে বরের ওপর সাবেক স্ত্রীর হামলা ◈ এবার শাহবাগে বিক্ষোভ করছে আউটসোর্সিং কর্মচারীরা : চাকরি জাতীয়করণের দাবি

প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৫:২৮ বিকাল
আপডেট : ১৪ অক্টোবর, ২০২৪, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সারা দেশের নতুন ডিসিরা এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে

ডেস্ক রিপোর্ট : সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশাসন নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সরকারের মধ্যে। সম্প্রতি নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে একের পর এক ঘটনার জন্ম হওয়ার প্রেক্ষাপটে সারা দেশের নতুন ডিসিরা এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। এ নিয়োগের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের প্রশ্নও এখন সামনে এসেছে। এরই মধ্যে এক কর্মকর্তার কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার ক্যাশ চেকসহ চিরকুট পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

নতুন ডিসি রাসরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নতুন ডিসিরা ক্ষমতা হারানো হাসিনা সরকারের ‘সুবিধাভোগী’ কি না, আগের সরকারের মন্ত্রী-সচিবদের এপিএস, পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কি না, ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে চাকরিজীবনের বদলি-পদায়নসহ সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। তাঁরা গত ছয় মাস প্রশাসনের কোথায় ছিলেন, কাদের সঙ্গে চলাফেরা ও উঠাবসা করেছেন তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা কী ছিল, তাতেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি। তবে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠার পর সরকার ডিসিদের প্রকৃত ‘আমলনামা’ জানার চেষ্টা করছে।

ডিসিদের নিয়ে নানামুখী আলোচনার মধ্যেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি (নিয়োগ, পদায়ন, প্রেষণ) অনুবিভাগের এক যুগ্ম সচিবের কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার একটি ব্ল্যাংক চেক উদ্ধার করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

অভিযোগ উঠেছে, পদায়ন হওয়া এক জেলা প্রশাসকের পক্ষে ওই যুগ্ম সচিবকে এই চেক দেওয়া হয়। তবে কাঙ্ক্ষিত জেলায় পদায়ন না হওয়ায় ওই ডিসির চেকের বিপরীতে টাকা জমা হয়নি। চেক পাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় পুরো প্রশাসনে। বিষয়টি তদন্ত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার।

কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়, এ কমিটি চেকের সত্যতা যাচাই করে আগামী তিন দিনের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করবে।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন ডিসিরা মাঠে ভালোভাবে কাজ করছেন। এগুলো কিছু নয়। ডিসি নিয়োগে চেকের মাধ্যমে লেনদেনের অভিযোগ তদন্ত করতে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের আগেই আমরা প্রতিবেদন পাব বলে আশা করছি।’    

সূত্র জানায়, গত ৯ ও ১০ সেপ্টেস্বর দুই দফায় ৫৯টি জেলায় নতুন করে ডিসি নিয়োগ দেয় সরকার। মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক যাচাই-বাছাই করে ফিটলিস্ট তৈরি করা হলেও এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার নানা অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত হওয়া বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তারা।

বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ প্রশাসনের সুবিধাভোগী এসব কর্মকর্তাকে ডিসি হিসেবে পুরস্কৃত ও পুনর্বাসন করায় নজিরবিহীন হট্টগোলে জড়ান বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা। তাঁদের অভিযোগ, খুব সচেতনভাবে ত্যাগী, বঞ্চিত ও যোগ্য কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা নিয়েই আওয়ামী লীগ পরিবার সংশ্লিষ্ট এবং বিগত ১৫ বছরে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদেরই আবার ডিসি পদে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের দুই যুগ্ম সচিব ড. জিয়া উদ্দীন আহমেদ ও কে এম আলী আযমের দিকে অভিযোগের তীর তোলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা অবিলম্বে বিতর্কিত ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৯টি জেলার ডিসির নিয়োগ বাতিল এবং চারটি জেলায় রদবদল করে পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ব্রিফিং ছাড়াই সদ্য নিয়োগ দেওয়া ডিসিরা কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেন।

এরই মধ্যে ৫১টি জেলার ডিসি নিজ নিজ জেলায় যোগদান করলেও বিভিন্ন সময় ঢাকা, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, নাটোরসহ কয়েকটি জেলার ডিসির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট জেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে সচেতন নাগরিক সমাজ। এদিকে হট্টগোলকারী কর্মকর্তা চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্যসচিব আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে আরো একটি কমিটিও কাজ করছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, বিএনপি-জামায়াত ঘরানার কর্মকর্তাদের আপত্তির মুখেই নতুন নিয়োগ পাওয়া ৫১ ডিসিকে রেওয়াজ অনুযায়ী কোনো ব্রিফিং ছাড়াই কর্মস্থলে পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ঢাকা, খুলনাসহ অন্তত সাত-আটটি জেলায় নতুন ডিসিরে অপসারণ চেয়ে ডিসি অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে নাগরিক সমাজ, যা নজিরবিহীন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানান প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

সরকারের শীর্ষমহলের নির্দেশে নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের অতীতের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে মাঠে নামেন গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে কিছু কিছু ডিসির বিষয়ে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড ও হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সদ্য নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রত্যাহার করা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলেও জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সূত্র আরো জানায়, এবারের ডিসি নিয়োগে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে শুরু থেকেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী আমলে পদোন্নতিবঞ্চিত বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডিসি করার উদ্যোগ ছিল। এ কারণে হাসিনা সরকারের করা ডিসি ফিটলিস্ট বাতিল ও ডিসি নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করা হয়। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এপিডি (নিয়োগ, পদায়ন ও প্রেষণ) অনুবিভাগ অতিরিক্ত সচিব মো. নাজমুছ সাদাত সেলিমের বদলে নতুন এপিডি হন একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রউফ।

এই অনুবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে বসেন সদ্য পদোন্নতি পাওয়া দুই যুগ্ম সচিব বিসিএস ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও কে এম আলী আযম। বিএনপি-জামায়াত ঘরানা হিসেবে পরিচিত এই দুই কর্মকর্তা শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরদিনই দুই দপ্তরে বসে অফিস শুরু করেন। এপিডি অনুবিভাগের প্রধানকে এড়িয়ে তাঁরা নিজেরাই বদলি-পদায়নের সিদ্ধান্ত দিতেন। এর পেছনে এক কর্মকর্তার কথা শোনা যায়, যিনি দীর্ঘদিন ধরে হাসিনা সরকারের মুখ্য সচিবদের আস্থাভাজন ছিলেন এবং এখনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বহাল রয়েছেন।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, ডিসি নিয়োগ কেলেঙ্কারির কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে এপিডি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব (মাঠ প্রশাসন) কে এম আলী আযমকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর উইং থেকে সরিয়ে সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে বদলি করা হয়। আরেক যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ এখনো স্বপদে বহাল আছেন। তাঁরই কক্ষ থেকে ডিসি নিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের নানা আলামত পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সচিবালয়ে ড. জিয়ার কক্ষ থেকে এসংক্রান্ত কিছু চিরকুটও উদ্ধার করা হয়।

এর মধ্যে একটি চিরকুটে পাঁচজন কর্মকর্তার নাম এবং তাঁদের কাঙ্ক্ষিত জেলাগুলোর নামও লেখা রয়েছে। মূলত বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের অংশ হিসেবেই তাঁদের নাম চিরকুটে লেখা হয়, যে নামগুলো ডিসির জন্য তৈরি করা ফিটলিস্টে রয়েছে। তাঁদের মধ্য থেকে কয়েকজন ডিসি হিসেবে পদায়নও পান। আর পদায়ন পাওয়া উত্তরাঞ্চলের একজন ডিসির কাছ থেকেই তিন কোটি টাকার চেক নেওয়া হয়, যিনি আবার দুর্নীতি দমন কমিশনেই কর্মরত ছিলেন।

তবে ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ওই কর্মকর্তার পক্ষে মো. মীর্জা সবেদ আলী নামের একজন ব্যবসায়ী এই চেক প্রদান করেন। পদ্মা ব্যাংকের লক্ষ্মীবাজার উপশাখা থেকে দেওয়া এই চেকের গ্রাহক কুড়িগ্রাম জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। তবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিন কোটি টাকা নগদায়ন না করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ডিসি নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের পর প্রত্যাহার হওয়ার আশঙ্কায় বাকি টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। ওই চেকের সত্যতা নিয়ে তদন্ত করবে সরকার। সুত্র : কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়