শিরোনাম
◈ শেখ হাসিনাকে ফেরাতে এখনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন আসেনি ◈ মধ্যরাতে উত্তাল ঢাকা কলেজ, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা (ভিডিও) ◈ সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান গ্রেফতার ◈ হরিণ শিকারের কারণেই বিষ্ণোই হয়ে উঠেছেন সালমান খানের প্রধান শত্রু ◈ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত (ভিডিও) ◈ বেনাপোলে জোড়া খুনে ৪ ভাইসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন ◈ শেখ হাসিনা আর রাজনীতি করার জন্য দেশে ফিরতে পারবে না: উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ◈ ‘ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয় নাই, ভোটের কোনো নিশানা কিন্তু দেখি না’ (ভিডিও) ◈ ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ সম্ভাব্য যেসব উপকূলে আঘাত হানতে পারে ◈ বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৯:৪৫ সকাল
আপডেট : ২০ অক্টোবর, ২০২৪, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তীব্র প্রতিবাদের পরও পদ ছাড়ছেন না ঢাবির অর্ধডজন শিক্ষক

নয়া দিগন্ত: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে রাষ্ট্রের সর্বত্র তার অনুগতদের অপসারণ করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসি, প্রোভিসি, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার সবাই পদত্যাগ করেছেন। তালিকায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট, হল ও অনুষদের প্রধানদের অপসারণও। তাদের কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও বেশির ভাগই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধডজন শিক্ষকের ক্ষেত্রে। শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও এখনো পদত্যাগে রাজি হচ্ছেন না তারা। পতিত হাসিনা সরকারের অন্যতম দোসর অভিহিত করে তাদের স্থায়ী অব্যাহতির দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক মশিউর রহমান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিউটের অধ্যাপক এম ওহিদুজ্জামান চান ও মাহবুবুর রহমান লিটু, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রশীদ। ক্যাম্পাসে তারা সবাই আওয়ামীপন্থী শিক্ষক বলে পরিচিত। জানা যায় স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, ধর্মীয় পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তা, শিক্ষার্থীদের নায্য আন্দোলনে বিরোধিতা, মামলার হুমকি দেয়ার অভিযোগে কয়েকজনকে স্থায়ী অব্যাহতির দাবির পাশাপাশি ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে অভিযুক্ত এসব শিক্ষক সবাই এখন আত্মগোপনে। এই শিক্ষকগণ যদি আবার নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টে ফিরে আসে তাহলে ক্লাস বর্জন করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৪ শিক্ষকের অব্যাহতি চায় শিক্ষার্থীরা : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রকাশ্যে জামায়াত-শিবির বলে সম্বোধন ও মামলার হুমকি, স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিনাত হুদারও পদত্যাগ চেয়েছেন একই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও বিভাগটির আরো দুই শিক্ষক সাবেক চেয়ারম্যান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক সাদেকা হালিম ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মশিউর রহমানেরও পদত্যাগের দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। বিভাগে যেন তারা ফিরে না আসতে পারেন সে দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, অধ্যাপক সাদেকা হালিমের ধর্মীয় পোশাক পরিধানকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন সময়ে হেনস্তা করেছেন। এ ছাড়া অধ্যাপক মশিউর রহমান হাসিনা সরকারকে অব্যাহত সমর্থন ও আন্দোলনকারীদের হত্যার পরামর্শ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযুক্ত এই শিক্ষকবৃন্দের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি, বিভাগে তালা প্রদান কর্মসূচি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ভিসির কাছে স্মারকলিপি প্রদান, প্রতিবাদী গ্রাফিতি লিখনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ জারি রয়েছে।

সমাজবিজ্ঞান ১৬ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী বলেন, অধ্যাপক জামাল স্যার হামলা-মামলার ভয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেয়ায় হুমকি এবং শিক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ করানো, বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদানসহ বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেছেন। চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিনাত হুদা প্রকাশ্যে আন্দোলনের বিরোধিতা ও নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীকে পুলিশ ধরার পর তাকে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ ছাড়া অধ্যাপক সাদেকা হালিম ধর্মীয় পোশাক পরিধানকারীদের হেনস্তা করতেন। গণমাধ্যম থেকে আমরা জেনেছি মশিউর স্যার কিভাবে আন্দোলনকারীদের হত্যার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা শিক্ষার্থীরা চাই না তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে ডিপার্টমেন্ট আবার অনিরাপদের কেন্দ্রস্থল হোক।

আইইআরের দুই শিক্ষকের অপসারণ চায় শিক্ষার্থীরা : স্বৈরাচার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা, রাজনৈতিক পেশি শক্তি খাটিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক নিপীড়ন ও ধর্মীয় পোশাকের কারণে শিক্ষার্থীদের হেনস্তা ও অকৃতকার্য করিয়ে দেয়া, শিক্ষক হিসেবে অযোগ্যতা, অনৈতিকতা, চাটুকারিতার মতো অসংখ্য অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিউটের (আইইআর) দুই শিক্ষক অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান চান ও মাহবুবুর রহমান লিটুকে অপসারণের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে একই ইনস্টিউটের শিক্ষার্থীরা। সরকার পতনের পর থেকে লাগাতার আন্দোলন করে আসছে তারা। তবে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের কেউই পদত্যাগ করছেন না। তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এই দুই শিক্ষকের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না।

এর আগে দুই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, গেটে তালা প্রদান কর্মসূচি, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ভিসির কাছে স্মারকলিপি, লংমার্চ টু আইইআরসহ নানা প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত তাদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের তীব্র নিন্দা প্রকাশ করা সত্ত্বেও পদত্যাগ করছেন না তারা।

অধ্যাপক আব্দুর রশীদের পদত্যাগের দাবি : ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন ও মানসিক হেনস্তা, প্রেজেন্টেশন ও ভাইভা বোর্ডে শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ, অ্যাকাডেমিক ক্ষতিসাধন, চাকরির ভাইভায় পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি ও অঞ্চলপ্রীতির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক আব্দুর রশীদের পদত্যাগের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছে একই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তবে এই শিক্ষক এখনো পর্যন্ত পদ ছাড়েননি বলে জানা গেছে।

এর আগে অভিযুক্ত এই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্ররা মানববন্ধন, বিভাগে অবস্থান কর্মসূচিসহ নানা ধরনের প্রতিবাদ করে আসছেন। এই শিক্ষক বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের মতামত, অভিযুক্ত এই শিক্ষককে পদচ্যুত করা না হলে তারা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।

এ দিকে এ বিষয়ে অভিযুক্ত এসব শিক্ষকের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়