শিরোনাম
◈ শেখ হাসিনাকে ফেরাতে এখনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন আসেনি ◈ মধ্যরাতে উত্তাল ঢাকা কলেজ, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা (ভিডিও) ◈ সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান গ্রেফতার ◈ হরিণ শিকারের কারণেই বিষ্ণোই হয়ে উঠেছেন সালমান খানের প্রধান শত্রু ◈ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত (ভিডিও) ◈ বেনাপোলে জোড়া খুনে ৪ ভাইসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন ◈ শেখ হাসিনা আর রাজনীতি করার জন্য দেশে ফিরতে পারবে না: উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ◈ ‘ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয় নাই, ভোটের কোনো নিশানা কিন্তু দেখি না’ (ভিডিও) ◈ ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ সম্ভাব্য যেসব উপকূলে আঘাত হানতে পারে ◈ বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৫:০৫ বিকাল
আপডেট : ২০ অক্টোবর, ২০২৪, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাজার ভাঙ্গা নিয়ে কার কি অবস্থান 

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন : সম্প্রতি ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর দেশের  বিভিন্ন জায়গায় মাজার ভাঙ্গার ঘটনা ঘটছে।  মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে ঘিরে মানুষজন আহতও হয়েছে, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইভেন্ট খুলেও মাজার ভাঙ্গার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এর মাঝে নতুন করে আগামী ১১ই সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলিস্তানে অবস্থিত গোলাপশাহ মাজার ভাঙ্গতে “গুলিস্তানে গোলাপশাহ মাজার ভাঙ্গা কর্মসূচি” শীর্ষক একটি ইভেন্ট খোলা হয়েছে, যাতে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ সাড়া দিয়েছে।
অন্যদিকে মাজার অনুসারীরা একে অন্যায় বলে অভিযোগ করছে। দেশের অনেক জায়গায় তারা এটি প্রতিহতেরও চেষ্টা করেছে। সব  মিলিয়ে মাজার নিয়ে একটি সংঘাতমূলত অবস্থানে পৌছেঁছে দেশের দুটি পক্ষ। 

সাধারণত সুফি বা ধর্মীয় প্রচারকদের কবর কেন্দ্রিক মাজার গড়ে ওঠে। যেখানে অনেকে মনোকামনা পূরণের উদ্দেশ্যে মানত করে থাকেন। তবে এই মাজার সংস্কৃতি ধর্মসম্মত কিনা, তা নিয়ে স্কলারদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। তবে মাজারের বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযোগ হলো অনেক সময় মাজার কেন্দ্রিক ব্যবসা, প্রতারণা, মাদক ব্যবহার হচ্ছে যা নিয়ে ক্ষিপ্ত অনেকেই। 

বিভিন্ন জায়গার মাজার ধংস : 

দেশে মাজার ভাঙ্গার যে হিড়িক চলছে, তাতে সর্বশেষ সংযোজন নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ মাজার। এ জেলার বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় অবস্থিত ওই মাজারে শুক্রবার হামলা ও অগ্নিযংযোগের ঘটনা ঘটেছে, যাতে চারজন আহত হয়েছেন। সেদিন সকাল ৬টার দিকে কিছু লোক ওই মাজারে ঢুকে ভাঙচুর করে। মাজারের ভেতরে থাকা লোকজন তাদেরকে আটকাতে গেলে হামলাকারীরা তাদেরকে মারধর করেন।

এর আগে গত ২৫শে অগাস্ট নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নে আয়নাল শাহ দরগা নামে পুরোনো একটি মাজারও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিলো বলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়া  শাহপরান মাজার কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেন যে ওরসের সময় সেখানে কোনও গানবাজনা হবে না। মাজারের অন্যতম খাদিম সৈয়দ কাবুল আহমদ গতকাল একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মাজারে উরুস উপলক্ষে গানবাজনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হল। কেউ বাদ্যযন্ত্র নিয়ে আসবেন না।”

এর ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, “দেখা গেছে গান বাজনার আড়ালে এইখানে মাদকের ব্যবসা করা হয়। যা আমরা খাদিম পরিবার কোনোভাবে সমর্থন করি না। এগুলোর তীব্র নিন্দা জানাই। এখন থেকে বৃহস্পতিবারের গান-বাজনা বন্ধ থাকবে। কেউ করার চেষ্টা করলে আমরা তা প্রতিহত করবো।”

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এক সপ্তাহের মাঝে সিরাজগঞ্জের দুইটি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ হামলার ঘটনা ঘটে গত তেসরা সেপ্টেম্বর। ওইদিন বিকালে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে ইসমাইল পাগলার মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত ২৯শে অগাস্ট সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের বামনজানি বাজারের পাশে আলী পাগলার মাজারও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই মাজার ভাঙচুরের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, লাঠি-সোঁটা, হাতুড়ি, শাবল হাতে একদল মানুষ মাজারের দেয়াল থেকে শুরু করে ছাউনি, সবকিছু ভেঙ্গে ফেলছে। ভাঙচুরকারীদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ। তাদের বেশিরভাগই পাঞ্জাবী-টুপি পরিহিত ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এতে বলা হয়েছে, মাজারে হামলার আগে মাদ্রাসা ছাত্রসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার লোক স্থানীয় কান্দাপাড়া হাটে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা মাজারে হামলা চালান। মাজারের বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত করার পর তারা দান বাক্স ও পাশেই থাকা খাদেমের ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে নগদ টাকা ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

অবশ্য এই ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া স্থানীয় শালগ্রাম জামে মসজিদের ইমাম গোলাম রব্বানীকে চাকরিচ্যুত করেন গ্রামবাসী। 

এদিকে, নাগরিক টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১১ই জুলাই দিবাগত রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা অবস্থিত তিনশ’ বছরের পুরোনো বিবি সখিনার মাজার ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

মাজার ভাঙ্গা যৌক্তিক ?
মাজার ভাঙ্গা নিয়ে যে ধরনের ক্যাম্পেইন চলছে, সেটিকে অন্যায় মনে করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এই সংস্থার হালাল সনদ বিভাগের উপপরিচালক মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, মাজার শব্দের অর্থ জিয়ারতের স্থান। কিন্তু আমাদের দেশে মাজার বলতে বোঝা যায়, যেখানে পীর-বুজুর্গর কবর। সেটিকে পাকা-টাকা করে অনেকে ওভাবে রাখছে। মানুষ সেখানে জিয়ারতের জন্য যায়।”

তবে ইসলামের মৌলিক বিধান অনুযায়ী কবরের পর সেটিকে পাকা করে “গম্বুজ করা বৈধ না, শরিয়তে অনুমতি নাই, কিন্তু আমাদের দেশে অনেকে করে এগুলা,” বলছিলেন তিনি। এখন, ইসলামে বৈধ না বলে কেউ ওইসব স্থাপনার ওপর আক্রমণ করতে পারে না বলেও তিনি জানান।

“আমরা মাহফিলে, বক্তৃতায়, মসজিদে বলছি যে এগুলা বৈধ না। এখন কেউ যদি করে ইসলাম বিরোধী আচরণ করে, তাহলে এগুলোর (মাজার) ওপর আক্রমণ করাটাও বৈধ না। আপনার-আমার কাজ হল, এগুলো বৈধ নাকি অবৈধ, সেটুকু বলা। নিজের আইন হাতে তুলে নিয়ে মাজারে আক্রমণ করার অনুমতি ইসলাম দেয় না,” তিনি যোগ করেন। মাজার সংস্কৃতির কারণে যদি কারও “অনুভূতিতে আঘাত লাগে”, তবে আইনের দ্বারস্থ হতে হবে।

মাজার ভাঙার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান : 

কয়েকদিন ধরে টানা মাজার ভাঙ্গার ঘটনা ঘটায় সরকারকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। মাজার ভাঙ্গা প্রসঙ্গে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান গণমাধ্যমে বলেছেন, “আমরা এ ব্যাপারটি খুব সিরিয়াসলি দেখছি। এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।”

এই ঘটনাটি “গ্রহণযোগ্য না” উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন যে তাদের পক্ষ থেকে যতদূর সম্ভব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়োজিত করে যেন কাজ করা যায়, সেই চেষ্টা চলছে। “আমরা এর বিরুদ্ধে প্রথমদিন থেকে অবস্থান নিয়েছি। আমরা বারবার বলছি, আমাদের প্রতি ফ্যাসিবাদী শাসকের পক্ষ থেকে যে আচরণ করা হয়েছিলো, সেই ধরনের আচরণ যেন কারো প্রতি কোনোভাবেই না হয়, সেটি নিশ্চিত করবো। 

এদিকে এ ব্যাপারে আজ মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনও। রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়ায় অবস্থিত আল মারকাজুল ইসলামি আস সালাফি মাদ্রাসা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “মাজার ভাঙ্গা হোক, মসজিদ ভাঙ্গা হোক, মন্দির ভাঙ্গা হোক; এগুলো গর্হিত কাজ। যেগুলো যেভাবে আছে, সেগুলো সেভাবে থাকা দরকার।”

“আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই, আমাদের কম্যুনাল হারমোনি-ভ্রাতৃত্ববোধ নষ্ট হওয়ার মতো কোনও ঘটনা যদি ঘটে, আপনারা আমাদের জানালে আমরা মুহূর্তের ভেতরে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে উপাসনালয়ে যারা হামলা চালায়, তারা মানবতার শত্রু, তারা ক্রিমিনাল। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়