শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ থেকে রফতানি কমেছে, ভারত থেকে আমদানি কমেনি ◈ রাজু ভাস্কর্যে নারী প্রতিকৃতির মাথায় ‘হিজাব’, সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন ◈ শেখ হাসিনাকে ফেরাতে এখনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন আসেনি ◈ মধ্যরাতে উত্তাল ঢাকা কলেজ, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা (ভিডিও) ◈ সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান গ্রেফতার ◈ হরিণ শিকারের কারণেই বিষ্ণোই হয়ে উঠেছেন সালমান খানের প্রধান শত্রু ◈ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত (ভিডিও) ◈ বেনাপোলে জোড়া খুনে ৪ ভাইসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন ◈ শেখ হাসিনা আর রাজনীতি করার জন্য দেশে ফিরতে পারবে না: উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ◈ ‘ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয় নাই, ভোটের কোনো নিশানা কিন্তু দেখি না’ (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:১৪ দুপুর
আপডেট : ১৬ অক্টোবর, ২০২৪, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ধরা ছোয়ার বাইরে ক্যাসিনো সম্রাট সামশুল ও ছেলে শারুন!

ডেস্ক রিপোর্ট : ক্ষমতার পালাবদলের পর সাবেক হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের এমপি সামশুল হক চৌধুরী ও তাঁর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের হদিস মিলছে না। আওয়ামী লীগ শাসনামলে ক্যাসিনো ব্যবসাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানো এই এমপির বিরুদ্ধে বর্তমান প্রশাসনব্যবস্থা নেবে বলে জোর প্রচারণা রয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, জেল-জরিমানার আতঙ্কে সামশুল হক চৌধুরী এলাকা থেকে পালিয়ে পুরো পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামেই আত্মগোপনে আছেন। 


সামশুল হক চৌধুরী নৌকা প্রতীকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি থাকায় নৌকা প্রতীক হারিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। নির্বাচনে ভরাডুবি হয় তাঁর। স্থানীয়রা জানান, সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় সামশুল হক চৌধুরী, ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাবের ক্যাসিনো ব্যবসা, দখল-চাঁদাবাজি, গুম, খুন, মামলা-হামলায় অতিষ্ঠ ছিলেন এলাকার সাধারণ মানুষ।


এমপি থাকা অবস্থায় ক্রীড়াঙ্গনের ক্লাবগুলোতে তিনি ক্যাসিনোসহ জুয়ার আসর বসাতেন। ওই সময় আওয়ামী লীগ সরকারের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান সম্পর্কে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তখন তাঁর বক্তব্যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন সরকার ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সারা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে।


ওই ঘটনার পর তিনি বেশ কয়েকবার এলাকায় সাধারণ মানুষ কর্তৃক লাঞ্ছিত হন। তাঁর বিরুদ্ধে নিজ এলাকায় জুতা মিছিল হয়। বেশ কয়েকটি সভা-সমাবেশ থেকে ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আলাদিনের চেরাগের মতো রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া সামশুল হক চৌধুরী এখন লাপাত্তা।

২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ সাইফুল আমিনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টের বক্তব্যেও হুইপের আয়ের একাংশের একটা চিত্র পাওয়া যায়।


ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় এই পুলিশ কর্মকর্তা ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন সামশুল হক চৌধুরী প্রতিদিন চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাব থেকে পাঁচ লাখ টাকা এবং বছরে মাঠ ভাড়া দিয়ে কোটি টাকা অবৈধ আয় করেন। জুয়ার আসর থেকে পাঁচ বছরে তাঁর আয়ের পরিমাণ ১৮০ কোটি টাকা।

পটিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ডি এম জমির উদ্দিন বলেন, সামশুল হক চৌধুরী ওরফে বিচ্ছু সামশু চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের কাছে ক্যাসিনোর পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বলেছিলেন, চট্টগ্রামে শতদল, ফ্রেন্ডস, আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধাসহ ১২টি ক্লাব আছে। ক্লাবগুলো প্রিমিয়ার লীগে খেলে। ওদের তো ধ্বংস করা যাবে না। ওদের খেলাধুলা বন্ধ করা যাবে না।

প্রশাসন কি খেলোয়াড়দের পাঁচ টাকা বেতন দেয়? ওরা কিভাবে খেলে, টাকা কোন জায়গা থেকে আসে, সরকার কি ওদের টাকা দেয়? দেয় না। এই ক্লাবগুলো তো পরিচালনা করতে হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের মধ্যে সামশুল হক চৌধুরী অন্যতম। সে সময় তাঁর মতো দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এখন আওয়ামী লীগের এই করুণ দশা হতো না। তাঁর নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠেছে। আদর্শ বিচ্যুত এমন অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে বাদ দেওয়ার সময় এসেছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ১৯৯৯-২০০০ সালে এক শিল্পপতির হাত ধরে চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের মহাসচিব হন সামশুল হক চৌধুরী। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে লন্ডনে ফুটবল দল নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ ওঠে। ওই সময় সরকার ২২ জনের দল নেওয়ার অনুমতি দিলেও আরো ১৫ জন বেশি নিয়ে যান তিনি। এই অনিয়মের কারণে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন সামশুল।

২০০৭ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ লীগে অংশগ্রহণের আগে ফিফার গাইডলাইন অনুযায়ী নগরীর জিইসি মোড়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, ওই অ্যাকাউন্টে তিনজনের নাম থাকলেও তৎকালীন সভাপতি দিদারুল আলমকে বাদ দিয়েই সামশুলসহ দুজন টাকা উত্তোলন করেছেন। বিষয়টি জানার পর দিদারুল ওই ব্যাংকে অভিযোগ দিলে অ্যাকাউন্ট স্থগিত হয়।

চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং নগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী দিদার সে সময় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছিলেন, সামশুল হক চৌধুরী ক্লাবে জুয়ার আসর বসিয়ে ক্রীড়াঙ্গনকে ধ্বংস করেছেন। ক্রীড়াঙ্গন থেকে এ ধরনের দুর্নীতিবাজদের বিতাড়িত করা জরুরি।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান তখন বলেছিলেন, এ ধরনের হাইব্রিড নেতাদের সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে আমরা হতবাক-বিব্রত। এসব নেতাকে চিহ্নিত করার সময় এসেছে। সংসদের হুইপ আমাদের দলীয় এমপির ক্লাবে জুয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, উনি (সামশুল) একজন এমপি হয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে তাঁর এ রকম মন্তব্য করাটা কোনো অবস্থায় সমীচীন হয়নি। আমি মনে করি আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের এখনই সময়।

সুত্র : কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়