শিরোনাম
◈ প্রায় ৯ ঘণ্টা পর আল্টিমেটাম দিয়ে শাহবাগ ছাড়লেন আউটসোর্সিং কর্মীরা ◈ মিস ইন্ডিয়া বিজয়ী মধ্যপ্রদেশের নিকিতা পোরওয়াল ◈ বিবাহবিচ্ছেদের পথে যুবরাজ হ্যারি ও মেগান মার্কল! ◈ যেভাবে পান্নুনকে হত্যা পরিকল্পনা সাজান ‘র’-এর সাবেক কর্মকর্তা বিকাশ যাদব ◈ আবারো ভারতের উইকেটে ধস, জিততে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ১০৭ ◈ দীর্ঘ কোচিং ক্যারিয়ারের সব অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ক্রিকেটে কাজে লাগাতে চাই: কোচ সিমন্স ◈ আমাদের পরামর্শ হয়তো আর দরকার নেই, এজন্য ডাকেনি : মুজিবুল হক চুন্নু ◈ পরামর্শ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে সরকার: বৈঠক শেষে গণফোরাম ◈ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রেসক্লাবের সামনে মারধর ◈ পলাতক পুলিশ সদস্যরা এখন ‘সন্ত্রাসী’ বিবেচিত হবে, দেখামাত্রই গ্রেফতার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ০৫ আগস্ট, ২০২৪, ১০:৩১ রাত
আপডেট : ১৯ অক্টোবর, ২০২৪, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জীবন দিয়ে আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন শহীদ আবু সাঈদ

নাহিদ হাসান: [২] ‘অন্তত একজন শামসুজ্জোহা হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।’ শামসুজ্জোহা স্যারকে স্মরণ করে সামাজিকমাধ্যমে এভাবেই পোস্ট দিয়েছিলেন রংপুরের গর্বিত সন্তান শহীদ আবু সাঈদ। তিনি ছিলেন কোটা সংষ্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক।

[৩] গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তার এই মৃত্যুতে কোটা আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায়। 

[৪] কোটাপ্রথা নিয়ে টানা আন্দোলন শুরু হয় ৫ জুলাই। শুরুতে এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিলো। ক্রমে ক্রমে আন্দোলনকারীদের সমর্থন দেশব্যাপী ছড়িয়ে যায়। এরই মাঝে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর নিয়ে (১৪ জুলাই) সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে সাংবাদিকদের কোটা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? তার এই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সেদিন রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। শিক্ষার্থীদের কথা, তাদেরকে কেনো রাজাকার বলা হলো? সেদিন রাতেই তারা, “আমি কে তুমি কে, রাজাকার রাজাকার” বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

[৫] এর পরেরদিন ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা, মন্ত্রীরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নষ্ট করার অভিযোগ আনেন। একই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের উপর রড, লাঠি, হকি স্টিক, রামদা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। একই সাথে পুলিশও লাঠি, রাবার বুলেট দিয়ে হামলা করে। এসব হামলায় ১৬ জুলাই থেকে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হযতে থাকে।

[৬] ১৬ জুলাই ঘটে হৃদয়বিদারক এবং আন্দোলনকারীদের পক্ষে মোড় ঘুরে যাওয়ার অন্যতম ঘটনা। এদিন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের সামনে নিজের বুক পেতে দেন। এ সময় তিনি কয়েকবার ছররা গুলির শিকার হন। গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হলে আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের মত পুরো দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ জুলাই পর্যন্ত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অনান্য সংগঠন, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ দিয়ে ও ইন্টারনেট বন্ধ করেও আন্দোলন থামাতে কার্যত ব্যর্থ হলে সরকার দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে এবং মাঠে সেনাবাহিনীকে নামায়। 

[৭] এরই মাঝে আন্দোলনের সময়ে নির্যাতিত কয়েক সমন্বয়কসহ প্রধান ৬ সমন্বয়ককে ডিবিতে নেওয়া হয়। তাদেরকে দিয়ে জোড় করে বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তখনকার ডিবি প্রধান হারুন সমন্বয়কদের নিয়ে একসাথে খাওয়া-দাওয়া এবং বিবৃতি প্রদান করেন। পরেরদিন আদালত ডিবি প্রধানের এ ঘটনাকে “জাতির সঙ্গে মশকরা” বলে আখ্যা দেন। এরই মাঝে কারফিউ শিথিল হলে ডিবির বিবৃতি এবং খাওয়া-দাওয়া কান্ডে ছাত্র জনতা নতুনভাবে আন্দোলনে নেমে পড়েন। ইন্টারনেট চালু হওয়ায় দেশব্যাপী শহীদ আবু সাঈদকে গুলি করার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ জনতা এ দৃশ্য দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পূর্ব থেকেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের হামলা প্রত্যক্ষ করে সাধারন জনতা যোগ দিচ্ছিলেন। এবার ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারন জনতার ঢল নামে। আবু সাঈদকে গুলির করার এই নির্মম দৃশ্য আন্দোলন বেগবান হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ বলা যায়।

[৮] এরই মধ্যে সকল শহীদের বিচারসহ ৮ দফা দাবি জানায় ছাত্ররা। তবে সে দাবিতে সরকার সম্মত না হয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলা করলে আরেক দফা বাড়িয়ে ৯ দফা দাবি জানানো হয়। সরকার তাতেও সম্মত না হলে সমন্বয়ক গণ অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি সরকার পতনের ১ দফা ঘোষণা দেন এবং ৬ আগস্ট লং মার্চ ঘোষণা করেন। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে একদিন এগিয়ে ৫ মার্চ লং মার্চের ঘোষণা দেওয়া হয়। অন্যদিকে সরকারও ৪ মার্চ সন্ধ্যা ৬ টা থেকে কারফিউ ঘোষণা দেয়। কারফিউ ঘোষণা দিলেও পরেরদিন ৫ আগস্ট  ছাত্র-জনতার স্রোতকে কারফিউ আটকাতে পারেনি। 

[৯] টগবগে তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তাকে ঘিরে তার এলাকার মানুষ স্বপ্ন দেখতেন। তার মৃত্যুতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন বলছিলেন, ‘আমার ভাই শহীদ হয়েছে। আমরা তার জন্য গর্ব করি।’ সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব

এসবি/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়