সুজন কৈরী: [২] বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে রোববার সারাদেশে ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়েছে। র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির দেড় শতাধিক সদস্যসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০০ জন।
[৩] রোববার সকাল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সংঘর্ষে রাজধানী ঢাকায় ৮, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ পুলিশ সদস্য, লক্ষ্মীপুরে ৮, নরসিংদীতে ৬, ফেনীতে ৮, সিরাজগঞ্জে ১০, রংপুরে ৪, কিশোরগঞ্জে ৪, মুন্সীগঞ্জে ৩, বগুড়ায় ৪, মাগুরায় ৪, ভোলায় ৩, পাবনায় ৩, সিলেটে ৩, কুমিল্লায় পুলিশসহ ২, জয়পুরহাটে ১, শেরপুরে ৩, বরিশালে ১ ও কক্সবাজারে ১ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
[৪] সকাল থেকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বাড্ডা, ধানমন্ডি, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, বাংলামোটর, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, মিরপুর-১০ ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন।
[৫] এ সময় কোথাও কোথাও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে একজন শিক্ষার্থী ও একজন আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
[৬] এর মধ্যে রাজধানীর ধানমন্ডির জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বিবিএর ছাত্র। তিনি সূত্রাপুর এলাকার আবু বক্করের ছেলে। এছাড়া কাওরান বাজার এলাকা থেকে রমিজ উদ্দিন রুপ (২৪) নামের একজন ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীকে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
[৭] তাহিদুল ইসলাম নামের একজনকে ফার্মগেইট এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত তাহিদুল কবি নজরুল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার বাসা মিরপুরের শেওড়াপাড়ায়। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি করতেন। মহাখালী ডিওএইচএসে একটি কনসালটেন্ট ফার্মের জুনিয়র অফিস সহকারী ছিলেন।
[৮] ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সংঘর্ষে বিভিন্নস্থান থেকে ছয়জনের মরদেহ ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়। এছাড়া শনির আখড়া, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, নয়াবাজার, ধানমন্ডি, পল্টন ও প্রেসক্লাবসহ এলাকা সহ বিভিন্ন স্থান থেকে সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও পথচারীসহ ২২২জন গুলিবিদ্ধ এবং আহত হয়ে হাসপাতালে আসেন। তাদের মধ্যে ৬৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
[৯] বিকালে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি কুমিল্লায়।
[১০] রাজধানীর উত্তরায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। তিনি হলেন ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্র-জনতা বিএনএস সেন্টার ও আজমপুর রাজউক কমার্শিয়ালের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিলে বিপরীত পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
[১১] জানা গেছে, ওই সময় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিব হাসান আজমপুরের একটি ক্যাম্পে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীরা ছিলেন সড়কে। পরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুল। এছাড়া কয়েকজনকে গুলিবিদ্ধসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
[১২] সংঘর্ষে শিশুসহ গুলিবিদ্ধ একাধিক ব্যক্তি উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে মাইলস্টোন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ইমন সরকার ও নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুলের ফাহিম নামের দুইজন রয়েছেন।
[১৩] সন্ধ্যায় বাংলামোটর পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি বেসরকারির টেলিভিশন বাংলাভিশনের গাড়িসহ কয়েকটি প্রাইভেট কারে হামলা করে বিক্ষোভকারীরা। এর আগে বাংলামোটর এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে পুলিশ।
[১৪] সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাংলামোটর এলাকা দখলে নেয়। তারা বাংলামোটর পুলিশ বক্সে আগুন দেয়, যান চলাচলে বাধা দেয়। এ সময় এই সড়কে প্রবেশ করা কয়েকটি প্রাইভেট কার লক্ষ্য করে হামলা চালায় তারা। বাংলামোটরে মোড়ে অবস্থিত দৈনিক দেশ রূপান্তর ও খবরের কাগজে কর্মরত সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। এ সময় বাধা দিলে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোশিয়েসনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম বিক্ষোভকারীদের হামলায় আহত হন।
[১৫] রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ, আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কয়েকজন।
[১৬] বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে সড়কে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় গুলি ছোঁড়ার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।
[১৭] বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেন। এর আগে শাহবাগ মোড়ে শত শত লোক জড়ো হন। তারা পুরান ঢাকার দিক থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনের দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। পুরান ঢাকার দিক থেকে আসা মিছিল থেকে তাদের ধাওয়া দেওয়া হয়। তারা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে যান।
[১৮] রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। ওই এলাকার সড়ক বিভাজক ভাঙচুর করা হয়েছে।
[১৯] দুপুর ১২টার দিকে রাজধানী উত্তরার আজমপুরে বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেন বিক্ষোভকারীরা। তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
[২০] দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর পরীবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আসাদুজ্জামানের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।
[২১] দুপুর সোয়া ১২টা থেকে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। মিরপুর ১৩, হোপের গলি, অরিজিনাল ১০, কাজীপাড়া, মিরপুর-২ নম্বরের প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে দেখা গেছে। মুহুর্মুহু ককটেল ও গুলির শব্দ শোনা গেছে এসব এলাকায়।
[২২] এক দফা দাবিতে চলা অসহযোগ আন্দোলনে পুরান ঢাকায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
[২৩] রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, বেইলী রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন চললেও সংঘর্ষের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
[২৪] নরসিংদী প্রতিনিধি সানজিদা রুমা জানান, রোববার দুপুর ১টার দিকে নরসিংদীর মাধবধী পৌর ভবনের পাশে বড় মসজিদের সামনে আওয়ামী লীগের ৬ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
[২৫] নিহতরা হলেন- নরসিংদী সদর উপজেলার চরদিঘলদি ইউপি চেয়ারম্যান ও মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহীন, মাধবদী থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য মনিরুজ্জামান ভূইয়া, নরসিংদী সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাইয়ের ছেলে ছাত্রলীগকর্মী দেলোয়ার হোসেন দেলু, মাধবধী থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আনিসুর রহমান সোহেল, আওয়ামী লীগ কর্মী কামাল মিয়া ও বাবুল হোসেন ।
[২৬] স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১১টার দিকে মাধবদীর বাসস্টেশন এলাকায় আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়। দুপুর ১২টার দিকে তারা পৌর ভবনের দিকে যেতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় মাধবদী বাজার এলাকায় মসজিদের সামনে ৬ আওয়ামী লীগের নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে যায় আন্দোলনকারীরা।
[২৭] সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি সোহাগ হাসান জানান, এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এক দফা দাবিতে আন্দোলনকারীরা সিরাজগঞ্জের বিভিন্নস্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করেছেন। তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার মাসুমপুর মহল্লার মাজেদ রহমানের ছেলে ও জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জু রহমান, শহরে গয়লা মহল্লার গনজের আলীর ছেলে সুমন শেখ, একই মহল্লার মৃত আসু মুন্সীর ছেলে আবদুল লতিফ। রায়গঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মেহেদি হাসান ইলিয়াস, সাধারণ সম্পাদক আল আমিন সরকার, ব্রক্ষ্রগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম সোরোয়ার লিটন, ব্রক্ষগাছা ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনায়েঢত টিটু, দৈনিক খবর পত্রের রায়গঞ্জ প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার ভৌমিক, চান্দাইকোন ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, শাহজাদপুর উপজেলা এনায়েতপুরের খুকনির ঝাপড়া গ্রামের শাহজাহানের ছেলে ইয়াহিয়া নিহত হয়েছেন।
[২৮] ফেনী প্রতিনিধি এমরান পাটোয়ারী জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহীপাল এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- ফেনী সরকারি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, সদর উপজেলার ফাজিলপুর কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ছাইদুল ইসলাম এবং পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে শিহাব উদ্দিন।
[২৯] কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি মো. ফারুকুজ্জামান জানান, শহরের স্টেশন রোড এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে অঞ্জনা বেগম (৩৫) নামে এক নারীসহ অন্তত চারজন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে নারীসহ দুইজন দগ্ধ হয়ে এবং একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। নিহতদের একজনের নাম মবিন এবং দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আরেকজনের পরিচয় প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি। এছাড়া রুবেল আব্দুল্লাহ নামে এক যুবক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
[৩০] মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন জানান, শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ফরহাজী, মো. সজল ও ডিপজল সর্দার। এদের মধ্যে রিয়াজুল এবং ডিপজল ঘটনাস্থলে এবং সজলকে হাসপাতাল নেওয়ার সময় মারা যায় বলে জানান তার স্বজনরা।
[৩১] মাগুরা প্রতিনিধি মো. সাইফুল্লাহ জানান, মাগুরা সদর ও মহম্মদপুর উপজেলায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। মাগুরা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অমর প্রসদ এ তথ্য জানিয়েছেন। এ ছাড়া মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরো এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
[৩২] নিহতরা হলেন- জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী, মহম্মদপুরের বালিদিয়া গ্রামের যুবক সুমন শেখ, একই উপজেলার ইউনুস মিয়ার ছেলে আহাদ এবং শ্রীপুরের রায়নগর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যুবদলকর্মী ফরহাদ।
[৩৩] রংপুর প্রতিনিধি মোস্তাফিজার বাবলু জানান, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- মাসুম, খায়রুল ইসলাম খসরু ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রসিকের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায়। একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
[৩৪] পাবনা প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ জানান, রোববার দুপুরে শহরের এ হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি জানান। নিহতরা হলো- মহিবুল, জাহিদ ও ফাহিম।
[৩৫] বগুড়া প্রতিনিধি আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছে। দুপচাঁচিয়ায় একজন এবং বগুড়া শহরে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী।
[৩৬] কুমিল্লা প্রতিনিধি শাহাজাদা এমরান জানান, রোববার কুমিল্লার দেবিদ্বার ও দাউদকান্দিতে পুলিশসহ ২ জন নিহত হয়েছেন। দেবিদ্বারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে মো. রুবেল নামের এক বাসচালক নিহত হয়েছেন।
দাউদকান্দি ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল এরশাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিআইজি পূর্বাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশ খায়রুল আলম।
[৩৭] লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি তছলিমুর রহমান জানান, লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পৌরসভার তমিজ মার্কেটের পাশে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহউদ্দিন টিপুর এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এমপি নুরুদ্দিন চৌধুরী নয়নের বাসা হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। নিহতরা হলেন কলেজছাত্র কাউসার, আফরান, সাব্বির ও মিজান হোসেন এবং যুবলীগের সদস্য হারুন মেম্বার, মো. সুমন, রিয়াজ পাটওয়ারী ও অজ্ঞাত একজন।
[৩৮] সিলেট প্রতিনিধি আশরাফ চৌধুরী রাজু জানান, রোববার দুপুরে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণে আন্দোলনেকারীদের সঙ্গে বিজিবি ও পুলিশের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অনেকে। নিহতরা হলেন উপজেলার বারকুট গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম। [৩৯] শেরপুর প্রতিনিধি ইসমাঈল হোসেন জানান, বিকাল ৪টার দিকে শহরের কলেজ মোড় এলাকায় সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন শতাধিক আন্দোলনকারী। নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার চৈতনখিলা বটতলা এলাকার মিরাজ আলীর ছেলে মাহবুবুল ইসলাম (২৪)। নিহত অন্য দুজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। শেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়ূন আহমেদ নূর বিষয়টি জানিয়েছেন।
[৪০] বরিশাল প্রতিনিধি শাহ জালাল জানান, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। তার নাম টুটুল চৌধুরী (৬০)। তিনি বরিশাল মহানগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। রোববার দুপুরে বরিশাল নগরের বটতলা এলাকার করিম কুটিরের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
[৪১] জয়পুরহাট প্রতিনিধি মতলুব হোসেন, জয়পুরহাটে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মেহেদী হাসান নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে।
[৪২] ভোলা প্রতিনিধি ফরহাদ হোসেন জানান, অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। বিএনপির দাবি, নিহতদের দুজন তাদের কর্মী। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দাবি, তাদের এক যুবলীগ কর্মীকে বিক্ষোভকারীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে।
[৪৩] কক্সবাজার প্রতিনিধি হাবিব সোহেল জানান, কক্সবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত এবং ৭ আহত হয়েছে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব
আপনার মতামত লিখুন :