আনিস তপন: [২] তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, গতকাল শহীদ মিনারে ব্যর্থ হয়ে আজ আন্দোলনকারীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। এজন্য সন্ত্রাস দমনে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে।
[৩] রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের টানেলে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
[৪] এ সময় তিনি আরো বলেন, বিএনপির চাওয়ার সঙ্গে আন্দোলনকারীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
[৫] প্রতিমন্ত্রী বলেন, গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন হয়েছে। কোটা আন্দোলনকারীরা শহীদ মিনারে আন্দোলন করেছে। এসময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোথাও কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ সরকারের অবস্থান ছিল শান্তিপূর্ণ এবং সহনশীল।
[৬] সরকার অশান্তি ও সহিংসতা চায় না বলেই শনিবার প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের বৈঠকের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিয়ে যেসব ছাত্রদের অহেতুক গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের সবাইকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, নতুন করে কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়। এই বাস্তবতায় সরকার শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থেকেছে।
[৭] কিন্তু আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক প্রস্তাবগুলোকে গ্রহণ না করে তারা এক দফা দাবি দিয়েছে। ধারণা করছি সাধারণ মানুষ এতদিনে এক জায়গায় ছিল। কিন্তু যখনই আন্দোলনকরীরা এক দফা দাবি পেশ করে তখনই মোটামুটি একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে, আসলে তাদের উদ্দেশ্যটা কী? শনিবার থেকে এটি একদম রাজনৈতিক বিষয় হয়ে গেছে। এখন ছাত্রদের অধিকার ও কোটা বা যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বিচার আর ওই জায়গায় নেই।
[৮] তাদের একটাই উদ্দেশ্য ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এটা করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে তারা ক্ষমতা নেবেন, কীভাবে নেবেন এ ধরনের বিষয় চলে এসেছে। এই দাবির ফলে ছাত্রদের দাবির যৌক্তিকতা নেই। কারণ তারা কোনো রাজনৈতিক দল নয়। অথচ তারা সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে।
[৯] রোববার থকে তারা সংঘাত দিয়ে আন্দোলন শুরু করল। সরকার কিন্তু সহনশীল ছিল। আওয়ামী লীগ কোথাও কিন্তু ছিল না। এখন এই অনুপস্থিতিটাকে তারা দুর্বলতা হিসেবে দেখছে। যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত হলে বা কোনো সংঘাত হলেও বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসছে। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একেবারেই শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থানে থাকে। এদিন সকালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসীরা ঢুকে কীভাবে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। হাসপাতালে কীভাবে আগুন লাগিয়ে দেয়? এখানে তো রোগীরাও আছে। তারা কী দোষ করল? তারা সিএমএম কোর্টে আগুন লাগিয়েছে। তারা একটি এসিল্যান্ড অফিসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। যেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড থাকে। গাইবান্ধায় ডিসি অফিস, এসপি অফিসে তারা আক্রমণ করেছে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের অফিস, নারায়ণগঞ্জে ডিসি অফিস, রংপুরে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে তারা আক্রমণ করে দখলে নিয়েছিল। নেত্রকোণায় পুলিশের স্টেশনে গিয়ে জঙ্গি কায়দায় তারা আটটি অস্ত্র ছিনতাই করে নিয়েছে। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসায়, বগুড়া সদরে এসি ল্যান্ডের অফিসে, বগুড়া ও ভোলাতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে তারা আক্রমণ করেছে। এ রকম আরও অনেক সহিংসতা কর্মকাণ্ড তারা করেছে।
[১০] আন্দোলন এখন আর আন্দোলনের জায়গায় নেই। আন্দোলন এখন সহিংসতায় চলে গেছে। এটাই সবার কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি। সরকার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষে, যেসব হতাহত হয়েছে সেগুলোর বিচারের পক্ষে ছিল সরকার। যেই শিশুগুলো মারা গিয়েছে তাদের হত্যার বিচার করতে হবে। এই শিশুগুলো তো এই দাবির পক্ষে ছিল না। এই মৃত্যুগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে কারা সুবিধা নিয়েছে এবং কারা মানুষকে উসকে দিয়ে বিপদে পরিচালিত করেছে। সবাই বিচার চাচ্ছে, আবার রায়ও দিয়ে দিচ্ছে। তার মানে তারা বিচার মানছেন না। সরকার সব মৃত্যুর সঠিক বিচার চায় বলেই একটা জুডিশিয়ারি কমিশন করেছে। তদন্ত দল রোববার তদন্ত করতে রংপুর গিয়েছে। এই কমিশন বিদেশি এক্সপার্টদেরও আনছে এবং তারাও কিন্তু এই তদন্তে ঢুকবে। তদন্ত করার পরই সবাই জানবে কে কীভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। তদন্তের পরই আসল অন্যায়কারীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তারা মূলত বিচার চাচ্ছে না, সেটা প্রমাণ হয়েছে গতকালে তাদের এক দফা ঘোষণার মাধ্যমে।
[১১] এখন সাধারণ মানুষ তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করছে। সরকার ধৈর্য ধরেছে, এখনও ধৈর্য ধরে বলছি, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীরা আছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা সাধারণ মানুষদের ডাক দিলে সবাই মাঠে নেমে আসবে। কিন্তু সরকার শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে এখনও আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে।
[১২] মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস কর্মকাণ্ড করলে সরকারকে আইনের প্রয়োগও করতে হবে। গুজবে আক্রান্ত পুরো পৃথিবী। সরকার আইনের প্রয়োগ করবে এবং সন্ত্রাসকে দমন করবে। আন্দোলনকারী বা যারা দাবি জানাচ্ছে বা সাধারণ নাগরিকদের মতের সঙ্গে আমরা এই পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চাই। তবে অশান্তির সৃষ্টি করলে সেটা আইনের মাধ্যমে শক্ত হাতে দমন করা হবে।
[১৩] বিএনপি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে, বিষয়টি কীভাবে দেখবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি একাত্মতা প্রকাশ করেনি। কারণ আগেই এটা বিএনপির চাওয়া ছিল বরং বিএনপির চাওয়ার সঙ্গে আন্দোলনকারীরা একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এই আন্দোলন এখন বিএনপি-জামায়াত হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এই চ্যালেঞ্জকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করবে।
[১৪] এখন সন্ত্রাসীরা আন্দোলনে ঢুকে সরকারি স্থাপনা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ওপর যেভাবে আক্রমণ করেছে, এগুলো দমন করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল শহীদ মিনারের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় তারা আজকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। ছাত্রদের ঘাড়ে ভর করে জামায়াত-বিএনপি এই কর্মকাণ্ড করছে। একটা পুলিশকে হত্যা করে উল্টা করে ঝুলিয়ে রেখে নিচে এসে তারা আলহামদুল্লিাহ বলে। এরা দেশ দখল করবে? এরাই কী দেশ চালাবে?
[১৫] ফেসবুক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা তৈরি করে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে মৃত্যু ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এই ধরনের মৃত্যু বা ঘটনা এড়ানোর জন্য সাময়িকভাবে ফেসবুক বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা যা কিছু করছি, বৃহত্তর স্বার্থে করছি। কোনোকিছু আটকানোর জন্য করছি না, কাউকে থামানোর জন্য করছি না, কোনোকিছু বন্ধ করার জন্য করছি না। কারণ সরকারের এটা দায়িত্ব।
[১৬] জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সভায় তিন বাহিনীর প্রধানসহ সকল বাহিনীর প্রধানরা ছিলেন। সভায় দেশকে রক্ষা করতে সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও অঙ্গীকারবদ্ধ। কোনো ধরনের গুজবে কেউ কান দেবেন না এটা তারা নিশ্চিত করতে চান। একই সঙ্গে শিক্ষার্থী এবং তাদের বাবা-মায়ের আবেগ, অনুভূতির সঙ্গে আমরা আছি। তাদেরও নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী
এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :