শিরোনাম
◈ শেখ হাসিনাকে ফেরাতে এখনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন আসেনি ◈ মধ্যরাতে উত্তাল ঢাকা কলেজ, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা (ভিডিও) ◈ সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান গ্রেফতার ◈ হরিণ শিকারের কারণেই বিষ্ণোই হয়ে উঠেছেন সালমান খানের প্রধান শত্রু ◈ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত (ভিডিও) ◈ বেনাপোলে জোড়া খুনে ৪ ভাইসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন ◈ শেখ হাসিনা আর রাজনীতি করার জন্য দেশে ফিরতে পারবে না: উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ◈ ‘ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয় নাই, ভোটের কোনো নিশানা কিন্তু দেখি না’ (ভিডিও) ◈ ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ সম্ভাব্য যেসব উপকূলে আঘাত হানতে পারে ◈ বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের (ভিডিও)

প্রকাশিত : ৩১ জুলাই, ২০২৪, ০২:১০ রাত
আপডেট : ১৯ অক্টোবর, ২০২৪, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কারফিউ প্রত্যাহারসহ একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অ্যামনেস্টি মহাসচিবের খোলাচিঠি

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড

সালেহ্ বিপ্লব: [২.১] আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড তার চিঠির শুরুতে লিখেছেন, বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাম্প্রতিক সহিংস দমন অভিযানের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ নিয়ে আমি আপনাকে লিখছি। সহিংসতা বন্ধ, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং বিক্ষোভের সময় ২০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জরুরি ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। 

[২.২] মঙ্গলবার এই চিঠি অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। 

[৩] খোলা চিঠিতে অ্যামনেস্টি মহাসচিব কিছু পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এসব পরামর্শের মধ্যে রয়েছে, অবিলম্বে সম্পূর্ণরূপে কারফিউ প্রত্যাহার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া, ভবিষ্যতে বিক্ষোভ দমনে কারফিউতে দেখামাত্রই গুলি করার নির্দেশ এবং ইন্টারনেট বন্ধ করা হবে না বা অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো লঙ্ঘন করা হবে না- এমন নিশ্চয়তা প্রদান। শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে গিয়ে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সংযম দেখানোর নির্দেশ প্রদান, বিক্ষোভকারীদের ওপর অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ না করা এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ। বিক্ষোভ দমনের সময় হতাহতের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ, কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করা। আন্দোলন দমাতে আইনবহির্ভূতভাবে শক্তিপ্রয়োগের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান। বাংলাদেশের সংবিধান এবং মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান এবং এ ক্ষেত্রে যেসব আইনি বাধা রয়েছে, যেমন সাইবার নিরাপত্তা আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা বিলুপ্তকরণ।

[৪] ক্যালামার্ড বলেন, ওপরের বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চললে আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে। এর মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার প্রদর্শিত হবে। বিশ্ব তাকিয়ে আছে এবং এটা অপরিহার্য যে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা হচ্ছে।

[৫] এই সুপারিশগুলো উত্থাপনের আগে চিঠিতে কোটা আন্দোলন নিয়ে অ্যামনেস্টির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন ক্যালামার্ড। 

[৬] তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত ২৮ জুলাই এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন যে, সহিংসতায় ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন। যদিও বেসরকারি সূত্র যেমন প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতায় কমপক্ষে ২১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিক্ষোভ দমন অভিযানের অন্যতম হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভ প্রশমিত করতে সারাদেশে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। 

[৭] তিনি বলেন, অনেক বেশি মৃত্যুর এই সংখ্যা বিক্ষোভ ও ভিন্নমতের প্রতি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের চরম অসহিষ্ণুতার দুঃখজনক অধ্যায় হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারসহ আইনবহির্ভূত শক্তিপ্রয়োগ মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের প্রতি কর্তৃপক্ষের নিষ্ঠুর অবহেলা এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলার ক্ষেত্রে শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।

[৮] মহাসচিব বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত ১০ দিনে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করেছে। পৃথক দুটি ঘটনায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তথ্য-উপাত্ত যাচাই করেছে যাতে ছয় দিন যোগাযোগে বিধিনিষেধ (ইন্টারনেট বন্ধ) চলাকালে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আইন-বহির্ভূত বলপ্রয়োগ এবং প্রাণঘাতী ও কম প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।

[৯] অ্যামনেস্টি মহাসচিব চিঠিতে বলেছেন, আমরা দেখতে পেয়েছি যে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ওপর থেকে গুলির বেআইনি ব্যবহার, শিক্ষার্থীরা আবদ্ধ স্থানে থাকা অবস্থায় সেখানে কাঁদানে গ্যাসের বিপজ্জনক ব্যবহার এবং এ কে ঘরানার অ্যাসল্ট রাইফেলের মতো প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্রের নির্বিঘ্ন ব্যবহার হয়েছে। অ্যামনেস্টি আরও দেখতে পেয়েছে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সহিংসতা চালিয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন শিক্ষার্থীদেরও ওপর তারা হামলা করেছে।

[১০] চিঠিতে ক্যালামার্ড আরো বলেন, এই বিক্ষোভের মধ্যে গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা থেকে বাংলাদেশের মানুষ দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টির মুখোমুখি হয়েছে। ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করার আগে দেশজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট সাময়িক বাধাগ্রস্ত করা হয়। এরপর কিছু এলাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ১৯ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ১৪৪ ধারা জারি করে রাজধানীতে সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে।

[১১] তিনি বলেন, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার মধ্যরাতে দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ এবং কারফিউ জারি করে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ এবং ঢাকায় সব ধরনের বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর নজিরবিহীন দমনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এ ধরনের বিধিনিষেধ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার লঙ্ঘন। আমরা জানতে পেরেছি, গত ২৩ জুলাই দেশে ছয় দিন পর ইন্টারনেট ফিরে আসে এবং ২৪ জুলাই কারফিউ শিথিল হয়। আর ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট ফিরে আসে। তবে এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রয়েছে।

[১২] ক্যালামার্ড আরো লিখেছেন, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বেশির ভাগ বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, আন্দোলনকারী, শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী। এ ছাড়া শুধু রাজধানীতেই থানায় ২০০টির মতো মামলা করে ২ লাখ ১৩ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এসব আসামির বেশির ভাগই অজ্ঞাত। এফআইআরে কারও নাম না দেওয়ার কৌশলটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য যে কাউকে চাইলেই গ্রেপ্তার করার সুযোগ এনে দেয়। গণগ্রেপ্তার ও ছাত্র বিক্ষোভকারীদের নির্বিচার আটকে রাখা ভয়ের পরিবেশকে আরও স্থায়ী করেছে।

[১৩] তিনি বলেন, এটা লক্ষণীয় যে বাংলাদেশে অসহিষ্ণুতা ও ভিন্নমত দমন বেড়ে যাওয়ার বিস্তৃত পটভূমিতেই ছাত্র বিক্ষোভের ওপর এমন প্রাণঘাতী দমনাভিযান চালানো হয়েছে। দমনমূলক আইন যেমন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, যা পরবর্তী সময়ে প্রায় সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে ভিন্নমত বা সমালোচনার জন্য সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও অ্যাকটিভিস্টদের টার্গেট করা হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন বাধ্যবাধকতাগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষা এবং বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পদ্ধতি অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার বারবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখতে অনাগ্রহ দেখিয়েছে এবং সহিংসতা বন্ধে কোনো অর্থবহ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়