খুররম জামান: [২] রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাজনীতিতে এ ধরণের ঘটনা নিন্দনীয়। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরণের ঘটনা দেখা যায় না। 

[৩] তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি আমাদের অবস্থান একদম পরিষ্কার। রাজনীতিতে আমরা কোনো প্রকার সন্ত্রাস চাই না। আমাদের দেশে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হয় যা অনভিপ্রেত ও আইন বিরোধী। 

[৪] পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরণের ঘটনা ছিলো না। এ ঘটনায় আমরা নিন্দা জানাই।

[৫] যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি সমাবেশে বন্দুক হামলা হয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় এই হামলায় ট্রাম্পের কানে গুলি লেগেছে। কার্যত হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণার সময় এমন রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা।

[৬] পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের চারটি দেশ ইতালি, জার্মানি, গ্রিস ও রোমানিয়া বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার বাংলাদেশি কর্মী নেবে।  ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বিদায়ী সাক্ষাতের পর এ কথা জানান তিনি। 

[৭] ড. হাছান জানান, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পরও ২০৩২ সাল পর্যন্ত যাতে আমাদের পণ্যের জন্য ইইউ থেকে জিএসপি বা শুল্কহ্রাস সুবিধাসহ এখন যে অন্যান্য সুবিধা পাই, সেগুলো যেন অব্যাহত থাকে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। 

[৮] ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ১১-১২ জুলাই অনুষ্ঠিত বিমসটেক দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বিতীয় রিট্রিট সম্মেলনের বিষয়ে সাংবাদিকদেরকে মন্ত্রী জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, চিকিৎসা, জ্বালানি নিরাপত্তা খাতে সহায়তা এবং নেপাল ও ভুটানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে সবুজ শক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি নিয়ে রিট্রিটে কথা হয়েছে।

[৯] হাছান মাহমুদ জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের চার তারিখে থাইল্যান্ডে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব নেবে বাংলাদেশ। 

[১০] রিট্রিটের সাইডলাইনে ভারত ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে মন্ত্রী হাছান জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের জন্য পচনশীল পণ্য আমদানিতে  কোটা নির্ধারণের বিষয়টি আবারও এসেছে। তিস্তা বিষয়ে কারিগরী দল প্রেরণ, ব্রিকসে অন্তর্ভুক্তি ও জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। কিন্তু সেটি রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর। ড. হাছান জানান, কিছু এনজিও এ ইস্যুতে দুই দেশের কর্মকাণ্ড ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে বলে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী তাকে জানিয়েছেন।

[১১] চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোটার বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে এসেছে। সরকার শিক্ষার্থীদের ওপর সহানুভূতিশীল হয়ে পুরো কোটাই বাতিল করে দিয়েছিল। হাইকোর্ট সেটি পুনর্বহাল করেছিল, সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করেছে। কোটা আদালতের একটি বিচারাধীন বিষয়। সে কারণে এর ওপর সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তাহলে আদালত অবমাননা হবে। আদালতের মাধ্যমেই এর সমাধান হতে হবে।

[১২] ড. হাছান বলেন, এখন যে আন্দোলন হচ্ছে সেটির কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না। এটি আসলে আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলিও বটে। সরকার সবসময় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। সে কারণে কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিল। তবে বাতিল করার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। যেমন অনেক জেলা থেকে অনেক ক্যাডারে কেউ সুযোগ পাচ্ছে না, মেয়েদের অংশগ্রহণ কমে গেছে -এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে।

[১৩] এ সময় কোটা আন্দোলন থেকে বিএনপি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, বিএনপি তো সবসময় চায় দেশকে অস্থিতিশীল করতে। নিজেদের তো কিছু করার ক্ষমতা নেই, তারা অপরের ঘাড়ে চেপে বসে। কোনো সময় কোটার ওপর ভর করে, কোনো সময় তেল-গ্যাসের ওপর ভর করে, কোনো সময় আবার অন্য কিছুর ওপর ভর করে। বিএনপি কোটা আন্দোলন থেকেও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের পর সুপ্রিম কোর্ট স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য আদেশ দিয়েছে। অর্থাৎ সরকার যে কোটা বাতিল করেছিল, সেটিই বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। এরপরও যখন আন্দোলন হয় বুঝতে হবে এটির সঙ্গে রাজনীতি যুক্ত হয়েছে। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী