এম.এ. লতিফ, আদালত প্রতিবেদক: [২] বুধবার (১০ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে অর্থ আত্মসাৎ ও কর ফাঁকির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করেন হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ।
[৩] এদিন আসামি পক্ষের অ্যাডভোকেট জামিন চেয়ে শুনানি করেন এবং দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
[৪] ৩ অক্টোবর, ২০২৩ রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০.২৫ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা গোপন করার চেষ্টা এবং সাড়ে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক নুরুল হুদা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
[৫] মামলার আসামিরা হলেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার, তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না, বাচ্চুর ছেলে শেখ রাফা হাই ও শেখ ছাবিদ হাই অনিক এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ।
[৬.১] মামলার এজাহারে বলা হয়, ৮ জুলাই, ২০১২ আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার ৬ নম্বর প্লটের ৩০.২৫ কাঠা জমি ১১০ কোটি টাকায় ক্রয়ের জন্য অপর আসামি আমিন আহমেদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিপত্র করেন। চুক্তি করা জমির মূল্য ১১০ কোটি টাকা এবং চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় পরিশোধিত অর্থ ১০ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়।
[৬.২] চুক্তিপত্র অনুযায়ী ২টি দলিলে ভূমি রেজিস্ট্রি করা হয়। যার মধ্যে ১৬ অক্টোবর, ২০১২ তারিখের প্রথম দলিলে ১৮ কাঠা জমির দাম ৯ কোটি টাকা এবং গ্রহীতা হিসাবে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, শেখ শাহরিয়ার পান্না ও মিসেস শিরিন আক্তার উল্লেখ করা হয়। দ্বিতীয় দলিলে ১২.২৫ কাঠা জমির দাম ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হয় এবং গ্রহীতা হিসাবে থাকেন শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই।
[৬.৩] অর্থাৎ জমির মোট রেজিস্ট্রেশন মূল্য ধরা হয় ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশনের সময় জমির মূল্য ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম দেখিয়ে অবৈধ আয় গোপন করার চেষ্টা করেন আসামিরা। এছাড়া জমির মূল্য কম দেখিয়ে সরকারের ৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার রাজস্বও ফাঁকি দিয়েছেন।
[৭.১] মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, জমি বিক্রয় ও প্রকৃত মূল্য গোপন করতে আমিন আহমেদ শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে সহযোগিতা করেছেন। আমিন আহমেদ ১৩৪টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও নগদে ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। অপরদিকে তাদের আয়কর নথিতে জমির জন্য মূল্য প্রদর্শন করেছেন ২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৪ টাকা।
[৭.২] অর্থাৎ শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর আয়ব্যয় এবং প্রকৃত সম্পদের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়নি। তিনি বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অস্তিত্বহীন ও নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ভুয়া ঋণ মঞ্জুর করে আত্মসাৎ করা অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর, ছদ্মাবরণের মাধ্যমে গোপন করেছেন। আসামি আমিন আহমেদ বাচ্চুর অবৈধ অর্থের বৈধতা প্রদানে সরাসরি সহায়তা করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। সম্পাদনা: কামরুজ্জামান
আপনার মতামত লিখুন :