আবছার তৈয়বী, ইউএই প্রতিনিধি (আবুধাবি থেকে): জাঁকজমকভাবে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে বাংলা বর্ষবরণ ১৪৩২ ও বৈশাখী উৎসব। শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় আবুধাবির শেখ খলিফা-বিন-যায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুলে ফিতা কেটে মেলার শুভ উদ্বোধন করেন আবুধাবিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব তারেক আহমেদ ও রাষ্ট্রদূতপত্নী মিসেস উম্মে রুম্মান।
স্কুলের সুবিশাল অডিটোরিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে বাইরের মাঠে ছড়িয়ে পড়ে প্রবাসীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও আনন্দ উল্লাস। এই মেলার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতি, পিঠা-পুলি ও রন্ধনশৈলীকে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক অতিথিদের সামনে তুলে ধরা।
দিনব্যাপী এই উৎসবে নানা আনুষ্ঠানিকতার মাঝে ছিল নারী ও শিশুদের আকর্ষণীয় ও ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ঐতিহ্যবাহী নানান ধরনের খাবার ও দেশীয় হস্তশিল্প প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, সঙ্গীত, নৃত্য, কস্টিউমস শো, পুরস্কার বিতরণ ও উত্তেজনাপূর্ণ র্যাফেল ড্র। বিনামূল্যে সংগৃহীত কুপনের র্যাফেল ড্র এর ১৭ টি পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ছিল জনতা ব্যাংকের সৌজন্যে ২ হাজার দেরহাম মূল্যমানের শপিং ভাউচার, বাংলাদেশ বিমানের সৌজন্যে আবুধাবি-ঢাকা-আবুধাবি বিমান টিকেট এবং এয়ার এরাবিয়ার সৌজন্যে বিশ্বের যে কোন গন্তব্যে কাপল রিটার্ন টিকেট।
বর্ষবরণের এই মেলায় ১৬টি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী নামে স্টল স্থাপন করে। এ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের ‘দূতাবাস কর্নার’, বাংলাদেশ সমিতির ‘আমার বাংলাদেশ’, শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিক স্কুলের ‘আহার বিহার’, ইঞ্জিনিয়ারস অ্যান্ড আর্কিটেক্ট-এর ‘ঐক্যতান’, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস এসোসিয়েশনের ‘দুরন্ত বৈশাখ’, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ‘রঙের বৈশাখ’, বরিশাল সমিতির ‘বৈঠক খানা’ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও ০২০৪ ব্যাচ এবং শাহী মুসাফফাসহ প্রবাসী বাংলাদশীদের বেশ কিছু খাবার প্রতিষ্ঠান স্টল স্থাপন করে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ বিমান, জনতা ব্যাংক, আহলিয়া ও ইনডেক্স এক্সচেঞ্জ, প্রাণ গ্রুপ দেশীয় মুখরোচক খাবারের দোকান ও শিশুদের খেলনার পসরা নিয়ে স্টল বসায় এবারের মেলায়। প্রতিটি স্টলে ছিল ঐতিহ্যবাহী খাবার, পান্তা-ইলিশ, ফুচকা, জিলাপি, সেমাই ও বিভিন্ন মিষ্টান্নে স্টল ছিল দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্র। স্টলে স্টলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি স্টলেই বিক্রি-বাট্টাও হয়েছে প্রচুর।
প্রথমবারের মতো এবার বৈশাখী উৎসবে যোগ দেন মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, গাম্বিয়া, মালদোভা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাসহ ১২ দেশের রাস্ট্রদূত ও তাদের পরিবার। দিনব্যাপী এই আয়োজনে আমিরাতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাংস্কৃতিকমনা ও বিনোদন প্রিয় হাজার হাজার প্রবাসী উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসীরা ছাড়াও, অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং বিপুল পরিমাণ প্রবাসী বাংলাদেশী সপরিবারে এ বৈশাখী উৎসবে অংশ নেন। স্কুলের অডিটোরিয়াম ছাড়াও পুরো মাঠ জুড়ে প্রবাসীদের আনন্দ উল্লাস ছিল দেখার মতো। অনুষ্ঠানস্থল পরিণত হয় এক টুকরো বাংলাদেশে।
রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের সভাপতিত্বে এবং কাউন্সিলর লুৎফুন নাহার নাজিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দূতাবাস ও কনসুলেট-এর কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন প্রবাসী পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মী, কমিউনিটি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ইঞ্জিনিয়ার সালাউদ্দিন আহমেদ, আব্দুস সালাম তালুকদার, আবুল বাসার, জাকির হোসেন খতিব, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ সারওয়ার ভুট্টো, প্রকৌশলী মোহাম্মাদ আলী, প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সোহেল, নূর হোসেন সুমন প্রমুখ।
সকাল ১১ টা থেকে রাত ১১ টা তক টানা নানা আয়োজনে ঠাসা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় রাফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে। রাষ্ট্রদূত জনাব তারেক আহমদ নিজেই রাফেল ড্র পর্বটি পরিচালনা করেন। রাষ্ট্রদূত তারেক আহম্মেদ বর্ষবরণের আয়োজনকে সকলের সহযোগিতায় সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।