শিরোনাম
◈ ‘রাইজ ইন রেড’ কর্মসূচি নিয়ে আবারও রাস্তায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ◈ ‘করোনাভাইরাস চীনের ল্যাবে তৈরি’ বলছে হোয়াইট হাউসের নতুন ওয়েবসাইট  ◈ বাংলাদেশ থেকে চলতি বছর হজে যাবেন ৮৭ হাজার জন, নেওয়া হচ্ছে যেসব ব্যবস্থা ◈ একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসাতে গণ-অভ্যুত্থান হয়নি: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও) ◈ দেশের ৯ অঞ্চলে সন্ধ্যার মধ্যে ঝোড়ো বৃষ্টি হতে পারে ◈ ঢাকা বায়ুদূষণের শীর্ষে, যেসব পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের ◈ ইন্টারপোলে হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন ◈ রাখাইনের গেরিলা কমান্ডার থেকে আঞ্চলিক শক্তি: তোয়ান মারত নাইংয়ের উত্থানের গল্প ◈ ইউক্রেন শান্তিচুক্তি নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের: ‘অগ্রগতি না হলে সরে আসবে যুক্তরাষ্ট্র’ ◈ ১৪ ঘণ্টা পর ড্রেনে পড়ে যাওয়া নিখোঁজ শিশুর মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:০৯ রাত
আপডেট : ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

দূতাবাসে সেবা মিলছে না ঘুষ ছাড়া বরং উল্টো দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকী: পুনরুদ্ধার হয়নি ইরাকের শ্রমবাজার!

মনজুর এ আজিজ : প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক থেকে দেশে প্রচুর রেমিটেন্স পাঠালেও কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে হাত ছাড়া হতে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় এ শ্রমবাজারটি। বর্তমানে দেশটির শ্রমবাজার দখল করে নিচ্ছে- ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, আফ্রিকা ও মিয়ানমার। বাগদাদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে থাকায় শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে বিন্দুমাত্র উদ্যোগ নেয়নি।

তাছাড়া বাংলাদেশি কর্মীরা পাসপোর্ট নবায়ন, আউটপাস সংগ্রহ এবং নতুন পাসপোর্টের জন্য দূতাবাসে গেলে কেউ তাদের সহযোগিতা না করে বরং উল্টো দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকী দেন। কর্মকর্তাদের এরকম অসালিন ব্যবহার ও ঘুষ বাণিজ্যে দেশটিতে কর্মরত প্রায় ৩৫ হাজার রেমিটেন্স যোদ্ধা বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। 

অভিযোগে বলা হয়, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের আত্মীয় পরিচয়ে দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ কর্মরত কর্মচারী তানভীর, হিরণ ও সোহেলের চরম দুর্ব্যবহারে দূতাবাসে আগত প্রবাসী কর্মীরা অতিষ্ঠ। প্রবাসী কর্মীদের একটি আউট পাসের জন্য ৩ মাস অপেক্ষা করতে হয়। ইরাকস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর লেবার কনস্যুলার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত আমির আবদুল্লাহ মনজুরুল করিম ও প্রথম সচিব পাভেজ আলম চৌধুরী ইরাকের বন্ধকৃত শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে অদ্যাবধি কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে জানা গেছে। তারা আওয়ামী লীগকে পুর্নবাসনে সক্রিয়।

গত ৮ এপ্রিল একটি জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে দূতাবাসে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে দেশটির প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাদেরই কেবল আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাহিরের অন্য কাউকে দাওয়াত দিতে দেয়া হয়নি। এনিয়ে খোঁদ দূতাবাসের ভেতরেই চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাগদাদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ মনজুরুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, যারা দূতাবাসের বিরুদ্ধে নানামুখী অভিযোগ তুলছে তাদের স্বার্থহানী হওয়ায় এসব অভিযোগ। আগে প্রতিনিয়ত অপহরণ হতো বাংলাদেশিরা। দূতাবাসের উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে অপহরণ বন্ধ হয়েছে। 

ইরাকের শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইরাকে এক লাখের মতো অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী আছে। আগে এরা বৈধতা লাভ করুক তার পর নতুন কর্মী আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেন, ইরাক সরকার অবৈধ প্রবাসীদের বৈধতা দেয়ার জন্য কয়েক বার ছয় মাস সময় দিয়েছে। এরা বৈধতা লাভের জন্য আবেদনপত্র জমা দেয় না। মাত্র ২০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি বৈধতা লাভের আবেদন করেছে। তিনি বলেন, আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর না। কোনো আওয়ামী লীগকে পুর্নবাসনের চেষ্টা করছি না। যারা অভিযোগ করছে তারা নানা অপরাধে জড়িত ছিল। অপরাধীদের কালো তালিকা করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ইরাকস্থ বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার উপদেষ্টা আবু বাসার বলেন,  ইরাকের রেমিটেন্স যোদ্ধারা অবহেলিত, লাঞ্ছিত, বাংলাদেশ দূতাবাসের ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের দোসরদের কারণে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কর্মীরা। ইরাক থেকে স্বজন প্রীতির মাধ্যমে যারা দূতাবাসে কর্মতর অবস্থায় আছে তাদের আচার আচরণ অত্যাধিক ভয়াবহ। আমরা ইরাকের সকল প্রবাসীরা বাংলাদেশ দূতাবাসে যারা কর্মরত আছে তাদেরকে অতি দ্রুত ঢাকায় নিয়ে নতুন করে ইরাকে বাংলাদেশ দূতাবাসে দক্ষ যোগ্য সাহসী, একনিষ্ঠ কর্মঠ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার ১৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিক উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

ইরাকস্থ বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিনের সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন, প্রবাসী কর্মী টিটন, আব্দুল মতিন, সাব্বির খান, চাঁন মিয়া, উজ্জল হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস, দুলাল মিয়া, বিলাল মিয়া, মোহাম্মদ কাউসার, রবিউল, শফিকুল ইসলাম, রেজা আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ, মাসুদ মিয়া, সোহেল রানা, ইয়াসিন, তরিকুল ইসলাম, হায়দার আলী। সভায় প্রবাসী নেতৃবৃন্দ বলেন অতি দ্রুত বাগদাদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সংস্কার করা হোক এবং ফ্যাসিবাদী দোসরদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক। প্রবাসী নেতৃবৃন্দ বলেন, ঘুষ ছাড়া বাগদাদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে অধিকাংশ প্রবাসী কর্মীরা কোনো সেবা পাচ্ছে না। ঘুষ ছাড়া কোনো সেবাই মিলছে না। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে যে এসব দেখার কেউ নেই। নেতৃবৃন্দ সম্ভাবনাময় ইরাকের শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের অনতিবিলম্বে দূতাবাস থেকে প্রত্যাহার করে দেশপ্রেমিক যোগ্য দক্ষ কর্মকর্তাদের ইরাকস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়োগে গুরুত্বারোপ করেন। নেতৃবৃন্দ দেশটির আইন কানুন মেনে চলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। 

এদিকে গত ১৪ এপ্রিল ইরাকস্থ বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম মজিদ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে লিখিত অভিযোগে ইরাকের শ্রমবাজার সম্পর্কে বলেন, ২০১৯ সালে ইরাকস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ভুল তথ্য সম্বলিত একটি টিঠির কারণে ইরাকি সরকার বাংলাদেশিদের কালো তালিকাভুক্ত করে এবং বাংলাদেশি শ্রমবাজারটি বন্ধ ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের মন্ত্রিসভার রেজুলেশনে নং (২৪৮২৩) এর বিধান যার মধ্যে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবেশ রোধ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। 

উল্লেখ্য ইরাকে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। ইরাকস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক জটিলতাপূর্ণ ভিসা সত্যায়নের কারণে ইরাকি শ্রমিক নিয়োগকারী কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন। কোন এক সময় ইরাকে বাংলাদেশিদের শ্রমবাজারটির অবস্থান ছিল এক নম্বর অবস্থানে যা এখন দূতাবাসের অদক্ষ এবং অসৎ কর্মকর্তাদের কারণে এবং ভুল সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ। ইরাকের শ্রমবাজার ধীরে ধীরে ভারতীয়, পাকিস্তানী, নেপালী, আফ্রিকান এবং অন্যান্য দেশের দখলে চলে যাচ্ছে। বাগদাদস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর অদক্ষ, অযোগ্য এবং অসৎ কর্মকর্তাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিয়ে দেশটির শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণে প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনুসের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়