ইতালিতে ভিসা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের তিন কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে আটক করেছে রোমের ফাইন্যান্স পুলিশ।
আটকদের মধ্যে দুইজন বাংলাদেশিও রয়েছেন, যাদের মধ্যে রোমপ্রবাসী নজরুল ইসলাম এই চক্রটির মূলহোতা বলে দাবি স্থানীয় প্রশাসনের। খবর: বিডিনিউজ২৪
নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ইতালি আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া তিনি নিজেকে এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিতেন।
আটক ইতালি দূতাবাসের তিন কর্মকর্তাকে গৃহবন্দী এবং নজরুল ও আরেকজনকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দেশটির আদালতের নির্দেশে তাদের আটক করা হয় বলে এক্স-পোস্টে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিয়ো তায়ানি৷
এছাড়া দেশটির প্রায় সব সংবাদমাধ্যমও বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে।
দেশটির প্রথম সারির পত্রিকা ‘এল সোলে’ বলেছে, রোমের এল সিচিলিয়ানো ফিস’ নামের একটি রেস্তোরাঁর মালিক নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ইতালি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে ভিসা বাণিজ্য করে আসছিলেন।
চক্রটি প্রতিটি কাজের ভিসার জন্য বাংলাদেশি কর্মীদের কাছ থেকে ১৫ হাজার ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত। এছাড়া ভ্রমণ ভিসার জন্য ৭ হাজার ইউরো সমপরিমাণ টাকা নিত তারা।
রোমে ব্যবসা করা নজরুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যেতে। ছবি: সাইফুল ইসলাম।
রোমে ব্যবসা করা নজরুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যেতে। ছবি: সাইফুল ইসলাম।
চক্রটির সদস্য ঢাকার ইতালি দূতাবাসের ভিসা অফিসার রবের্তো আলবের্গো ওয়ার্ক পারমিট (নুল্লাওস্তা) যাচাই-বাছাই ছাড়া ভিসা ইস্যু করে দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর দূতাবাসের আরেক কর্মকর্তা নিকোলা মুসকাতেল্লো ইতালির বিভিন্ন শহরের, বিশেষ করে রোম ও নাপোলির ইমিগ্রেশন অফিস থেকে টাকার বিনিময়ে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহে সাহায্য করতেন।
দুর্নীতির অভিযোগে কিছুদিন আগে নিকোলা মুসকাতেল্লোকে তুরস্কে দূতাবাসে বদলি করা হয়েছিল।
এছাড়া দূতাবাসের আরেক কর্মকর্তা জুসেপ্পে সুয়িয়াকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে।
ইতালিতে জর্জিয়া মেলোনি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বিদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া কঠিন করা হয়।
গত বছর দেশটির ক্ষমতাসীন দল ‘ফ্রাতেল্লি দি ইতালিয়া’র নেতা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আন্দ্রেয়া দি জুসেপ্পেকে ভিসা প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার বিনিময়ে লোভনীয় প্রস্তাব দেয় চক্রটি।
তাকে ২০ লাখ ইউরো (প্রায় ২৫ কোটি টাকা), নতুন মডেলের রোলেক্স ঘড়ি, দামী স্মার্টফোন, ট্যাব ও দুবাইয়ে পরিবারসহ বিলাসবহুল বাসায় অবস্থানসহ ভ্রমণের খরচ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
কিন্তু আন্দ্রেয়া তাদের প্রস্তাব গ্রহণ না করে গত বছরের ৩০ মার্চ রোমের ফাইন্যান্স পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর এটি নিয়ে তদন্ত শুরু করে।
তদন্তে দেখা যায়, অর্থের বিনিময়ে রোম ও নাপোলির ইমিগ্রেশন অফিস থেকে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়াই ওয়ার্ক পারমিট, ভিসা দেওয়ার কাজ করছিলেন ঢাকার ইতালি দূতাবাসের ভিসা অফিসারসহ দুই কর্মকর্তা।
পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত আদালতে উত্থাপন করলে, আদালত দ্রুত তাদের আটকের নির্দেশ দেয়। পরে তাদেরকে মঙ্গলবার আটক করা হয়।
রোমে বসবাস করা বাংলাদেশি কয়েকজন বলেছেন, নজরুল ইসলাম কয়েক বছর ধরেই এখানে ব্যবসা করছেন। গত বছর তিনি একাই প্রায় ১৫০০ বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়ে ইতালিতে এনেছিলেন।
নজরুলের বিষয়ে জানতে চাইলে ইতালি আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীকে ফোন করলেও তারা রিসিভ করেননি।
আপনার মতামত লিখুন :