দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া এবং নতুন করে কাউকে দেশটিতে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পরই এক্সিকিউটিভ অর্ডার জারির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো এবং নতুন করে কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়ে ফেডারেল সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
ইতোমধ্যে ব্রাজিল, কলোম্বিয়া ও ভারতে উড়োজাহাজ ভরে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। মেক্সিকো সীমান্তে ‘জরুরি’ অবস্থা জারি করা হয়েছে, যাতে নতুন করে আসা অভিবাসীদের ঠেকানো সম্ভব হয়।
এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। প্রথম ধাক্কায় বাংলাদেশিরা হয়তো লক্ষ্যবস্তু নয় বা তাদের এ মুহূর্তে আটক করার তেমন উদ্যোগ নেই। তবে আগামী অন্তত চার বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সরকারের নীতি অব্যাহত রাখলে হয়তো বাংলাদেশিদের সে দেশে অবৈধভাবে অবস্থান করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী বাংলাদেশি একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ‘অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে ফেডারেল সরকারের নীতি অনুযায়ী। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট এখন ফেডারেল সরকারের নীতি মেনে চলছে।’
বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী সবচেয়ে বেশি আসে মেক্সিকো, কলোম্বিয়া, ভারত ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে। তাদের তুলনায় এখানে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশির সংখ্যা অনেক কম।’
তিনি বলেন, ‘যখন অভিযান চলে, তখন সংখ্যাগত কারণে ওইসব দেশের মানুষেরা বেশি ধরা পড়ে। এছাড়া আরও একটি কারণ হচ্ছে— প্রথম অবস্থায় যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের অভিযোগ আছে, এমন ব্যক্তিদের বেশি ধরা হচ্ছে। এখানে বাংলাদেশিদের অপরাধ করার প্রবণতা খুবই কম।’
অভিযান শুরুর পর কতজন বাংলাদেশি ধরা পড়েছেন, জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার রাতে (১২ ফেব্রুয়ারি) তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে মার্কিন সরকারের কেউ এখন পর্যন্ত কথা বলতে আসেনি। তবে, আমরা শুনেছি সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে দুজনকে ধরা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি কমিউনিটির কেউ কেউ অবৈধদের সাবধানে চলাফেরা এবং ছোটখাটো আইনি পরামর্শ দিচ্ছেন।’
কীভাবে তাদের ফেরত পাঠানো হবে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে এই কূটনীতিক বলেন, ‘‘এর জন্য স্ট্যান্ডার্ড নিয়ম আছে। প্রথমত, জাতীয়তা নিশ্চিতের পর আদালতের আদেশ সাপেক্ষে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। যদি তাদের পাসপোর্ট না থাকে, সেক্ষেত্রে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য দূতাবাস বা কনস্যুলেট ‘ট্রাভেল পারমিট’ ইস্যু করে।’’
বাইডেন আমলেও কিছু অবৈধ অভিবাসী ফেরত এসেছে। এছাড়া প্রতিবছরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিছু অবৈধ অবস্থানকারীকে ফেরত পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে অনেকে আবার আদালতের আদেশের কারণেও ফেরত আসে। আবার অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসে নিরুৎসাহ বোধ করার কারণে নিজে থেকেই চলে আসেন।
এ বিষয়ে আরেকটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আদালতের আদেশ বা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজে দেশে ফেরত যাওয়া—এই দুই ক্ষেত্রেই আমরা আগেও বিভিন্ন সময়ে ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছি। এটি একটি নিয়মিত ঘটনা।
তিনি বলেন, ‘এবার বেশি কথা হচ্ছে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন।’
আরেকটি কূটনৈতিক সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানকারী ভারতীয়দের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারতীয় মিশনগুলো সহায়তা করে থাকে। এর কারণ, উচ্চ বেতনের চাকরিগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে এইচ-১ ভিসায় যেন ভারতীয়দের কোনও সমস্যা না হয়।
তিনি বলেন, ‘একজন বৈধ ভারতীয় উচ্চ বেতন এবং মার্কিন সমাজে যে সম্মান পান, সেটিকে ভারত সরকার বেশি গুরুত্ব দেয়। এ কারণে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে তারা (ভারতীয় মিশন) সবসময় মার্কিন সরকারকে সহায়তা করে।’ উৎস: বাংলাট্রিবিউন।
আপনার মতামত লিখুন :