শিরোনাম
◈ বিজিবির কড়া প্রতিবাদে কুড়িগ্রাম সীমান্তে বসানো ক্যামেরা খুলে নিচ্ছে বিএসএফ ◈ বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটার সোহেলিকে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করলো আইসিসি ◈ এক থানার ১৩ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড, জানা গেল কারণ ◈ আবারও যুক্তরাষ্ট্রে দুই বিমানের সংঘর্ষ ◈ মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া নিলে সিএনজি চালককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ◈ হাসিনাসহ শীর্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩-৪টি মামলার রায় অক্টোবরে: আসিফ নজরুল (ভিডিও) ◈ বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা নির্বাচন আশা করছে ইউএনডিপি: স্টেফান লিলার ◈ বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত গ্রেফতার ৪৮ ◈ শাহবাগে আজও প্রাথমিকের নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা (ভিডিও) ◈ আধিপত্য থেকে বৈধতার সংকটে আওয়ামী লীগ!

প্রকাশিত : ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:৩৮ দুপুর
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দালালের খপ্পরে রাশিয়ায় মৃত্যুমুখে সোহান, পরিবারের উৎকণ্ঠা

মাহবুব সৈয়দ,পলাশ(নরসিংদী) প্রতিনিধি : চাকরির আশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মোঃ সোহান মিয়া ও তার বোনের জামাই একই ইউনিয়নের সরকারচর গ্রামের আকরাম মিয়া। ইচ্ছে ছিল ইউরোপে গিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল করবেন। সেজন্য ধারদেনা করে ৭ লাখ করে দুজনে ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে দেশ ছাড়েন তারা। কিন্তু বিধিবাম। দালালচক্র তাদের রাশিয়া নিয়ে গেলেও তাদের কথামতো চকলেট কারখানায় কাজ না দিয়ে তাদের রাশিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয়। ফলে সে দেশে গিয়ে সোহানকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার জন্য অস্ত্রের প্রশিক্ষণে নামতে হয়েছে। এদিকে বোন জামাই আকরাম মিয়া সুকৌশনে সেখান থেকে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে আত্বগোপনে থেকে বাড়ি ফিরে আসে।

মোঃ সোহান মিয়া পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মৃত সোহরাব মিয়ার ছেলে। সোহানের মা নুরুনাহার ও স্ত্রী হাবিবা আক্তার এবং তার ১৫ মাসের একমাএ ছেলে ফারহান রয়েছে। রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা সোহানের বোন জামাই সরকারচর গ্রামের কাজল মিয়ার ছেলে আকরাম মিয়া জানায়, ঢাকার বনানীর ড্রিম হোম ট্রাভেলস নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে জেরিন নামে এক দালালের মাধমে আমরা সাইপ্রাস যাওয়ার জন্য কাগজপএ জমা দেই। কিন্ত দীর্ঘদিন আমাদের পাঠাতে না পেরে আমাদের রাশিয়া একটি চকলেট কোম্পানীতে পাঠাবে বলে জানান।

পরে আমরা রাজি হলে আমাদের কাছ থেকে ৭লাখ টাকা করে ১৪ লাখ টাকা নেয় তারা। দালাল জেরিন বলে আমাদের সাথে তার ভাই তুহিনও যাবে। পরে আমাদের ২০২৪ সালের অক্টোবরের ১৭ তারিখে আমাদের সৌদীর ভিসা দিয়ে সৌদী পাঠায় এবং সেখানে আমাদের দুমাস রেখে ওমরা করিয়ে রাশিয়ার ভিসা করে। পরে ২০২৪ সালের ২২ডিসেম্বরে আমরা ১০ জনের একটি দল রাশিয়া রওণা করি। আকরাম জানায়, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সেখানে আমরা ৪দিন থাকি। কিন্ত সোহানসহ আরও দুই জনকে একদিন পরই সেখান থেকে নিয়ে যায় রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পে। 

নিয়েই শুরু হয় দালাল চক্রের অত্যাচার। যুদ্ধের প্রশিক্ষণে যেতে সামরিক পোশাক দেয় তাদের। প্রশিক্ষণ দিতে না চাইলে দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। করা হয় মারধর, দেওয়া হয় না খাবার। পরে সোহান আমাকে এগুলো জানায় এবং সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বলে। আমারও সোহানের দুদিন পরে যাওয়ার কথা ছিল। আমি পরে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে গোপনে
থেকে বাড়ির সাথে যোগাযোগ করে বাড়ি থেকে আবার দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে টিকেট কেটে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারীতে বাড়ি ফিরে আসি।

সোহানের মা নুরুনাহার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,দারদেনা করে মোট ৭ লাখ টাকা দিয়ে একমাএ ছেলেকে রাশিয়া পাঠানো হয়। দালালের প্রতারণার ফাঁদে পরে সৌদিতে দুইমাস রাখে। সেখান থেকে রাশিয়ায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধের ময়দানে নামতে হবে বলে ছেলে জানিয়েছে।

সংসারের একমাএ উপার্জণশীল ছেলে সোহান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, এখন আমার ছেলে কান্নাকাটি করছে। সে জানিয়েছে, যুদ্ধ করতে গিয়ে বাংলাদেশি একজন মারা গেছে ও একজন গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। আমার ছেলে এখন বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইছে। না হলে তার মৃত্যু হবে বলে জানিয়েছে। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানায় সরকারের কাছে সোহানের মা।

সোহানের স্ত্রী হাবিবা আক্তার বলেন, সাইপ্রাস যাওয়ার উদ্দেশে ড্রিম হোম ট্রাভেলসে টাকা জমা দিয়েছিলেন সোহান। কিন্তু বিভিন্ন ছলছাতুরি করে সৌদি পাঠিয়ে তাকে রাশিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে কাজ দেওয়ার কথা বলে এজেন্সিটি। কিন্তু তাকে এখন যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। যুদ্ধ না করলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার একমাএ ১৫ মাসের সন্তান ফারহানকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছি।

আমরা ড্রিম হোম ট্রাভেলসে যোগাযোগ করেছি তাকে ফিরিয়ে আনতে।এদিকে সোহানকে দেশে আনার জন্য পুনরায় আমাদের কাছ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা নিয়েছে,বলেছে জানুয়ারীর ২৬ তারিখে এনে দিবে কিন্ত এখনো পর্ষন্ত আনার কোন লক্ষন দেখি না। আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়েও যোগাযোগ করেছি তারাও বলেছে আনার ব্যাবস্থা করতেছে।আমার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।

পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসফিকা হোসেন জানান,আমাদের কাছে একটা লিখিত আবেদন করলে আমরা চেস্টা করবো যুদ্ধে যাকে ব্যবহার করছে তাকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়