শিরোনাম
◈ বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন শেখ হাসিনা: আনন্দবাজারের প্রতিবেদন ◈ ‘বঙ্গবন্ধু রেল সেতু’র নাম পরিবর্তন ◈ হাসান আরিফের মৃত্যুতে উপদেষ্টা পরিষদের শোক ◈ গত ১৫ বছর বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে তাঁবেদারি করেছে : প্রেস সচিব  ◈ উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ ভাতা বৃদ্ধির দাবীতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেছেন চিকিৎসকরা ◈ রাজধানীর যেসব সড়ক কাল বন্ধ থাকবে, বিকল্প পথে চলার পরামর্শ ◈ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন রোহিঙ্গাদের ফেরাতে যে কৌশলের কথা জানালেন ◈ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি নিয়ে যা বললেন চিফ প্রসিকিউটর (ভিডিও) ◈ রাখাইন রাজ্যের মিলিটারি সদরদপ্তর আরাকান আর্মির দখলে, সতর্ক উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত

প্রকাশিত : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:২৬ দুপুর
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

২০২২ সালে জাহিনের হাইড্রোকো প্লাস সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্রথম কাজ পায় ওয়াসা থেকে

‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডার স্টেজ’-এ বক্তব্য রাখছিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে বলতে গিয়ে এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত উপস্থিত ছাত্র নেতাদের মঞ্চে ডাকেন। প্রধান উপদেষ্টার ডাকে সাড়া দিয়ে তার বিশেষ সহকারী ও ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাহফুজ আলম ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথির সঙ্গে আরও একজন তরুণ মঞ্চে ওঠেন।

ড. ইউনূস সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনসহ উপস্থিত ব্যক্তিদের সামনে তাদের পরিচয় করিয়ে দেন, তুলে ধরেন তাদের অবদান। কিন্তু মঞ্চে ওঠা তৃতীয় ব্যক্তি ছিলেন অনুপ্রবেশকারী। যাকে চেনেন না উপস্থিত অনেকেই। এ অনুপ্রবেশকারীর নাম জাহিন রাজিন। যিনি হাইড্রোকো প্লাস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। পতিত শেখ হাসিনা সরকারের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন। তার বাবা আবু সাখাওয়াত রবীন-টেক্স গ্রুপের এমডি। যিনি আওয়ামী লীগের ডোনার হিসেবে পরিচিত। পুরো পরিবারের সখ্যতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ ছবি রয়েছে তার পরিবারের।

কিন্তু কীভাবে জাহিনের মতো ‘ফ্যাসিস্ট রিজিমে’ সুবিধাভোগী ব্যক্তি এমন একটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে মঞ্চে ওঠেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এ নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও ছাত্র আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত মাহফুজ আলম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাহিনকে অনুপ্রবেশকারী উল্লেখ করেন। জানা গেছে, জাহিন রোহান স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি করেছেন। দুবাইতে থাকেন। হাইড্রোকো প্লাস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী। ব্যবসা রয়েছে দেশ-বিদেশে। অস্ট্রিয়াতেও তার ব্যবসা রয়েছে।

তার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে ইসরাইল ও অস্ট্রেলিয়ারও। অবৈধভাবে এসব দেশ থেকে পণ্য আনেন দেশে। তিনি ইউনূস অ্যান্ড ইয়ুথের ২০২১ সালের একজন ফেলো। এ ছাড়াও সিজিআই ফেলোও তিনি। তার বোন রিজভানা হৃদিতাও ইউনূস অ্যান্ড ইয়ুথের ফেলো। তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে দুই ভাই-বোন এশিয়া থেকে ফোবর্স-৩০-এ স্থান পেয়েছেন। ২০২০ সালে জাতিসংঘের ইয়াং লিডার ও পরে ইউথ এনভয় মনোনীত হন। দেশ-বিদেশে নানা পুরস্কার অর্জন করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও তার রয়েছে সখ্যতা। বৈশ্বিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও তালিকাভুক্ত ডেলিগেট। যিনি বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আওয়ামী লীগ আমলে।

তার বাবা আবু সাখাওয়াত রবীন-টেক্স গ্রুপের এমডি। তিনি গুলশান ক্লাবের সাবেক সভাপতিও। আবু সাখাওয়াতের সঙ্গে গভীর সখ্যতা রয়েছে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের। দুইজনের অনেকগুলো যৌথ ব্যবসাও রয়েছে। যমুনা ব্যাংকেও দুইজনের শেয়ার রয়েছে। সেই সুবাধে মন্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে জাহিনের। অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন একের পর এক সরকারি প্রকল্প। কোটি কোটি টাকার প্রকল্প অবৈধভাবে নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে তালিকাভুক্ত করলেও ফলপ্রসূ কাজ হয়নি এসব প্রকল্পে।

ওয়াসার সাবেক এমডি তাকসিম এ খানের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা জাহিনের। হাইড্রোকো প্লাস এলএলসি নামে বিদেশে বিভিন্ন ইভেন্টেও অংশ নিয়েছেন তাকসিম। যার বেশকিছু স্থির চিত্র পাওয়া গেছে। মূলত তাকসিমের মাধ্যমে অবৈধ টাকা পাচারের জন্য হাইড্রোকো প্লাস এলএলসি’র নাম ব্যবহার করতেন জাহিন। এর মাধ্যমে লাভবান হয়েছেন তাকসিমও। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন দুইজনে। ২০২২ সালে জাহিনের হাইড্রোকো প্লাস সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্রথম কাজ পায় ওয়াসা থেকে। সে সময় নিয়মবহির্ভূতভাবে তাকে এ সুবিধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। মন্ত্রীর প্রত্যক্ষ ইশারায় এ কাজ পান জাহিন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

নানা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় এটিকে কাজে লাগিয়েছেন জাহিন। তার মা নুসরাত জাহান মুনমুনেরও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি রয়েছে। গত সরকারের আমলে এমন কোনো সুবিধা নেই যা তিনি গ্রহণ করেননি। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্যতার প্রভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাসের ওয়েবসাইটে ক্লায়েন্টের তালিকায় রয়েছে- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, চট্টগ্রাম ওয়াসা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

জাহিন রোহান সম্পর্কে মাহফুজ আলম ফেসবুকে লেখেন, ওই ব্যক্তি অনুপ্রবেশকারী এবং অসৎ। তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় ক্লিনটন ইনিশিয়েটিভের আয়োজনে যোগ দিয়েছেন। আমরা তার উপস্থিতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতাম না। তিনি ডেলিগেশন দলের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। স্যার যখন আমাদের মঞ্চে ডাকলেন, তিনি তড়িঘড়ি করে দাঁড়িয়ে আমাদের আগে মঞ্চের দিকে ছুটে গেলেন। আমার সন্দেহ হলেও তার মঞ্চে যাওয়া আমি আটকাতে পারিনি। উপস্থিত বিশ্বনেতা ও গণ্যমান্যদের জন্য অসহায় বোধ করছিলাম।

মাহফুজ মনে করেন, এটা ছিল ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর একটি পূর্বপরিকল্পিত কাজ। ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকার বার্তা দিয়ে আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ, সমন্বয়কারী ও যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন মাহফুজ। এ বিষয়ে জাহিন রোহান একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ওই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ আমি পেয়েছিলাম সিজিআই ফেলো হিসেবে। যখন ড. ইউনূস ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে ডাকলেন তখন আমি দর্শক সারি থেকে করতালি দিচ্ছিলাম। আমার পাশে বসেছিলেন দুই বিদেশি ভদ্রলোক। তারা আমাকে বললেন যে, তুমি তো বাংলাদেশি তরুণ, তুমিও যাও।

তাই আমিও কিছু না ভেবেই স্টেজে উঠে গেছি মাহফুজ ভাইদের পেছন পেছন। আমি ২০২১ সালের ইউনূস অ্যান্ড ইয়ুথ ফেলো। আমার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাসের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি প্রফেসর ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। নিউ ইয়র্কে সিজিআইয়ের অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস আসবেন শুনে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম যে তার কাছাকাছি যাওয়ার একটা সুযোগ হবে। 

অন্যদিকে জাহিনের সাবেক ব্যবসায়িক পাটর্নার মো. সানাউল বলেন, বিশ্ব মঞ্চে ড. ইউনূস যে তিনজনকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এর একজন জাহিন রোহান রাজিন। সে একসময় আমার বন্ধু ও সহকর্মী ছিল। সে বিদেশে বড় হয়েছে ও বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে থাকে। সে এই আন্দোলনের নেতা ও সমন্বয়ক তো দূরের কথা, সে আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল। সে একজন ভণ্ড ও প্রতারক। সে চিহ্নিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট পরিবারের সন্তান। তার বাবা রবিন-টেক্স গ্রুপের মালিক ও গুলশান ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট। সে আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০২০ সালে জাতিসংঘের ইয়াং লিডার ও পরে ইউথ এনভয় হয়। বহির্বিশ্বে সে আওয়ামী লীগের দালালি করে। ড. ইউনূসের পাশে মঞ্চে দাঁড়ানো একটা ষড়যন্ত্রের অংশ। সূত্র : মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়